ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছেন না তো?
ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে কেউ কেউ চিৎকার করে উঠে আতঙ্কজনক শব্দ করতে থাকেন। কেউ কেউ আবার ঘুমের মধ্যে কাঁদেন, কেউ অদৃশ্য শত্রুকে মারতে উদ্যত হন। আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যরাও অনেক সময় ঠিকঠাক কর্তব্য বুঝে উঠতে পারেন না। এমন সমস্যার বিস্তারিত জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
বাঁ কাত হয়ে ঘুমালে হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে, বাধাগ্রস্ত হয় হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ। এ জন্য দেহের কিছু অংশে রক্ত সঞ্চালন হতে পারে না। ফলে দেহের সেই অংশ অল্প সময়ের জন্য অবশ বা অকেজো হয়ে পড়ে। হাত বা পায়ের অংশে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে সেই হাত বা পা নাড়ানো যায় না। মুখের পেশিতে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে রোগী কথা বলতেও অসমর্থ হয়ে পড়তে পারেন। হৃৎপিণ্ডে চাপ দিয়ে শুয়ে থাকার ভঙ্গির পরিবর্তন হলেই ধীরে ধীরে রোগী স্বাভাবিক হয়ে যান।
এগুলো কি কোনো রোগের লক্ষণ
ঘুমের এসব সমস্যার কারণগুলো তো জানা হলো। অনেকে এসব সমস্যাকে কোনো রোগের লক্ষণ বলে মনে করেন। এমন ধারণা একেবারেই ঠিক না। তবে ঘুমের কোনো সমস্যা থাকলে কিংবা অত্যধিক মানসিক চাপে ভুগলে বারবার এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
আপনজনের করণীয়
আপনজন ঘুমের সময় এ ধরনের সমস্যায় পড়লে আপনাকে যা করতে হবে—
• কোমল স্বরে তার সঙ্গে কথা বলুন। ঘুমন্ত বা আধ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলে তাঁকে আস্তে আস্তে জাগান।
• তাঁকে ভরসা দিন। ভয় ভাঙিয়ে দিন। আলতোভাবে স্পর্শ করুন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে জড়িয়ে ধরুন। মানসিক সমর্থনটা এই সময় খুবই জরুরি।
প্রতিরোধ
• সব সময় ডান কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করুন।
• ঘুমের আগে আয়েশি সময় কাটান। বই পড়তে পারেন। তবে ভয়জাগানিয়া বই নয়। গোসল করে ঘুমাতে পারেন। পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।
• দুশ্চিন্তা কমাতে চেষ্টা করুন। নশ্বর এই পৃথিবীতে সুখী হতে কিন্তু খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
• রোজ শরীরচর্চার অভ্যাস করুন। এতে ঘুম ভালো হয়।
• বারবার কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম বা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় চিৎকার বা হাত-পা ছোড়াছুড়ির মতো ঘটনা ঘটলে আপনজনেরা ওই সময়ের খানিক আগেই তাঁকে ডেকে দিতে পারেন, যাতে কয়েক মিনিট তিনি জেগে থেকে আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। এতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার প্রবণতা কমে। একলা থাকলে নিজেই ওই সময়ের খানিক আগে ঘুম ভাঙার জন্য একটা অ্যালার্ম সেট করে নিতে পারেন।
কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে
বারবার এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে (প্যানিক অ্যাটাক) কিংবা আগেকার কোনো পীড়াদায়ক ঘটনার কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।