নিজের জন্য জার্সি বানাতে গিয়ে উদ্যোক্তা

নিজস্ব কারিগর দিয়েই জার্সি নকশা করান হাসিবুর রহমানছবি: সংগৃহীত

‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্র হয়ে জার্সির ব্যবসা করবে?’ ‘পশুপালন নিয়ে পড়ে গার্মেন্টস ব্যবসা?’ এমন কত নেতিবাচক মন্তব্যই না কানে এসেছে। তবে দমে যাননি হাসিবুর রহমান। উদ্যোক্তা হওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে গড়ে তুলেছেন নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘বাউ জার্সি ওয়্যার’। 

বাকৃবির পশুপালন অনুষদ থেকে সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছেন এই তরুণ। কিন্ত এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। শিক্ষার্থীজীবন থেকেই তিনি একজন সফল উদ্যোক্তাও বটে।

খেলাধুলার প্রতি টান থেকেই জার্সি কেনায় ঝোঁক। অথচ তার এলাকায় মানসম্মত কোনো জার্সির দোকান ছিল না। যেতে হতো সেই ঢাকায়। করোনাকালে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি জার্সি বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু অনলাইনে খুচরা জার্সি কিনতে ব্যর্থ হন। তখনই মাথায় জেদ চাপে, একটা মানসম্মত পণ্য পেতে ঢাকাতেই কেন যেতে হবে? ঠিক করলেন নিজেই জার্সি বানাবেন।

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় পৌঁছে গেছে তাঁর পণ্য। মাসিক বিক্রিও লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। মুনাফাও থাকে ভালো। কিন্তু এই তরুণের কাছ গ্রাহকের গায়ে নিজের তৈরি জার্সি দেখতে পাওয়াই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

কিন্তু উদ্যোক্তা হতে মূলধন দরকার। সেটা কোথা থেকে আসবে? এই গল্পটাও অন্যরকম। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষেই পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করেন হাসিব। বিয়েতে অনেক আত্মীয়স্বজনই উপহারস্বরূপ অর্থ দেন। সেটা দিয়েই যাত্রা শুরু করলেন জার্সি ব্যবসা। এ কাজে তাঁকে শক্তি ও প্রেরণা দিয়েছে পরিবার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চাপ সামলে ব্যবসা করলেন কী করে? এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, ইচ্ছা থাকলেই করা যায়। সময়ের সঠিক ব্যবহার করা গেলে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছুই করা সম্ভব।

হলের টুর্নামেন্টে জার্সি সরবরাহ করে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা পান তিনি
ছবি: সংগৃহীত

জার্সি বিক্রি করেই সফলতা

হাসিবের ব্যবসায়িক পণ্যের তালিকায় রয়েছে ফুটবল ও ক্রিকেট দলের জার্সি। নিজস্ব কারিগর দিয়েই আলাদাভাবে নকশা করান। এ কারণে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তাঁর পণ্যের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর এখন তো বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় পৌঁছে গেছে তাঁর পণ্য। মাসিক বিক্রিও লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। মুনাফাও থাকে ভালো। কিন্তু এই তরুণের কাছ গ্রাহকের গায়ে নিজের তৈরি জার্সি দেখতে পাওয়াই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও তাঁর থেকে জার্সি নেন শিক্ষার্থীরা। একবার বাকৃবির তিনটি হলের টুর্নামেন্টে ২ দিনে গ্রাহকের পছন্দের নকশায় তৈরি ৫০০ জার্সি সরবরাহ করে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা পান তিনি।

গ্রাহকের মনোভাব বোঝা, মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করা এবং আস্থা অর্জন করাই তাঁর সফল্যের চাবিকাঠি, মনে করেন এই তরুণ।

ভবিষ্যৎপরিকল্পনা সম্পর্কে হাসিব জানান, ’ভবিষ্যতে একটি গার্মেন্টস কারখানা দিতে চাই। সেখানে বিস্তৃত পরিসরে আমার নকশা করা জার্সি তৈরি হবে।’ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ নিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও এসব পণ্য রপ্তানি করতে চান তিনি।

আরও পড়ুন