বিয়ের ছবি ভালো হতে কী লাগে
একটা সময় যে বিয়ের ছবিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতো না, সেটা বছর কুড়ি আগের ছবি দেখলেও বোঝা যায়। এখন বিয়ের আয়োজনের অন্যতম অংশ ছবি ও ভিডিও। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিয়ের ছবি তোলার পেশাদার সব প্রতিষ্ঠান।
দুই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান আজকাল আমাদের দেশে হচ্ছে। এক ধরনের আয়োজন হয় কমিউনিটি সেন্টার বা বদ্ধ কোনো জায়গায়। আরেকটি ধরন হচ্ছে খোলা মাঠ বা রিসোর্টে। অনেকে আবার মূল অনুষ্ঠান কোনো হলরুমে করলেও বিয়ের আগে বা পরে একটা ফটোশুট করতে চান পছন্দের কোনো জায়গায় গিয়ে। তাই বিয়ের ছবি তোলার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করাটা জরুরি।
সাধারণত আমাদের দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান বিয়ের ছবি তোলে, তাদের সবারই নানা রকম প্যাকেজ আছে। সেখানে ছবি তোলাসহ ভিডিও বা সিনেমাটোগ্রাফি করারও সুযোগ আছে। আমি যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কথা বলি, তাহলে আমাদেরও বেশ কয়েকটি প্যাকেজ আছে। ইনডোর ও আউটডোরে ছবি তোলার প্যাকেজ ভিন্ন ভিন্ন। বিয়ের ছবি তোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের যেসব অনুরোধ থাকে, সেগুলো শুনে সেভাবেই ছবি তোলার ও ভিডিও করার পরিকল্পনা করতে হয়। অনেকের ড্রোন ব্যবহারেরও চাহিদা থাকে। সেসব আয়োজনও মাথায় রাখতে হয়।
গ্রাহকের চাহিদা বোঝার পর সাধারণত আলোকচিত্রীদের সঙ্গে বসতে হয় বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে। ছবি তোলার আয়োজনগুলোর মধ্যে কী কী থাকছে, সেসব বুঝে নিতে হয়। বিয়ের ছবি তোলার ক্ষেত্রে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই কোন রঙের কী ধরনের পোশাক বিয়েতে পরছেন, সেটা আলোকচিত্রীকে জানানো দরকার। আউটডোর শুট হলে আপনি যে পোশাক পরতে চাচ্ছেন, সেটা কোন বেলার আলোতে ঠিকঠাক ধরা যাবে, সেটাও ভাবতে হয়।
আমরা (চিত্রগল্প টিম) ছবি তোলার বুকিং হয়ে যাওয়ার পর একটা দল ঠিক করি। যেখানে টিম লিড দেওয়াসহ নানা রকম লোকজন দরকার হয়। লাইট, প্রপস ইত্যাদি বিষয় দেখভালের জন্য। গ্রাহকের সঙ্গে এই দলই সব রকম যোগাযোগ করে। সরাসরি অথবা অনলাইন মিটিং করে আমরা তাঁদের পছন্দ বুঝতে চেষ্টা করি। কোনো বিশেষ অনুরোধ থাকলে সেটাও মাথায় রাখি। যে পরিবারের ছবি তোলা হচ্ছে, তাতে যেন সেই পরিবারের পুরো গল্পটা ধরা যায়, সেই ভাবনা থেকে ছবি তুলি। ইভেন্টের সাজসজ্জা, লাইটিং, পোশাক বা মেকআপ নিয়ে কোনো পরামর্শ থাকলে সেটাও এই মিটিং পর্বে ঠিক করে নিই। বর–কনেসহ পুরো পরিবারের ডিটেইল বোঝার চেষ্টা থাকে, যাতে সেভাবে ছবি তোলা যায়।
অনুষ্ঠানের আগেই আমরা চেষ্টা করি বর–কনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এতে তাঁরাও ছবি তোলার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারেন। বিয়ের ভালো ছবি তোলার পূর্বশর্ত আমার মনে হয়, বর–কনের সহযোগিতা। তাঁরা যদি ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিক হতে না পরেন, তাহলে ছবিতে প্রাণ থাকে না। তাই আগে থেকে গল্প করে নিলে তাঁরাও সেভাবে সাড়া দিতে পারেন। পারিবারিক ছবি তোলার ক্ষেত্রেও আগে থেকে একটু আলাপ–পরিচয় থাকলে ‘খাঁটি অভিব্যক্তি’গুলো বের করে আনা যায়। এতে ছবি প্রাণবন্ত হয়।
আউটডোর ছবি তোলার ক্ষেত্রে আগে গ্রাহকের ইচ্ছাটা শুনতে হয়। কেউ হয়তো চান সমুদ্রে যেতে, কেউ পাহাড়ে। অনেকে সেসবের বাইরে নিজের ক্যাম্পাস বা নিতান্তই একটা নদীর পাড়ে যেতে চান। সেসব জানার পর আমরা জায়গা চূড়ান্ত করি। কতটা সময় তাঁরা দিতে পারবেন, সেটা বুঝে পোশাক নির্বাচন করা হয়। এরপর সকালের আলোয় হলে কেমন পোশাক, বিকেলে হলে কেমন রং, সেসব ঠিক করে নিই। অনেকটা বেড়াতে বেড়াতে ছবিগুলো তোলা হয়ে যায়। সেখানে কিছু শট নেওয়া হয় স্ক্রিপ্টেড আবার কিছু শট থাকে ক্যান্ডিড। সাধারণত গ্রাহকেরা তাঁদের অপ্রস্তুত ছবিগুলোই বেশি পছন্দ করেন।
ইনডোর বিয়েতে
বিয়েতে সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সময়মতো শুরু করতে না পারলে অনেক ছবিই তোলা যায় না। বর–কনে একটু আগে আগে চলে আসতে পারলে নিজেদের ছবিগুলো ঠিকমতো তুলে নিতে পারেন। কারণ, অতিথিদের বসিয়ে রেখে ছবি তুলতে গেলে অন্যরাও বিরক্ত হয়ে যান। যাঁদের ছবি তোলা হবে, তাঁরা কেমন ছবি চান, সেটা নিজেদের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। ছবি তোলার ক্ষেত্রে কনের মেকআপ গুরুত্বপূর্ণ। মেকআপ ঠিকমতো না বসলে সেটা ছবিতে ভালো লাগে না।
আউটডোর ছবিতে
যেহেতু প্রকৃতির মধ্যে ছবিগুলো তোলা হবে, তাই সেখানে মেকআপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। পোশাকও যতটা সাধারণ রাখা যায়। মানে খুব জমকালো পোশাক না পরাই ভালো। অনেকে হয়তো ঠিক করলেন সাদা শাড়ি পরবেন, তাঁকে আমি পরামর্শ দেব বিকেলের আলোয় সেটা পরতে। সকালের তেজি আলোয় সাদা শাড়ি ঝলসে যাবে। আবার কেউ হয়তো জমিদারবাড়ি বা পুরোনো কোনো বাড়িতে শুট করতে চান, তখন তাঁকে সেখানে আমি হালকা রং পরতে বলব। ওই পরিবেশে বর বা কনে যদি গাঢ় রঙের পোশাক পরেন, সেই ছবি ভালো হবে না।