কেবল আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা যাবে না
দেশের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সেই ইতিহাস আজকের শিক্ষার্থীদের কীভাবে অনুপ্রাণিত করে? লিখেছেন শিক্ষার্থীরা। এখানে পড়ুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশলের শিক্ষার্থী আকরামুল আহমেদের লেখা।
একাত্তরের সেই কঠিন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীরা যে সাহসিকতা ও দেশপ্রেম দেখিয়েছেন, তা আজও অনন্য দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী শহীদ হন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কোনায় ছিল উৎসবের ছোঁয়া, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিল শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে এক অনন্য গর্ব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কেবল ইতিহাস বইতে আটকে নেই, সেটি উপলব্ধি করা গিয়েছিল ক্যাম্পাসের নানা আয়োজনে।
সেমিনারগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যে গভীর আলোচনা হয়, তাতে কেবল পুরোনো দিনের ঘটনাপ্রবাহ নয়, বরং বর্তমান প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কীভাবে ধারণ করা যায়, সে প্রসঙ্গও উঠে আসে। আলোচনা পর্বগুলোয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই নিজের ভাবনা ও অনুভূতি প্রকাশ করেন, যা প্রমাণ করে, মুক্তচিন্তার চর্চা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটা গভীর।
বিশেষ করে ক্লাব ও সংগঠনগুলোর ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ইতিহাসচর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধরে রাখতে তারা যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে মনে হয়েছে, এ প্রজন্ম শুধুই অতীত স্মরণ করে না, বরং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
তবে শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ থাকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা যাবে না। আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিনের কথোপকথন ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে নানা সামাজিক ইস্যুতে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরছে, তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই প্রতিফলন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মনোভাব—এটাই তো প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার।
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মনে হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মুক্তচিন্তা, মানবিকতা আর দেশপ্রেমের মিশেলে গড়ে ওঠে এক অনন্য চর্চা। এই চর্চা শুধু ক্যাম্পাসে নয়, বরং পুরো দেশেই পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেবে—এটাই আমার বিশ্বাস।