পড়ালেখার জন্য চ্যাটজিপিটি ভালো, না মন্দ?
যেকোনো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলেই একটা হই হই রব ওঠে। উদাহরণ হিসেবে টেলিভিশন, মুঠোফোন কিংবা ফেসবুকের কথা বলা যায়। একদল বলে, ‘গেল গেল, সব রসাতলে গেল।’ আরেক দল বলে, নতুনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই তো আধুনিক মানুষের বৈশিষ্ট্য। চ্যাটজিপিটির বেলায়ও তা–ই হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই চ্যাটবট আমাদের শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে চাকরি, বিনোদন কিংবা অভ্যাসকেও অনেকাংশে বদলে দেবে। শিক্ষাক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা কী হতে পারে? চলুন জানা যাক।
ইতিবাচক
নতুন ভাষা, লেখালেখি কিংবা কোডিং শেখার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি বেশ সহায়ক হবে। ই–মেইল, প্রবন্ধ, গল্প, সারাংশ, থিসিস পেপার, গবেষণাপত্র, সাইটেশন, বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনা, এমনকি ব্লগ লেখারও ক্ষমতা রয়েছে এই চ্যাটবটের। অতএব চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে একাডেমিক লেখালেখির দক্ষতা ঝালাই করে নেওয়া যেতে পারে।
অনেক সময় প্রোগ্রামিং বা গণিতের অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজতে শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়েন। এ ক্ষেত্রেও চ্যাটজিপিটি সহায়ক হতে পারে। পাইথন, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি++, পিএইচপি, সুইফটসহ অন্যান্য প্রচলিত ভাষায় কোডিং করতে পারে চ্যাটজিপিটি। এমনকি এটি গণিতের ক্যালকুলাস, সম্ভাব্যতার (প্রোবাবিলিটি) মতো কঠিন সমস্যাগুলোও দ্রুত সমাধান করে দিতে পারে।
গবেষণার কাজটিও অনেক ক্ষেত্রে সহজ করে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি। অনেক উপাত্ত বা রিসোর্স সহজে এর মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণার বিষয় নির্বাচন, সংশ্লিষ্ট তথ্য বিশ্লেষণ, গবেষণাটি গুছিয়ে দেওয়া, সাইটেশন সহায়তা—সবই পাওয়া যাবে।
চ্যাটজিপিটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষকদেরও সহায়ক হবে। যেমন পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা, প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র যাচাই—চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে সবই করা সম্ভব।
ধরা যাক, একজন শিক্ষার্থী গাণিতিক কোনো বিষয়ে নিজের দক্ষতা যাচাই করতে চান। চ্যাটজিপিটিকে ঠিকঠাকভাবে নির্দেশনা দিলে কিন্তু সে-ই আপনার জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করে দেবে। গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এ রকম যেকোনো বিষয়ে চ্যাটজিপিটিই শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষক হতে পারে।
নেতিবাচক
চ্যাটজিপিটির প্রধান নেতিবাচক প্রভাবগুলোর একটি হলো সৃজনশীলতা ও স্বনির্ভরতা নষ্ট করা। এই চ্যাটবট নিয়মিত ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা এর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারেন, যা তাঁদের সৃজনশীলতার বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যান্য অনেক প্রযুক্তির মতো চ্যাটজিপিটিও শতভাগ নির্ভুল নয়। এটি সব সময় সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে না। ভুল বা পক্ষপাতমূলক উপাত্ত দিয়ে চ্যাটজিপিটি আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ফলে ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি হবে কিংবা আপনার শেখায় ঘাটতি থেকে যাবে।
শিক্ষার অন্যতম বড় উদ্দেশ্য হলো সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন। চ্যাটজিপিটির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের দক্ষতা হ্রাস পাবে। মাথা খাটিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজা একটি চর্চার বিষয়। এই চর্চা না করলে নিত্যনতুন সমস্যায় শিক্ষার্থীরা ঘাবড়ে যাবেন।
চ্যাটজিপিটির আরেকটি বড় সমস্যা হলো এর ফলে শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে অসততা বা কুম্ভিলকবৃত্তির (প্লেজারিজম) প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। শিক্ষাজীবন থেকেই যদি ছাত্রছাত্রীরা অসততার চর্চা করেন, তাহলে এটি ভবিষ্যতে তাঁর জন্য, সর্বোপরি দেশের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনবে।
আরেকটি নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা হলো চ্যাটজিপিটির প্রভাবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা যদি এই চ্যাটবটের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, তবে তাঁদের সামাজিক দক্ষতা, দল বেঁধে কাজ করা, সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা হ্রাস পাবে, যা তাঁদের অন্তর্মুখী করে তুলবে।
আসলে দিন শেষে আমরা প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করছি, ভালো কাজে না মন্দ, সেটিই মুখ্য। তাই ভালো-মন্দ দুটো দিকই জানা থাকা দরকার।
সূত্র: রিসার্চ ডট এআইমাল্টিপল ডটকম