অন্দরে গোপন ক্যামেরা আছে, কীভাবে বুঝবেন?

অবকাশ যাপন করতে গিয়ে হোটেলের কক্ষে বা শপিং মলে পোশাক পরিবর্তনের ট্রায়াল কক্ষে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। লুকানো ক্যামেরা নেই তো? (প্রতীকী ছবি)
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

অবকাশ যাপন করতে গিয়ে হোটেলের কক্ষে বা শপিং মলে পোশাক পরিবর্তনের ট্রায়াল কক্ষে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে। মাথায় ঘুরতে থাকে, এখানে লুকানো ক্যামেরা নেই তো? মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজে প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, প্রায় ৫৮ ভাগ মার্কিন নাগরিক লুকানো ক্যামেরা নিয়ে চিন্তিত। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ মানুষ ঘুরতে গিয়ে হোটেল ও বাসায় ক্যামেরা খুঁজেছেন। বাংলাদেশেও কয়েক বছর ধরে লুকানো ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও ধারণের বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে। তাই নিজের স্বার্থেই সাবধান থাকার সঠিক উপায় জানা প্রয়োজন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লুকানো ক্যামেরা খোঁজার নানা পরামর্শ ভেসে বেড়ায়। কিন্তু এসব কি আসলেই কাজে দেয়? তা খুঁজতেই সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি একটি পরীক্ষার আয়োজন করে। একটি বাসায় সূক্ষ্মভাবে স্থাপন করা হয় ২৭টি ক্যামেরা। অন্য একটি দল নানা উপায়ে ক্যামেরা খোঁজা শুরু করে। প্রথমে খালি চোখে তাকিয়ে একটি ক্যামেরা শনাক্ত করতে পারে দলটি। এরপর মুঠোফোনের সফটওয়্যার, আধুনিক লেন্স ইত্যাদি প্রযুক্তির সাহায্যে ধরা পড়ে আরও ১৬টি ক্যামেরা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত সব উপায় দিয়ে চেষ্টা করেই এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
ফলাফল বেশ চিন্তার হলেও সাবধানতা অবলম্বন করে চলার বিকল্প নেই। তাই লুকানো ক্যামেরা খোঁজার জন্য এ পাঁচটি উপায় ভেবে দেখতে পারেন।

১. সন্দেহজনক যেকোনো কিছু যাচাই করুন

হোটেল কিংবা অপরিচিত কোথাও দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হলে প্রথমেই চারদিক ঘুরে দেখুন। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেই যাচাই করুন। ক্যামেরা বসানো আছে কি না, নিশ্চিত হোন। বিশেষ করে শৌচাগার, ঘরের দেয়ালঘড়ি, কলমদানি, দেয়ালে টানানো ছবি, চার্জিং পোর্ট ইত্যাদি পরখ করে নিতে ভুলবেন না। কোনো বস্তু সাধারণত যেখানে থাকার কথা, সেখানে না থাকাটাও সন্দেহজনক। এ ছাড়া পোশাক কিনতে গিয়ে ট্রায়াল কক্ষে অনেকেই পোশাক পরিবর্তন করেন। তখনো ওপরে–নিচে তাকিয়ে লুকানো ক্যামেরার বিষয়টি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

২. আয়নার কারসাজি

যেকোনো ধরনের আয়নার মধ্যেও ক্যামেরা লুকানো থাকতে পারে। তবে সহজেই এটি যাচাই করতে পারেন। আয়নায় আপনার আঙুল রাখুন। আয়নায় আঙুলের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে আপনার আঙুলের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা আছে কি না লক্ষ করুন। ফাঁকা থাকলে এটি আসল আয়না, অন্যথায় এটা দুমুখো আয়না হতে পারে। ভেতরে থাকতে পারে ক্যামেরা। এ ছাড়া আয়নার পেছনের দিকটিও দেখুন। যদি পেরেকে আটকানো বা ঝুলিয়ে রাখা আয়না হয়, তাহলে সমস্যা নেই। যদি দেয়ালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে লাগানো থাকে, তাহলে একটু সাবধান হওয়াই ভালো।

৩. আলো ও অন্ধকারের পরীক্ষা

প্রথমেই ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিন। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশে চারদিকে তাকান। কিছু কিছু গোপন ক্যামেরায় ছোট এলইডি লাইট থাকে। এগুলো মিটিমিটি জ্বলে বা উজ্জ্বল দেখায়। এ রকম কিছু থাকলে আপনার চোখে পড়বে।
অন্ধকার ঘরেই আরেকটি পরীক্ষা করতে পারেন। লুকানো ক্যামেরার লেন্স থেকে অনেক সময় সূক্ষ্ম নীল বা বেগুনি রঙের আভা বের হয়। টর্চলাইট জ্বালালে এই আভা ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এই দুটি পদ্ধতি বেশ কার্যকরী।

৪. ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক স্ক্যান করুন

কিছু ক্যামেরা চালু রাখার জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। সাধারণত কাছের কোনো রাউটার থেকেই দেওয়া হয় এই সংযোগ। হতে পারে আপনার ও ক্যামেরায় ব্যবহৃত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক একই। সে ক্ষেত্রে মোবাইলে নেটওয়ার্ক স্ক্যানিং সফটওয়্যার ডাউনলোডে যাচাই করে দেখতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, যে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি স্ক্যান করতে চাচ্ছেন, আপনিও যেন সেটিতেই যুক্ত থাকেন। যদি দেখেন, ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের তালিকায় ‘আইপিক্যামেরা’ বা এ ধরনের নাম আছে, তাহলে এই বাসায় ক্যামেরা থাকার সম্ভাবনা আছে বলে ধরে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

৫. স্মার্টফোনের সফটওয়্যারও কাজে দেয়

ইন্টারনেটে খুঁজলেই এখন ‘হিডেন ক্যামেরা ডিটেক্টর’ (লুকানো ক্যামেরা শনাক্তকরণ) নামের অনেক অ্যাপ পাওয়া যায়। এসব অ্যাপ ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মুঠোফোনের অ্যাপ স্টোরকে ভরসা করাই ভালো। ওয়াইফাই স্ক্যানিং, ব্লুটুথ স্ক্যানিং, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিসহ একাধিক কৌশল খাটিয়ে এই অ্যাপগুলো কাজ করে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই লুকিয়ে রাখা ক্যামেরা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।

সূত্র: সিএনবিসি, টাইমস নাউ, ফক্স নিউজ

আরও পড়ুন