হাঙ্গেরিতে পড়ার সুবাদে ঘুরেছি ১৯টি দেশ
‘স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম স্কলারশিপ’–এর আওতায় বৃত্তি দেয় হাঙ্গেরি সরকার। এই বৃত্তির অধীনে টিউশন ফি লাগে না। পাওয়া যায় স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা। ২০২০ সালে স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম বৃত্তি নিয়ে মেকাট্রনিকস প্রকৌশলে স্নাতক করতে আমি আসি এখানকার ইউনিভার্সিটি অব দেব্রেসানে।
একাডেমিক ফলের পাশাপাশি আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর এই বৃত্তির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আবেদনের সময় আগ্রহপত্র (মোটিভেশনাল লেটার) লাগে। বেশ লম্বা সময় ধরে চলে প্রক্রিয়া। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি ঘোষণা আসে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচিত হলে হাঙ্গেরির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ‘টেম্পাস ফাউন্ডেশন’ থেকে আসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সব শেষে পরের বছর জুলাই মাসে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা হয়।
আমার ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক—দুই ধরনের পরীক্ষা হয়েছিল। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য শুধু লিখিত বা শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেয়। আমি যেহেতু প্রকৌশলে ভর্তি হতে চেয়েছি, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে হয়েছে। আমার যেহেতু রোবোটিকস ও অটোমেশন নিয়ে কাজ করার ভীষণ আগ্রহ, তাই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আবেদন করেছিলাম।
বৃত্তি পেয়ে যতটা ভালো লেগেছিল, তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এখানে পড়ালেখা শুরু করার পর। পাঠ্যক্রম, মূল্যায়নের ধরন, ল্যাবে কাজ করার পদ্ধতি ইত্যাদি বিবেচনায় প্রকৌশলে পড়ার পরিবেশ এখানে দারুণ। ব্যক্তিগত ই-লার্নিং পোর্টালে আমাদের সব ‘স্টাডি ম্যাটেরিয়াল’ গোছানো থাকে।
ইংরেজির পাশাপাশি হাঙ্গেরিয়ান ভাষা জানা থাকলে এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে সদ্য স্নাতকদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে ভাষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আমি এ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি বিশ্বের অন্যতম নামী গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অডিতে। স্নাতক শেষ করার আগেই অডি ও লাইমলাইটের মতো দুটি নামী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
বছরজুড়েই এখানে বিজ্ঞান সম্মেলন, হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়োজিত সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য আমরা এককালীন অনুদান পাই। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজেও দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছি। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় যুক্ততা, জাদুঘরে সংরক্ষণের কাজ, নানা ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, পরিবেশ রক্ষার মতো বিষয়ে হাতে–কলমে কাজের সুযোগ পেয়েছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ হাঙ্গেরিতে পড়াশোনার অন্যতম ভালো দিক হচ্ছে নেটওয়ার্কিং ও ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। ইউরোপের ১৯টি দেশে ঘুরেছি হাঙ্গেরিতে পড়ার সুবাদে। শেনজেন ভিসার কারণে ঘোরাঘুরির সুবিধা অনেক। এ বছর যাঁরা আবেদন করতে চান, প্রস্তুতি শুরু করে দিন এখনই।