যেভাবে রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি পেয়েছেন পলিটেকনিকের ছাত্র আশিক
‘পলিটেকনিকে পড়লে দ্রুত চাকরি পাওয়া যায়’—বড় ভাইদের কাছ থেকে এমন কথা শুনেছিলেন আশিকুর রহমান। কিন্তু কক্সবাজারের এই তরুণ যখন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেন, তখন দেখলেন, অনেকেই একরকম তাচ্ছিল্য করছেন। বন্ধুদের কেউ কেউ তখন বিএসসি ডিগ্রির জন্য ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু ডুয়েটে পড়াটা কেন যেন যন্ত্রকৌশলের এই ছাত্রকে ঠিক টানছিল না। হয়তো সবাইকে একটা জবাব দেওয়ার জেদ মনে চেপে বসেছিল।
এই সময়ই আশিক জানতে পারেন, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদেরও বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। অবশ্য চীন ছাড়া আর কোনো দেশের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ‘পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে কি ভুল করলাম?—এমনটাও ভাবতে শুরু করেছিলেন তখন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শুরু করেন জোর ইংরেজিচর্চা।
কোন দেশে যাওয়া যায়, কীভাবে আবেদন করতে হয়, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। বড় ভাইয়েরাও কেউ কিছু বলতে পারছিলেন না। অগত্যা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সহযোগিতা কেন্দ্রগুলোতে ই–মেইল করতে শুরু করেন। অবশেষে রাশিয়া থেকে ইতিবাচক সাড়া পান, সেখানে সরকারি বৃত্তির মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার ছাত্ররাও উচ্চশিক্ষা নিতে পারেন।
স্নাতক পর্যায়ের এই বৃত্তি পেতে আশিককে যদিও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার কোনো সার্টিফিকেট দেখাতে হয়নি; কিন্তু নিয়মিত ইংরেজিচর্চা তাঁর মৌখিক পরীক্ষার ধাপগুলোকে সহজ করেছে। আশিকুর রহমান বলেন, ‘আগে থেকে প্র্যাকটিস করার কারণে ভাইভাটা খুব ভালো দিয়েছি। যতক্ষণ ভাইভা হয়েছে, খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের আলোচনা এগিয়েছে। যদিও বৃত্তি পাওয়ার পর এখানে এসে আমাকে রুশ ভাষা শিখতে হয়েছে।’ এখন মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক করছেন এই তরুণ।
তথ্যের ঘাটতির কারণেই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন বলে মনে করেন আশিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ছাত্র–ছাত্রীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অন্যের কাছ থেকে তথ্য জানাটাকেই বেশি সহজ মনে করে। কিন্তু এসব বিষয়ে সাহায্য করার মতো মানুষ আসলে খুবই কম। তাই আমি সব সময় ই–মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। সব সময় হয়তো উত্তর পাইনি। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই পেয়েছি। তাই আমি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেব, কারও অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই উদ্যোগী হও।’