ডিপ্লোমা প্রকৌশলী প্রভাত যেভাবে ভারতের বৃত্তি পেলেন

অনেকের ধারণা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যায় না। কিন্তু আজকাল দেশের অনেক শিক্ষার্থীই এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। কয়েকজনের খোঁজ নিয়েছিলাম আমরা। এখানে পড়ুন প্রভাত পালের অভিজ্ঞতা।

প্রভাত পাল
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে পড়তে চেয়েছিলেন প্রভাত পালের বড় ভাই। কিন্তু নানা বাস্তবতায় সেটি আর হয়ে ওঠেনি। পরে তিনি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বড় ভাইয়ের চোখে–মুখে বিদেশে পড়তে না–পারার আক্ষেপটা সব সময়ই দেখতেন প্রভাত পাল। এই বড় ভাইয়ের কোলেপিঠেই বড় হয়েছেন প্রভাত।

ফরিদপুরের ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর বড় ভাইয়ের স্বপ্নটা পূরণের জন্যই ভিনদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজ করতে শুরু করেন প্রভাত। শুরু হয় ইংরেজির দক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা। কিন্তু যখন দেখলেন, বেশির ভাগ সুযোগই চীনকেন্দ্রিক, তখন ইংরেজির চর্চা ছেড়ে দেন। আইইএলটিএস পরীক্ষাটাও আর দেওয়া হয় না। বদলে চীনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন প্রভাত।

এই সময়ই শুরু হয় করোনা। এই মহামারির উৎপত্তিস্থল আবার চীন! পরিবার কোনোভাবেই তাঁকে চীনে পাঠাতে রাজি হলো না। সুতরাং বিকল্প খুঁজতে শুরু করেন প্রভাত। কারও কারও কাছে শুনলেন, ভারতে আইসিসিআর বৃত্তির অধীনে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের নেওয়া হয় না। হাইকমিশনে ফোন করেও পেয়েছিলেন একই রকম বার্তা। তাই ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া’ বৃত্তিই ছিল শেষ ভরসা। ইন্ড-স্যাট (ইন্ডিয়ান স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট) পরীক্ষায় পাস করার পর ভেলোর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে অফার লেটার পান প্রভাত। খবরটা শুনেই অবশ্য আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, বৃত্তির আওতায় হোস্টেল খরচ ছিল না। চার বছরের হোস্টেল ফির অঙ্কটাও বেশ বড়। এই ফি দিয়ে পড়াশোনা করা প্রভাতের পক্ষে সম্ভব নয়।

এই সময়ই অমায়া সরকারের সঙ্গে পরিচয়। অমায়াও ডিপ্লোমা। আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে ভারতে পড়তে গেছেন। অমায়ার সার্বিক সহায়তায় পরের বছর আইসিসিআর বৃত্তির জন্য আবেদন করেন প্রভাত। পেয়েও যান। এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, পদুচেরিতে পড়ছেন তিনি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বৃত্তির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন, আবাসন ফি, মাসিক স্টাইপেন্ড যেমন পাচ্ছেন, তেমনি সামার ও উইন্টার ক্যাম্পগুলোর মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় হচ্ছে। ক্যাম্পাসজীবন উপভোগ করছেন প্রভাত। ডিপ্লোমাপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ কম থাকাটা দুঃখজনক বলে মনে করেন তিনি।

ভবিষ্যৎ ভাবনা বিষয়ে প্রভাত বলেন, ‘এখান থেকে ব্যাচেলর করার পর অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে চাই। স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস আমার আগ্রহের জায়গা। এখন থেকেই যেহেতু নিজেকে সেভাবে তৈরি করছি, আশা করি আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাব।’