হাজারো শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে (মানবিক বিভাগ) প্রথম হয়েছেন আপনি। ধারণা করতে পারি, আপনার প্রস্তুতি অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম ছিল। কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: ছোটবেলা থেকে আমি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অনেক গল্পের বই পড়তাম। গল্পের বই পড়তে পড়তে একসময় লেখালেখির একটা অভ্যাস তৈরি হয়। নিজের মতো লিখতাম, যখন যেটা মন চাইত। যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষায় অনেক সাহায্য করেছে। এটা আমার প্রস্তুতির একটা ব্যতিক্রম দিক ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নটা কত দিনের?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: আমি মানবিকের ছাত্রী। মানবিক বিভাগে যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো পড়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের সেরা বিদ্যাপীঠ বিবেচনা করা হয়। ছোটবেলাতেই এই ব্যাপারটা একটু একটু করে বুঝতে শিখেছিলাম। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের ওপরের দিকে ছিল।
প্রস্তুতির সময়ের কোনো বিশেষ স্মৃতি বা কঠিন অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ঠিক দুই দিন আগে আমি হঠাৎ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পড়তে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। পরীক্ষার আগে এ রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল।
এ সময় আপনার পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নব্যাংক সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। জানতাম যে ঢাবি সব সময় মূল বইকে ফোকাস করে প্রশ্ন করে। আমি তাই পাঠ্যবইকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছি। গতানুগতিক নোটবই বা গাইড বই খুব বেশি না পড়ে, মূল বই ভালো করে পড়ার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, প্রতিদিন পড়ালেখা করার। এমন কোনো দিন ছিল না, যেদিন পড়ালেখা করিনি। তাই বলে সব সময়ও পড়ালেখা করতাম না। পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, শরীরচর্চা ও সংগীতচর্চা—এগুলোর পাশাপাশি দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি।
পরীক্ষায় কোন বিষয়টাকে সহজ বা কঠিন মনে হলো?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। তুলনামূলক একটু কঠিন মনে হয়েছিল বাংলা লিখিত অংশ।
প্রথম হওয়ার পর প্রথম কোন বিষয়টা মাথায় এসেছে?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: বাবা সব সময় বলতেন, সৃষ্টিকর্তা আমাকে যেই মেধা দিয়েছেন, সেই মেধাকে যদি আমি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে একদিন প্রথম হব। এই কথাটা অনেক আগে থেকে শুনছিলাম। ফলাফল দেখার পর মনে হলো যে বাবার কথাটা আসলেই সত্যি।
এখন কোন বিষয়ে ভর্তি হবেন?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: আইন নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা কাঠামো একটা দেশের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দেশে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সেই জায়গা থেকে আইন পড়ার ইচ্ছা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাব বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: স্কুলে আমি বিতর্ক করতাম ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে।
পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
সাইফা বিনতে ওয়ারীশ: যেহেতু আইন নিয়ে পড়ার পরিকল্পনা করছি। নিজেকে আইন সংশ্লিষ্ট কোনো পেশায় দেখতে চাই।