আজ আন্তর্জাতিক পাথর দিবস
প্রবাদ আছে, মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়।
শোকের তীব্রতায় কেউ ভাষাহীন, অনুভূতিশূন্য, নিশ্চল হয়ে পড়লে সেই অবস্থা বোঝাতে কথাটা বলা হয়। শ্রোতাপ্রিয় একটি বাংলা গানে বলা হয়েছে, ‘এ মন আমার পাথর তো নয়/সব ব্যথা সয়ে যাবে নীরবে’। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘ভাত নেই, পাথর রয়েছে’ কবিতায় বলেছেন, ‘শুধু মানুষ পাথর নয় ব’লে/পরিত্রাণ পেয়ে যায়।’
সত্যিই তো, মানুষ যদি আসলেই পাথরের মতো আবেগহীন কঠিন হয়ে যেত, তাহলে বোধ হয় সভ্যতা এগোতেই পারত না। নইলে ‘আমি পাথরে ফুল ফোটাব শুধু ভালোবাসা দিয়ে’ এমন নিটল দুঃসাহস দেখাতে পারত না মানুষ! কিংবা অমন দৃঢ় একটি পদার্থকে অতটা নরম হিসেবে কল্পনা করা যেত না! গায়ক মান্না দে যেমন রায় দিলেন, ‘যদি…পাথরে লিখ নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে’।
এসব তো মানুষের অন্তর্গত অনুভূতির আলঙ্করিক প্রকাশ। আদতে মানবসভ্যতায় পাথরের ভূমিকা কতটুকু? সে আর বেশি বলার কী আছে! মানব বিকাশের ইতিহাসে ‘প্রস্তর যুগে’র দিকে তাকালেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। পাথরে পাথর ঘষে প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল মানুষ। পাথর দিয়ে অস্ত্র বানাতে শিখেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথর আরও কত অসংখ্য কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে! পাথরে নির্মিত হয়েছে আশ্চর্য রহস্যময় পিরামিড। প্রাচীন যুগে রাস্তা নির্মাণে পাথর ব্যবহার করত রোমানরা, যাতে ভারী ঘোড়ার গাড়ি কিংবা সৈন্যদের পদভারেও ঠিক থাকে রাস্তা। পাথরের সে ব্যবহার এখনো আছে।
পাথর বা শিলা মূলত খনিজ বা খনিজসদৃশ পদার্থের সমন্বয়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। পুরো ভূপৃষ্ঠজুড়েই এটি বিস্তৃত। এমনকি ভূত্বকের উপরিভাগের কঠিন স্তর লিথোস্ফিয়ার শিলায় তৈরি।
ভাগ্য বদলেও পাথরের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন অনেকে। ফলে আংটি বা অলংকার হিসেবে মানবসমাজে পাথরের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। অবশ্য স্রেফ অলংকার হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই পাথর সমাদৃত। যেমন রাশিয়ায় একটি প্রাচীন গয়না পাওয়া গেছে, যেটি ছিল পাথরের ব্রেসলেট। হাল আমলেও মানুষ পাথরের অলংকার ব্যবহার করেন। গৃহসজ্জায়ও রয়েছে এর ব্যবহার। মসলা পেষার জন্য পাথরের তৈরি শিল-নোড়া তো আমাদের নিত্যব্যবহার্য। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনে পাথর ব্যবহার করা হয়। কিংবা ছোটবেলার পাঁচগুটি বা কড়ি খেলার কথাও ভুলে যাননি নিশ্চয়ই! ছোট ছোট পাথরখণ্ড দিয়ে হতো সেই খেলা।
১৩ জুলাই, আন্তর্জাতিক পাথর দিবস। মানবসভ্যতায় পাথরের ভূমিকা তুলে ধরতে দিনটি পালিত হয়। অবশ্য কবে কীভাবে এই দিবসের চল হয়েছিল, তা জানা যায় না। তাতে কী! এমন একটি বিচিত্র দিন কিন্তু পালন করাই যায়।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে