ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসা শুরুর আগেই যা করতে হবে
ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে ক্যানসার রোগীদের এই চিকিৎসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা কিংবা তাঁদেরকে তথ্য দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে রোগী তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন, পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁর জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। ক্যানসারের চিকিৎসার বেদনাদায়ক ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য রোগীর মানসিক প্রস্তুতি ও জ্ঞান থাকা দরকার, তা না হলে এই চিকিৎসা সফল হবে না।
পরিবারে কারও ক্যানসার হলে চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগী ও তাঁর স্বজনদের যা জানতে হবে—
১. রোগের বিস্তারিত অবস্থান, ধরন ও পর্যায় বা স্টেজ সম্পর্কে প্রকৃতভাবে জানতে হবে। পাশাপাশি এই পর্যায় নির্ধারণের গুরুত্ব ও কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হতে পারে, চিকিৎসার ফলাফল কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নেওয়া উচিত।
২. যেকোনো ক্যানসার রোগীকে তাঁর চিকিৎসার জন্য যে প্রচলিত চিকিৎসার ব্যবস্থাগুলো রয়েছে, যেমন সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। পাশাপাশি কোন চিকিৎসার কী উদ্দেশ্য এবং এই চিকিৎসাগুলোর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, চিকিৎসাকাল—এসব সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
৩. প্রতিটি চিকিৎসাব্যবস্থার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য কিংবা সামাল দেওয়ার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কেও আলোচনা করা উচিত।
৪. রোগীর চিকিৎসার জন্য সম্ভাব্য যে পরিকল্পনা বা রোডম্যাপ, তা পুরোপুরিভাবে রোগীর ও রোগীর স্বজনদের জানার অধিকার আছে।
৫. চিকিৎসা চলাকালে রোগীর চলাফেরা বা জীবনযাত্রা কেমন হবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া দরকার।
৬. রোগীর খাবারদাবার কেমন হবে, সে ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭. চিকিৎসা চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে রোগী যেন মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, সে ব্যাপারে তাঁকে সমর্থন দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিংয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।
৮. চিকিৎসা–পরবর্তী ফলোআপ যেকোনো ক্যানসার রোগীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগী যেন নিয়মিত ফলোআপ করেন, সে ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া উচিত। এমনকি সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এই ফলোআপ চলতে থাকবে।
৯. ক্যানসার একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। তাই ক্যানসার চিকিৎসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোগীর অর্থনৈতিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা উচিত। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. ক্যানসার চিকিৎসার প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবারের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করা, তাঁদের তথ্য দেওয়া, এ ব্যাপারে শিক্ষিত করা দরকার।
ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘পেশেন্ট এডুকেশন’ একটি চলমান প্রক্রিয়া। রোগ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছে জানতে যাওয়া এবং জানা রোগীর অধিকার। রোগীর কাছে সব তথ্য পরিষ্কারভাবে ও মানবিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করাও একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব। তাহলেই ক্যানসার আক্রান্ত একজন রোগী ও তাঁর পরিবারের পক্ষে এই ভয়াবহ রোগ মোকাবিলা সহজ হবে।