বিমানে যেসব কাজ করলে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা বিরক্ত হন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় বিমানের ভেতর যাত্রীদের রাগারাগি বা দুর্ব্যবহারের ভিডিও। যাত্রীদের এমন আক্রমণাত্মক আচরণের মধ্যেও একটি বিষয় নজর কাড়ে খুব, সেটা হলো বিমানবালা বা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের সংযম। বিমানের ভেতর যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনাকে বাগে আনার জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ নেন তাঁরা।

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা নিজে থেকে না চাইলে তাঁদের সঙ্গে বাড়তি কথা না বলাই ভালো
ছবি: পেক্সেলস

অনেক যাত্রী আবার আগ বাড়িয়ে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বা বিমানবালাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। যাত্রীদের এই ‘সাহায্য’ কেবিন ক্রু বা ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের কাজকে আরও কঠিন করে তোলে। অনেক সময় যাত্রীদের বাড়তি উদ্দীপনায়ও বিরক্ত হন বিমানবালারা। জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন ব্যবহার বা কাজ না করলে কেবিন ক্রুদের সুবিধা হয়।

অন্য যাত্রীকে নিয়ম শেখানো

ফ্লাইটে ওঠার পর থেকেই যাত্রীদের অনেক ধরনের নিয়ম মানতে অনুরোধ করা হয়। কেউ কেউ মানেন, আবার কেউ কেউ তোয়াক্কা করেন না। পাশের যাত্রী হিসেবে অনেক সময় মনে হতে পারে, ভুলটা ধরিয়ে দিই। মনের ইচ্ছা মনেই রাখুন। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের বিষয়টি খেয়াল করতে দিন।

যেমন ধরুন, বিমান আকাশে ওড়ার আগমুহূর্তে সবাইকে মুঠোফোন বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। আপনি হয়তো বন্ধ করেছেন, কিন্তু পাশেরজন কথা বলেই যাচ্ছেন। কেউ হয়তো হাঁচি বা কাশি দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু মাস্ক পরছেন না। বিরক্ত বোধ করলেও নিজে কিছু বলবেন না। নম্রভাবে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করুন। তাঁরা সেটা কীভাবে সামাল দেবেন, তাঁদেরই সেটা নির্ধারণ করতে দিন।

বিমানের ভেতর যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনাকে বাগে আনার জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ নেন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা
ছবি: পেক্সেলস

মাথার ওপরে ব্যাগ রাখার জায়গা

মাথার ওপর নির্ধারিত জায়গায় যখন ব্যাগ রাখবেন, নিজেরটাই রাখুন। আরেকজন যদি আপনার কাছে সাহায্য চান, তাহলে সেটাও তুলে দিতে পারেন। তবে অনুমতি ছাড়া আরেকজনের ব্যাগে কখনোই হাত দেওয়া উচিত নয়।

নির্ধারিত আসনের ওপরে ব্যাগ রাখার জায়গা না থাকে, তাহলে বিমানবালাকে ডাকুন
ছবি: পেক্সেলস

কিছু খোয়া গেলে তিনি আপনাকেই দোষারোপ করবেন। এ সমস্যা সমাধানে কেবিন ক্রুরা বিরক্ত হন। যদি আপনার নির্ধারিত আসনের ওপরে ব্যাগ রাখার জায়গা না থাকে, তাহলে বিমানবালাকে ডাকুন, সাহায্য চান। তাঁরাই জায়গা বের করে দেবেন।

নিজেকেই নিজে পরিবেশন

খাবার পরিবেশনের কাজটি বিমানবালাদের কাজ। এতে করে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। খিদের চোটে খাবারের কার্ট থেকে আপনি নিজেই যদি খাবার বা পানীয় নিতে চান, তাহলে অনেকেই সেটা চাইবেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, ফ্লাইট অ্যাটেনটেন্টদের কাজ কমিয়ে দিলাম, আসলে কিন্তু ঝামেলা বাড়িয়ে দিলেন।

খাবার পরিবেশনের কাজটি বিমানবালাদের কাজ
ছবি: পেক্সেলস

কীভাবে ডাকছেন

আপনার পাশের যাত্রী হয়তো ঘুমাচ্ছেন। আপনার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন বিমানবালা। সেই মুহূর্তে আপনার কিছু প্রয়োজন। মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তাঁর হাতের কাপড়ের কোনা ধরে টান দিলেন। আপনি ভাবলেন, যাত্রী হিসেবে পাশেরজনের ঘুম ভাঙালেন না। এভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করাটা পছন্দ করেন না কেবিন ক্রুরা। অনেক যাত্রী তুড়ি মেরে বা শিস দিয়েও ডাকেন। এটাও অভদ্রতা। কেবিন ক্রুদের ডাকার জন্য আপনার মাথার ওপর যে সুইচ আছে, সেটা ব্যবহার করুন। এতে করে কাউকে বিরক্ত না করেই ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।

অনেক যাত্রী উচ্চস্বরে ডাকেন, এটা উচিত না
ছবি: পেক্সেলস

পানির বোতলটি ভরে দেওয়া

প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার না করার জন্য অনেক জায়গাতেই এখন উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল নিয়ে অনেকেই বিমানে ওঠেন। পরে সেটা ভরে নেন। সমস্যা তৈরি হয়, যখন পানির বোতলটির ওজন হয় এক লিটার বা তার বেশি। যাত্রীদের জন্য বিমানে খুব বেশি পরিমাণের পানি বহন করা হয় না। সেখানে অধিকাংশ যাত্রী যদি এভাবে বাড়তি পানি নেন, তাহলে তো মুশকিল। সুযোগ থাকলে, বিমানবন্দর থেকেই পানির বোতল ভরে নিন। এতে করে পরে বিমানবালারাও বিব্রত হবেন না।

গল্প করার জন্য ডাকা

ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টরা খুশি হন, যখন আপনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য জানতে চান। কিন্তু তাঁরা নিজে থেকে না চাইলে তাঁদের সঙ্গে বাড়তি কথা না বলাই ভালো। বিমান যখন আকাশে থাকে, তখন নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। তাঁদের অনেক কিছুই করতে হয়, যেটা আপনি জানেন না।

সমস্যায় পড়লে সমাধানও পেয়ে যাবেন, যদি কেবিন ক্রুদের সেটা জানিয়ে রাখেন
ছবি: পেক্সেলস

শুধু পাইলটকে ধন্যবাদ

যাত্রীরা যখন বিমান থেকে বিদায় নেন, তখন তাঁদের বিদায় জানানোর জন্য বিমানবালারা দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে অনেকেই ধন্যবাদ তো বলেনই না, মুখ গোমড়া করেই বের হয়ে যান। এতে কিছুটা মন খারাপ তো তাঁদের হয়ই। আরও খারাপ বোধ করেন, যখন কেউ তাঁদের উপেক্ষা করে শুধু পাইলটকে বলেন, ল্যান্ডিং ভালো হয়েছে। বিমানবালাদের কাজটা যেন উপেক্ষিত থেকে যায়।

আকাশে ভ্রমণ করার সময় আরও অনেক কিছুই করেন যাত্রীরা। বিমানবালাকে সন্তানের ময়লা ডায়াপার ধরিয়ে দেওয়া, অকারণ ডাকা, কারণ ছাড়া বাথরুমে অনেকক্ষণ অবস্থান করা, পাশের যাত্রীর সঙ্গে চিৎকার করা ইত্যাদি। অনেকেই ভুলে যান যে একজনের জন্য অনেকেই হয়তো অস্বস্তিতে পড়েন। সমস্যায় পড়লে সমাধানও পেয়ে যাবেন, যদি কেবিন ক্রুদের সেটা জানিয়ে রাখেন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট