বিয়ের পর জানলাম স্বামী বহু নারীতে আসক্ত
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমার স্বামী একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে থেকেই আমরা প্রেম করতাম। ১৩ বছর প্রেম করে তারপর বিয়ে করেছিলাম। অথচ ১৩ মাসও সংসার করতে পারলাম না। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করেছিলাম। অথচ বিয়ের পর জানলাম, সে বহু নারীতে আসক্ত। আমাদের বিয়ের পর এক মাস পার হতেই বুঝতে শুরু করি, স্বামী কিছু লুকাচ্ছে। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে গেলে কি আর এতটা লুকানো যায়!
স্বামীর এক সহকর্মীর সঙ্গে আমারও অনেক দিনের পরিচয়। বেশ আন্তরিক মনে হয়েছিল কথা বলে। কিন্তু এই সহকর্মীর সঙ্গে একাধিকবার অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে আমার স্বামী। সেটা আমি জানতে পারি বিয়ের পরে। সবকিছু ভুলে বিয়ের আগের বিষয় হিসেবে ক্ষমা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানলাম, বিয়ের পরও তারা আগের মতো সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে, তার পর থেকে মন উঠে গেছে। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ভুল হয়ে গেছে বলে স্বামী ক্ষমা চায়।
আরও দুটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ের পরও প্রেম করে যেতে থাকে আমার স্বামী। এসব নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় যখন কোনো ভালো ফল হলো না, তখন নিজে থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু স্বামী সেটা চায় না। সে বারবার বলে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু আবার এসবে জড়ায়। শেষে বাচ্চা নেওয়ার জন্য চাপ দিল। কিন্তু আমি সেটায় রাজি ছিলাম না। তাই সে আমাকে জোর করতে থাকে। আমি একটা ছোট চাকরি করি, সেটা নিজের খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট।
বিয়ের ১০ মাস পর থেকে আমি আলাদা থাকছি। মায়ের বাসায়ও থাকি না। নিজের মনকে সময় দিয়ে এখন আমি ডিভোর্স নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু স্বামী বলছে, ডিভোর্স দিলে সে আমার নামে মামলা করবে। এই পরিস্থিতিতে আমি আসলে কীভাবে ডিভোর্স দিতে পারি, দয়া করে জানাবেন।
মেহরিন, ঢাকা
উত্তর: এমন একটি দুঃখজনক পরিস্থিতিতে পড়ার জন্য আপনার প্রতি সমবেদনা। আপনার স্বামী তাঁর সহকর্মীসহ একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন। বাংলাদেশের আইনে দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় পরকীয়ার শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবে সেখানে আপনি স্বামীর বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। ৪৯৭–এর সেই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সেই নারীর সম্মতি সাপেক্ষে সম্পর্কে লিপ্ত হন, তবে সেই ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনা শ্রম বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যে নারীর সঙ্গে আপনার স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তিনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে সেই নারীর স্বামী আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পরকীয়ায় জড়িত নারীর কোনো শাস্তির কথা এই আইনে বলা নেই। তবে স্বামী অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারবেন। এ ছাড়া আপনি যদি আপনার স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, সে জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীনে প্রতিকার পেতে পারেন।
এখন আসি বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে। আপনি চাইলে আপনার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। আপনি যদি তালাক চান, তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, দেখে সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে তাঁকে তালাক ঘোষণার পর অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করে, সে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই বা পরবর্তী সময়ে বা যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এই নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। বিয়েতে পারস্পারিক বনিবনা না হলে যেকোনো পক্ষই তালাক দিতে পারে। এতে কোনো আইনগত বাধা নেই। তালাক দেওয়ার জন্য আপনার বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো সুযোগ আপনার স্বামীর নেই।
চিঠি পাঠানোর ঠিকানা
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA