বিবিএ পাস শরীফুল গ্রামে ফিরে দিয়েছেন ঘোড়ার খামার
ছোটবেলা থেকেই ঘোড়দৌড়ের প্রতি আগ্রহ। কোথাও ঘোড়দৌড়ের খবর পেলেই ছুটে যেতেন শরীফুল ইসলাম। দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে দেখতেন ঘোড়ার ছুটে চলা। ২০০৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর মায়ের কাছে ঘোড়া কিনে দেওয়ার আবদার করেন। রাজি হয়ে ছেলের হাতে জমানো টাকা তুলে দেন মা। সেই টাকায় দেশি জাতের একটা ঘোড়া পালতে শুরু করেন শরীফুল। তাঁর সেই ঘোড়ার নাম ছিল ‘দুলদুল’। এরপর যখনই কোনো ঘোড়দৌড়ের খবর পেতেন, ভাড়াটে ঘোড়সওয়ারি নিয়ে তাতে নাম লেখাতেন। এভাবে জিততে থাকেন পুরস্কার।
এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হন। কিন্তু ঘোড়ার নেশা তার কাটে না। স্নাতক শেষ করে আবার ফিরে আসেন গ্রামে। চাকরি নেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে। অস্থায়ী চাকরির পাশাপাশি ২০১৪ সালে নিজের বাড়িতে ঘোড়ার খামার গড়ে তোলেন। শখের সে খামারই তিন বছর আগে বাণিজ্যিক খামারে রূপ নিয়েছে। ঘোড়া দেখাশোনার জন্য দুজন শ্রমিক রেখেছেন। শরীফুল ইসলাম সবার কাছে সঞ্জু নামে পরিচিত। তাঁর খামারের নামও ‘সঞ্জুস হর্স ফার্ম’।
ভারতের রাজস্থান, বিহার ও পাঞ্জাব থেকে ঘোড়ার বাচ্চা এনে খামার শুরু করেছিলেন শরীফুল। এখন তাঁর খামারে আছে ২৪টি ঘোড়া। শরীফুল জানান, এরা মাড়োয়ারি, সিন্ধি, নুকরাসহ বিভিন্ন জাতের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘোড়াটি ‘নুকরা’। আরব্য জাতের ঘোড়াটির গায়ের রং ধবধবে সাদা। দুরন্ত প্রাণীটিকে যাঁরা শুধু সিনেমায় দেখেছেন, তাঁরা এখন শরীফুলের খামার দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন।
আড়ালে যাঁরা কথা বলতেন, তাঁরাই এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ
স্নাতক পাস করে একজন তরুণ গ্রামে এসে ঘোড়ার খামার দেবেন, এটা যেন কেউ মেনে নিতেই পারেনি। অনেকেই হাসাহাসি করত, টিপ্পনী কাটত। শরীফুল অবশ্য জানতেন, মানুষের এই আচরণ সাময়িক। ঠিক তা-ই হয়েছে, একে একে যখন ঘোড়া বড় করে বিক্রি করতে থাকলেন, গ্রামের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে থাকল। খামার লাভজনক হওয়ায় মানুষের প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। আর এখন তো অনেক দূরদূরান্ত থেকেও লোকজন আসে শুধু খামারটা একনজর দেখতে।
বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ঘোড়া ভাড়াও দিয়ে থাকেন শরীফুল। যাঁরা ঘোড়দৌড়ে অংশ নেন, তাঁরাই সাধারণত ঘোড়াগুলোর ক্রেতা। এ ছাড়া বিত্তবান ও শৌখিন মানুষেরা আসেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ আনসার একাডেমির কাছেও ঘোড়া বিক্রি করেছেন তিনি।
শরীফুল বলেন, দেশে ঘোড়ার অনেক চাহিদা। চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর আমদানি করতে হয় কোটি কোটি টাকার ঘোড়া। এই চাহিদা মেটাতেই আমি ব্রিডিং করার চেষ্টা করছি।