শিশু চঞ্চল? দুর্ঘটনা এড়াতে এসব মেনে চলুন
হামাগুড়ি দিতে শেখার পর থেকেই শিশুদের সবকিছুতে আগ্রহ বাড়তে থাকে। হয়তো হঠাৎ জানালার বাইরে ছোট্ট পাখি দেখল, অমনি হামাগুড়ি দিয়ে জানালার দিকে ছুট। হয়তো দেখল ঘরের এক কোণে রাখা একটি পাত্র, হাঁচড়েপাঁচড়ে সেখানে পৌঁছেই ডুবিয়ে দিল মাথা। কিংবা হঠাৎ মাল্টিপ্লাগের ছিদ্রে পুরে দিল আঙুল। ঘরের জুতা-স্যান্ডেল কামড়ানো দেখলে মনে হবে, ওটাই বুঝি দুনিয়ার সবচেয়ে সুস্বাদু বস্তু। আর ছোটখাটো জিনিস মুখে পুরে দেওয়াটা তো নৈমিত্তিক রুটিন। শিশুর ছটফটানির বয়সটা তাই অভিভাবকের জন্য বড্ড মুশকিলের। অসাবধানে কোথাও কিছু ফেলে রাখার জো নেই। কী থেকে কী ঘটে যাবে, কে বলতে পারে!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট তাসনুভা খান জানান, তিন মাস বয়সেই শিশু নিজের হাত মুখে দিতে শুরু করে। শিশুর নখও বাড়ে দ্রুত। আর নখে সহজেই জমে ময়লা। তাই একটু বেড়ে গেলেই নখ কেটে দিতে হবে। ৫-৬ মাস বয়স হলে খেলনা বা হাতের কাছের অন্যান্য জিনিসও মুখে দেয় শিশু। শিশুর হাতের কাছে যা কিছু থাকবে, সেগুলোও পরিষ্কার রাখা তাই জরুরি। ৮-১০ মাসে হামাগুড়ি দিতে শেখে শিশু। এই সময় থেকে শিশুর নিরাপত্তায় প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। এই সতর্কতা শিশু স্কুলে যাওয়ার বয়স পর্যন্ত অবশ্যই জরুরি।
নিরাপদ সীমানা
শিশু ঘুমিয়ে থাকলে বালিশ দিয়ে ঘিরে রাখুন। তাহলে হঠাৎ ঘুম ভেঙে হামাগুড়ি দিতে গেলেও পড়ে যাবে না। জেগে থাকলে মেঝেতেই ‘ছুটতে’ দিন নিজের মতো। ঠান্ডা মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে দিন। মেঝে যেন পিচ্ছিল না থাকে। কাচ বা সিরামিকের জিনিস ভেঙে গেলে টুকরাগুলো সরিয়ে ফেলুন দ্রুত। আসবাবের কোনায় আঘাত লাগার ভয় থাকলে সেখানে ফোমজাতীয় কিছু আটকে দিতে পারেন।
মুখে দেবে সব?
পয়সা, মার্বেল, জামার বোতাম, পুঁতি, ছোট পাথর, খেলনার ছোট ব্লক, বোতলের ছিপি, ছোট স্ক্রু, ক্লিপ, এমনকি আলপিনজাতীয় জিনিসও মুখে দেয় শিশু। এগুলো শ্বাসনালিতে আটকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। খেলনার ছোটখাটো অংশ কিংবা রবারের পরত খুলে গিয়েও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। খেলনা বাছাইয়ের সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার প্রতি জোর দিলেন তাসনুভা খান। শক্ত খাবার, ফলের বীজ, মটরদানার মতো দানা, এমনকি কাপড়ের টুকরা বা টিস্যু পেপার মুখে গেলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানালেন তিনি। ওষুধ, মস্কিউটো রিপেল্যান্ট, জীবাণুনাশক দ্রবণ, কেরোসিন ও অন্যান্য দাহ্য বস্তু সাবধানে রাখতে হবে। পানীয়ের বোতলে কেরোসিন, তরল ডিটারজেন্ট, জীবাণুনাশক দ্রবণও শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। পোকামাকড় দেখলে দ্রুত সরিয়ে ফেলুন। শিশুরা সেটিকেও মুখে পুরতে পারে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর মোছার পানিতে সামান্য জীবাণুনাশক দ্রবণ মেশানো উচিত রোজ। তবে সরাসরি জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে ঘর মুছবেন না।
কার্পেট থাকলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের সাহায্য নিন।
শিশুকে খেলনা দেওয়ার আগে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। খেলা শেষে আবার পরিষ্কার, বদ্ধ বাক্সে তুলে রাখুন। শিশু অসুস্থ হলে তার খেলনা অন্য শিশুকে দেবেন না।
বাইরের জুতা বাইরেই রাখুন।
বাইরে থেকে ফিরেই হাত-পা ধোয়ার অভ্যাস করুন।
ধারালো জিনিস
বঁটি, চাকু, কাঁচি, কাঁটাচামচ কিংবা অন্য কোনো ধারালো বা চোখা জিনিস রাখুন সাবধানে। তরকারি কাটার সময় হঠাৎ ফোন এসেছে বা কলবেল বাজছে? ‘বটিটা এভাবেই থাক, যাব আর আসব।’ এমনটা ভুলেও ভাববেন না। নিমেষেই ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
টেবিল ফ্যান চালানো হলে খেয়াল রাখুন, শিশু যাতে ফাঁকা অংশে হাত না ঢোকায়।
রাসায়নিক সামগ্রী
কীটনাশকের বদলে পোকামাকড় দূর করার প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করুন।
শিশুর জন্য লিপস্টিক, নেইলপলিশের মতো রাসায়নিকও ক্ষতিকর।
বারান্দার টবে রাসায়নিক প্রয়োগ না করাই ভালো। শিশু সেখানে হাত দিলে পেটে চলে যেতে পারে।
মশা মারতে...
মশা মারার স্প্রে প্রয়োগের সময় শিশুকে অন্য ঘরে রাখুন। স্প্রে করার ঘণ্টাখানেক পর শিশুকে সেখানে যেতে দিন। শিশুর ত্বকে মস্কিউটো রিপেল্যান্ট দেবেন না, চাইলে রিপেল্যান্ট হিসেবে কাপড়ে লাগানোর উপযোগী উপাদান বেছে নিতে পারেন। তবে কেনার সময়ই দেখে নিন, এগুলো শিশুবান্ধব কি না। মশা তাড়ানোর কয়েল থেকে দুর্ঘটনার ভয় থাকে। কয়েলের গুঁড়াও বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি।
নিরাপত্তার আরও দিক
গরম পাত্র থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। সাবধানে গরম পানি বহন করুন।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রাখতে হবে খুব সাবধানে, শিশুর নাগালের বাইরে। নাগালের মধ্যে সকেট থাকলে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারেন।
পাত্রে পানি ধরে রাখার প্রয়োজন হলে পাত্রের মুখ আটকে রাখুন খুব ভালোভাবে, যাতে অসাবধানতাবশত শিশুর মাথা-মুখ নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকি না থাকে। বাড়ির কাছে জলাশয় থাকলে কিংবা বৃষ্টি-বন্যার পানি উঠলে এই বয়সী শিশুদের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখুন।