পাঁচ বিনিয়োগ, যা কখনোই বিফলে যাবে না

বিনিয়োগের কথা মাথায় এলেই আমরা হিসাব কষতে থাকি, কোন খাতে খরচটা একটু কমানো যায়। কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভের পরিমাণটা একটু বেশি হবে। কেউ কেউ তো আবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, সঞ্চয়পত্র কিনবেন নাকি শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন! অনেকের কাছে, অর্থ ছাড়া জীবন অর্থহীন। তবে টাকা কামানো আর সঞ্চয় করা জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ হলেও টাকাই জীবনের সবকিছু নয়।

চলুন, এই টাকার কচকচানিটা বরং কিছুক্ষণের জন্য একটু অন্যদিকে সরিয়ে রাখি।
টাকাপয়সার বাইরেও আমরা জীবনে অনেক কিছু যোগ করতে পারি। জীবনে আত্ম–উন্নয়নমূলক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। এই খরচের খাত অনেকের কাছে অপচয় মনে হতে পারে। তবে একবার যদি আমরা অর্থনীতির যোগ–বিয়োগ থেকে বেরিয়ে চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে, এই বিনিয়োগ সারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। জীবনব্যাপী ফল দিয়ে যায় এসব বিনিয়োগ। এমনই পাঁচ বিনিয়োগের কথা জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো আপনাকে আজীবন কেবল সমৃদ্ধ করবে।

নিজেকে বই উপহার দিয়ে সমৃদ্ধ করুন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

১. বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না

বলা হয়, একবার যিনি বই পড়ার মজা পেয়ে গিয়েছেন, জীবনে কখনোই তাঁর আর একা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বইকে বলা হয় আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। কেন? ধরুন, আপনি এখন ঘুরে আসতে চান দেশ–বিদেশের নানান জায়গা থেকে। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ নেই। চমৎকার বিকল্প হিসেবে হাতে তুলে নিতে পারেন দুর্দান্ত একটি ভ্রমণকাহিনি। আর লেখকের বর্ণনার সঙ্গে কল্পনার রাজ্যে ঘুরে আসতে পারেন সেই জায়গা থেকে।

আবার ধরুন, আপনি এক নির্দিষ্ট ব্যাপার নিয়ে জানতে চান। কিন্তু সেই সম্পর্কে আপনার মোটেও ধারণা নেই। আপনি দুই-একটা বই পড়লেই জেনে নিতে পারবেন সেই বিষয়ের খুঁটিনাটি অনেক কিছু। শুধু কোনো কিছু জানার জন্যই নয়, বই আমাদের কল্পনাশক্তি বাড়ায়, সৃজনশীল করে তোলে। বড় বড় মানুষের জীবনী, স্মৃতিকথা সমৃদ্ধ করে আমাদের জ্ঞানভান্ডার। আর কোনো এক অশান্ত বিকেলে একটি ভালো গল্পে ডুব দিয়ে মন খারাপ ভাব চোখের পলকে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বইয়ের থেকে ভালো সঙ্গী আর কী হতে পারে বলুন?

২. শরীর ফিট তো সব ঠিক

শারীরিক সুস্থতা আর ফিটনেসের ওপর কিছু নেই। শহুরে জীবনে মুক্ত এবং সুস্থ পরিবেশে হাঁটার মতো জায়গার বড়ই অভাব! বাধ্য হয়েই মানুষ আজকাল তাই ঘাম ঝরাতে, মেদ কমাতে জিমে যায়। পার্কে হাঁটার সঙ্গে জিমের সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা হয়তো এখানেই। কারণ, জিমে প্রশিক্ষিত ট্রেনাররা আপনার দেহের প্রয়োজন বুঝে খাওয়ার তালিকা করে দেন। আপনার শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারেন কোন ব্যায়ামটা আপনার করা উচিত, কোনটা নয়।

শরীর ফিট তো সব ঠিক
ছবি: সংগৃহীত

এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, জিমে কেন যাবেন? আপনি তো সুস্থ।
আমরা ভাবি, অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা দরকার, তার আগে নয়। ব্যাপারটা আসলে হওয়া উচিত উল্টো। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। আর বাসাবাড়ি, অফিসের কাজ সামলে আমরা নিজের দিকেই সবচেয়ে কম সময় দিই। আবার কখনো ব্যায়াম বা যোগ করার মনস্থির করে, সেই অভ্যাস ধরে রাখতে পারি না বেশি দিন। জিমে গিয়ে সবার সঙ্গে ব্যায়াম করলে যেমন একটা রুটিন তৈরি হয়ে যায়, তেমনি আবার সেই রুটিনটা মেনে চলার মোটিভেশন পাই।

৩. যদি লক্ষ্য থাকে অটুট

আপনি হয়তো আপনার বর্তমান চাকরিতে সন্তুষ্ট নন। আবার জীবনে কোনো এক সময় হয়তো আপনি একটা জিনিস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন অসন্তুষ্ট হয়েও প্রতিনিয়ত সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন, কেন? আপনি কি আবার নতুন করে শুরু করতে পারেন না? যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেন জীবনের কোনো এক সময়। লজ্জা বা লোকের কথা শোনার ভয় নাহয় একটু অন্যদিকে সরিয়ে রাখলেন। ছোট করে হলেও শুরু করুন। নিজের উন্নতির জন্য বা কোনো একটা ইচ্ছা পূরণের জন্য বের করুন একটু সময়। নিজের প্রতি এই বিনিয়োগের ফল কোনো একদিন আপনার কাছে ফিরে আসবেই। যদি না–ও আসে, সাত্ত্বনা হিসেবে আপনার চেষ্টাটুকু তো থাকলই। হয়তো এই ব্যর্থতা আপনাকে ভবিষ্যতে আরও বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করবে।

৪. আপনি তা–ই, যা আপনি খান

আপনি ভোজনরসিক হলে তো কথাই নেই। আপনি নিশ্চয়ই যে জায়গাতেই যান, তার আনাচে-কানাচে খোঁজ করেন সুস্বাদু খাবার কী কী আছে। আর এরপরই ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই খাবারের ওপর। কখনো এতটাই খেয়ে ফেলেন যে খাবার পর নড়তেই পারেন না।

তবে আপনার জন্য দুঃসংবাদ!

এখানে ভালো খাবার বলতে যা বোঝাচ্ছি, তার সবই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। ১৮ শতকের এক প্রবাদে বলা হয়েছে, আপনি তা–ই, যা আপনি খান। আপনি যত সবুজ (শাকসবজি, ফল) খাবেন, আপনি ততই সবুজ (তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন)। জাপানি এই প্রাচীন প্রবাদটি সব সময় সমানভাবে প্রযোজ্য।

আপনি যা খান, আপনি তাই–ই!
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

আপনি যদি আঁশযুক্ত, প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং ভালো চর্বি (মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট)-যুক্ত খাবার বেশি খান, তাহলে আপনি এনার্জি বেশি পাবেন। টানা কাজ করতে পারবেন দীর্ঘসময়। এ ধরনের কয়েকটি খাবার হলো ডাল, ডিম, বাদাম, ওটস, সবুজ শাকসবজি, মুরগির মাংস। খাবারে শর্করা বা চিনিজাতীয় খাবার যত কম রাখবেন, ততই ভালো। এই খাবারগুলো সহজেই আমাদের ক্লান্ত করে তোলে। ওজনও বাড়িয়ে দেয়।

৫. মানুষ তার অভিজ্ঞতার সমান বড়

ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে আসছি, বয়স্কদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করো। এই কথা কেন বলা হয়, কখনো ভেবে দেখেছেন? কারণ, যাঁরা বেশি বয়সী তাঁরা আমাদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। আর এই অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় রুটিন, একঘেয়ে জীবনের বাইরে গিয়ে। যখন বাসা আর কাজের বাইরে গিয়ে আপনি কিছু করবেন, তখন ভিন্ন একটা দৃষ্টিতে ব্যাপারগুলো দেখতে পাবেন।

ঘুরতে যান, অনেক মানুষের সঙ্গে মিশুন, কথা বলুন, জানুন তাঁদের গল্প। যখন গল্প শুনবেন, কোনো অচেনা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করবেন না। প্রত্যেক মানুষের জীবন আলাদা, বেড়ে ওঠা আলাদা, মানুষ হিসেবেও তিনি আলাদা। তার চেয়ে বরং তাঁদের গল্প শুনে সমৃদ্ধ করুন নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি। কেননা, যিনি অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যত কিছু ভরতে পেরেছেন, জীবনকে ততই সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন।