‘জুলাই–জাগরণ’ প্রথম আলোর একটি বহুমাত্রিক প্রদর্শনী
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এই বিশেষ প্রদর্শনীর ভাবনাটা বাস্তবায়নের শুরু প্রায় তিন মাস আগে। তখনো আমরা স্থবির—কিছুই ভাবতে পারছি না, মাথার ভেতর শুধুই ঘুরপাক খাচ্ছে জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এত বিপুল প্রাণের আত্মত্যাগ, এত নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ স্বাধীনতার পর আর কোনো দিন কি দেখেছে বাংলাদেশ!
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কঠিন সময়েও ঝুঁকি নিয়ে প্রথম আলোর সহকর্মীরা পেশাদারত্বের সঙ্গে সাংবাদিকতা করেছেন। প্রদর্শনীর পরিকল্পনার সময় তাই ১ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের প্রথম আলোকে আলাদা করে দেখা হলো, আবারও ফিরে দেখা জুলাই অভ্যুত্থানের খবরাখবর। দর্শকের কাছে প্রদর্শন যাতে ভারাক্রান্ত না লাগে, তাই তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হলো। আন্দোলনের সময় হাজার হাজার ছবি তুলেছেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রীরা, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল হিসেবে এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। তার মধ্য থেকে ৩০টি চিত্র বাছাই করাটা সহজ ছিল না। একইভাবে প্রায় ২ হাজার সংবাদ থেকে চূড়ান্তভাবে ১৫টি বাছাই করাও ছিল সময়সাপেক্ষ।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের আমরা শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছি। সেসব বীরকে আমরা আর কখনোই ফিরে পাব না। তাঁদের হৃদয়ে ধারণ করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সিদ্ধান্ত হলো, সব শহীদের প্রতীক হিসেবে ছয়জনকে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করব। তাঁদের ব্যবহৃত সামগ্রী প্রদর্শনের মাধ্যমে তাঁদের সান্নিধ্যে আমরা যাব। আমরা কৃতজ্ঞ যে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রিয়জনদের স্মারকগুলো আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে সেসব শহীদ পরিবার।
আন্দোলনের দিনগুলোতে প্রতিকূল পরিবেশেও পেশাদার দায়িত্ব পালন করতে উত্তাল রাজপথে ছিলেন আমাদের সহকর্মীরা। তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হলো বিগত স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনীর ব্যবহৃত বুলেটের খোসা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের পিনসহ নানা স্মারক। এক্সক্লুসিভ ভিডিও, প্রামাণ্যচিত্র যুক্ত করার সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই ছিল। মূলত আমরা একটি বহুমাত্রিক প্রদর্শনীর কথাই ভাবছিলাম, যা প্রদর্শনীর চেয়েও একটু বেশি কিছু হয়ে উঠবে। শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেলকে দেওয়া হয় কিউরেশনের ভার। সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয় প্রাইম ব্যাংক।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়াই এ আয়োজনের লক্ষ্য। প্রাথমিক পরিকল্পনায় শতাধিক উপকরণের বিষয়ভিত্তিক তালিকা তৈরি হয়েছিল, সেটাকে ২০-এর নিচে নামাতে অনেক সভা, আলাপ–আলোচনার মধ্য
দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রথম আলোর এ বহুমাত্রিক প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠানটির বহু কর্মীর অবদানের ফল।