টাকা জমানোর বুদ্ধি শিখুন
নিত্যপণ্যের বাজার চড়া হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। তবে সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে। তাই যেটুকু সম্ভব সঞ্চয় করতে পারলেই ভালো। সঞ্চয় আমাদের যেমন বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করে, তেমনি আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও জোরদার করে।
পয়সা জমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা বর্তমান চাহিদা। সব সময় মনে হতে থাকে, এই সমস্যাটা কাটুক, এরপর থেকে টাকা জমাব। সঞ্চয় করতে চাইলে সেই ভাবনা দূরে সরিয়ে সমস্যার মধ্যেই শুরু করুন। একবারে বড় অঙ্ক নয়, অল্প করেই জমানোর অভ্যাস করুন।
যেসব উপায়ে সঞ্চয় শুরু করতে পারি—
ঋণ শোধ করুন: ঋণ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। ঋণ থাকলে যা আয় হচ্ছে, তার একটা অংশ শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। সেই কারণে ঋণ থাকলে প্রথমেই সেটা শোধ করে, এরপর সঞ্চয় করা উচিত।
হিসাব রাখতে হবে প্রতিদিন: আমরা যখন আমাদের প্রতিদিনের খরচের হিসাব জানব এবং নির্দিষ্ট স্থানে সেটা লিখে রাখব, তখন সঞ্চয় করা সহজ হবে। হিসাব থাকলে টাকার ওপর আমাদের ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণও থাকে। তাই হিসাব রাখতে হবে প্রতিদিন।
চাহিদা ও প্রয়োজনের পার্থক্য বুঝুন: ঝোঁকের মাথায় হঠাৎ যে খরচগুলো করি, সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে সেটাই বড় বাধা। সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে, কোন জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আর কোন চাহিদাটা পরেও পূরণ করা যাবে। কোনো কিছু ভালো লাগলে হুট করে সেটা কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। যেমন কখনো হয়তো মনে হলো বড় আকারের একটা টিভি কিনলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তখনই আপনার নিজেকে এই প্রশ্ন করতে হবে, ‘আমার আয় কত?’ এই শখ আপনার সঞ্চয় থেকে কী পরিমাণ টাকা কমাবে, সেটা মনে করিয়ে দেবে। বড় টিভি এখন আপনার আদৌ কেনা জরুরি কি না, সেই ভাবনা এনে দেবে। যখন আপনার হাতে যথেষ্ট টাকা থাকবে, সঞ্চয় থেকে খুব বেশি ভাঙতে হবে না, তখন টিভিটা কেনার কথা ভাবতে পারেন।
কার্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ব্যবহার করুন: আজকাল কম বেশি সবার কাছে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থাকে। খরচ করার সময় যতটা সম্ভব কার্ড এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এতে খরচের মানসিকতা বাড়ে। ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় মাস শেষে বিল দিতে দেরি হলে নানা ঝামেলা হয়। কিন্তু ক্যাশ টাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে এসব ঝামেলা নেই, আর খরচ করার সময়েও মানিব্যাগের ঠিকঠাক হিসাব থাকে। ক্যাশ না থাকলে তখন ডেবিট কার্ড ব্যাবহার করা যেতে পারে।
আগে সঞ্চয়, পরে খরচ: উপার্জন যাই হোক না কেন মাসের শুরুতেই সেটাকে ৫০, ৩০, ২০ এই অনুপাতে ভাগ করে ফেলুন। ৫০ ভাগ টাকা অতি প্রয়োজনীয় খরচের (বাড়িভাড়া, বিল, খাবার ইত্যাদি) জন্য বরাদ্দ রাখুন, বাকি ৩০ ভাগ রাখুন বিনোদন বা অন্য কোনো খরচের জন্য, আর ২০ ভাগ রাখুন সঞ্চয়ের জন্য। এই অনুপাত মন মতো না হলে নিজের মতো বণ্টন করে নিন। তবে মাসের শুরুতেই কিছু টাকা সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
বুঝে বিনিয়োগ করুন: সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগ করতে পারলেও ভালো। তাতে কিছু বাড়তি টাকা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা, অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার মতো বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে বিনিয়োগে উৎসাহী করা অনেক প্রতিষ্ঠান আজকাল আছে। কখনোই সেসব জায়গায় বিনিয়োগ করা উচিত নয়। শুরুতে অল্প টাকা বিনিয়োগ করা উচিত। আর থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যেমন হতে পারে, সেটা ছোট কোনো ব্যবসা, স্টক মার্কেট বা বন্ড। তবে অল্প পরিমাণে করা উচিত, যাতে লোকসান হলেও বড় কোনো বিপদে না পড়তে হয়।
বাজার খরচ কমান: প্রতি মাসে সংসারে যা কেনাকাটা প্রয়োজন, কাঁচাবাজার বাদে অন্য সবকিছু, একসঙ্গে কিনে ফেলার চেষ্টা করুন। বারবার কিনতে গেলে খরচ বেশি হয়। তা ছাড়া কোথাও ছাড় থাকলে সেখান থেকে জিনিসপত্র কেনার চেষ্টা করতে পারেন। তবে ছাড়ে কিনতে গিয়ে আবার দরকারের চেয়ে বেশি কেনা যাবে না। এভাবে মাসিক বাজার থেকে কিছু টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
উপহার বুঝে দিন: বিভিন্ন উৎসবে–পার্বণে, অনুষ্ঠানে কাছের মানুষদের আমরা উপহার দিয়ে থাকি। সেই উপহার দেওয়ার আগে অবশ্যই বাজেট করা উচিত। নিজের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট করাই ভালো। সামর্থ্যের চেয়ে দামি উপহার দিয়ে নিজের পকেটে টান ফেলার কোনো মানেই হয় না। একবারে সবাইকে দিতে না পারলে ভাগ ভাগ করে দিন। প্রয়োজনে ছোট উপহার দিন।
লোকের কথায় কান নয়: অনেক সময় হিসেব করে চলার কারণে টিপ্পনি শুনতে হয় ‘হিসেবি’ বা ‘কিপ্টে’ হিসেবে। কিন্তু সঞ্চয় করা আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কোনো লজ্জার বিষয় না। কারণ, বেহিসেবি খরচ করে তাৎক্ষণিক বাহবা পেলেও অসময়ে কাউকে পাশে পাবেন না। তাই লোকের কথায় কান না দিয়ে সঞ্চয়ী হতে চেষ্টা করুন।
ঘরে তৈরি খাবার খান: আমরা অনেক সময়ই বাইরে খেতে ভালোবাসি। কর্মক্ষেত্রেও বাইরে থেকে খাবার কিনে খাই, কিন্তু এটা আসলে খরচ বাড়ায়। বদলে বাসার খাবারে অর্থ সাশ্রয় হবে, আবার স্বাস্থ্যকরও হবে। ঘরে তৈরি করলে খাবারের খরচও কমে আসবে। অফিসে খাবারের ব্যবস্থা থাকলে সেটাই খাওয়ার চেষ্টা করুন।
তথ্যসূত্র: মরগ্যান হাউজেলের দ্য সাইকোলজি অব মানি, গুড হাউসকিপিং ও ব্যাংক অব আমেরিকা