বাংলাদেশের ১১ শিক্ষার্থী জিতেছে ১০ পদক
আন্তর্জাতিক ভূবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের (আইইএসও) মূলত তিনটি অংশ। একটি তাত্ত্বিক পরীক্ষা; অন্য দুটি ব্যবহারিক—দলীয় মাঠ অনুসন্ধান ও আর্থ সিস্টেম প্রজেক্ট (ইএসপি)। এ বছর বাংলাদেশ দল তিনটিতেই পেয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। তাত্ত্বিক পরীক্ষায় চারটি ব্রোঞ্জ ও পাঁচটি সম্মাননা, মাঠ অনুসন্ধানে একটি স্বর্ণ, একটি ব্রোঞ্জ এবং আর্থ সিস্টেম প্রজেক্টে দুটি স্বর্ণ ও দুটি ব্রোঞ্জ। এ ছাড়া প্রতিযোগীদের নিয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ছয়টি সম্মাননা পেয়েছে ‘টিম বাংলাদেশ’।
গত ২০-২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ভূবিজ্ঞানবিষয়ক এই অলিম্পিয়াড। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, অনূর্ধ্ব–১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারে। ভূতত্ত্ব, ভূপদার্থবিদ্যা, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, স্থলজ জ্যোতির্বিদ্যা, পরিবেশবিজ্ঞান—এমন নানা বিষয় প্রাধান্য পায় অলিম্পিয়াডে। ২০০০ সাল থেকে এর আয়োজন করে আসছে ইন্টারন্যাশনাল জিওসায়েন্স এডুকেশন অর্গানাইজেশন (আইজিইও)।
মূল প্রতিযোগিতাটি অনলাইনে হলেও বেশির ভাগ দেশই প্রতিযোগীদের জন্য একটি আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো কার্যক্রমে তারা অংশ নিতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১১ শিক্ষার্থী এবার ভূবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়। মূল দলে ছিল ঢাকার নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম, সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোহতাসিম হাফিজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আহসানুর রাজী, চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের তাসনিম রেজা, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফারহানা রিফাত, খুলনার সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের অনুরাগ দাশ, দিনাজপুর জিলা স্কুলের শেখ তায়াসসুক আহমেদ এবং মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাইমুন শহীদ। এ ছাড়া অতিথি সদস্য (গেস্ট মেম্বার) হিসেবে আনন্দমোহন কলেজের মো. ফাইজুল কবীর, হলিক্রস কলেজের তারান্নুম আহমেদ চৌধুরী ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের তাসনুভা হেলাল ছিল বাংলাদেশ দলে।
এ বছর বাংলাদেশ দলের বড় অর্জন হলো প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পুরস্কার পেয়েছে। আরিয়ান আন্দালিব ছয় বছর ধরে আছেন ভূবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সঙ্গে। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের পরামর্শক তিনি। বলছিলেন, ‘মাঠ অনুসন্ধান বিভাগে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতলাম আমরা। গত বছর আটজনের দল নিয়ে আটটি পদক ও একটি সম্মাননা পেয়েছিলাম। এবার সেখানে ১০টি পদক ও ১১টি সম্মাননা।’
তাত্ত্বিক পরীক্ষা পর্বে অংশ নিয়েছিল দুই শতাধিক প্রতিযোগী। আশরাফুল, মোহতাসিম, আহসানুর ও তাসনিম সেখানে ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। অন্যদিকে দলীয় মাঠ অনুসন্ধানে ২৯টি দেশের মোট ৩৫টি দল অংশ নেয়। এই পর্বে বাংলাদেশের দুটি দল কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ও খাগড়াছড়ির পার্বত্য এলাকায় মাঠকর্মে অংশ নিয়েছিল। কুয়াকাটার দলটি স্বর্ণপদক এবং খাগড়াছড়ির দলটি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে।
আর্থ সিস্টেম প্রজেক্টটি মূলত বহুজাতিক দলগুলো নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দলে একই মহাদেশের পাঁচ থেকে ছয়টি দেশের প্রতিযোগীরা অংশ নেয়। টিম বাংলাদেশের সদস্যরা নয়টি আলাদা আলাদা দলে অংশ নিয়ে দুটি করে স্বর্ণ ও ব্রোঞ্জপদক জিতে নিয়েছে।
জানতে চেয়েছিলাম প্রতিযোগীদের অনুভূতি। আশরাফুল ইসলাম আক্ষেপের সুরে বলল, ‘ব্রোঞ্জের প্রথম পাতায় নাম দেখে মনে হলো, আর অল্প কিছু নম্বর তুলতে পারলে অথবা মাইনাস মার্কিং কমাতে পারলেই সিলভার পেতে পারতাম!’
আন্তর্জাতিক আসরে সাফল্যের পর বেশ উজ্জীবিত এই শিক্ষার্থীরা। সামনের দিনগুলোয় পৃথিবীবিষয়ক বিজ্ঞানের সঙ্গেই থাকতে চায় তারা। তায়াসসুক আহমেদ বলছিল, ‘অনেকের ভুল ধারণা আছে—ভূবিজ্ঞান খুব বোরিং, এখানে সবকিছু মুখস্থ করতে হয়। এ ধারণা বদলে দিতে চাই।’ তাসনিম রেজাও স্বপ্ন দেখাতে চায় অন্যদের। বলছিল, ‘বাংলাদেশে ভূবিজ্ঞান ও পরিবেশবিষয়ক লেখাপড়ার সুযোগ খুবই কম; বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে। এ বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আমি আমার স্কুলে আর্থ সায়েন্স ক্লাব খুলতে চাই।’