চাকরি না করে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়তে চান? যে ৪ প্রশ্নের উত্তর জানতেই হবে
চাকরি চায় না বরং চাকরি দিতে চায়—বাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা। এই সময়ের তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ প্রথাগত চাকরি প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছে। রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ‘ঢাকা মেকার্স’সহ বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে গেলেই বোঝা যায়, ছোট–বড় কত কি–ই না করছে তরুণেরা। উদ্যোক্তা হওয়াটা এখন যেন এই সময়ের তরুণ বা জেন-জিয়েদের কল্যাণে ট্রেন্ডে উঠে এসেছে! উদ্যোক্তা হতে গেলে, নিজের প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে আপনার নিজের ইমেজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনার প্রতিষ্ঠানের ‘ইমেজ’ গড়াও সমান জরুরি। আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করার আগে আপনাকে কয়েকটা ধাপ পেরোতে হবে। জেনে নিতে হবে চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। কী সেগুলো, চলুন জেনে নিই।
১. গ্রাহক কারা?
আপনার প্রতিষ্ঠান যে পণ্য বা সেবা দিতে চায়, তার সম্ভাব্য গ্রাহক কারা, সেটা সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে। ‘টার্গেট অডিয়েন্স’ বা ‘টার্গেট কাস্টমার গ্রুপ’ বের করার পর সেটি কর্মীদের জানিয়ে দিন। তাতে দুই পক্ষের যোগাযোগ কৌশল তৈরি করতে সুবিধা হবে।
২. লক্ষ্য কী?
একটা প্রতিষ্ঠানের ‘মিশন, ভিশন, গোল’ নির্দিষ্ট করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর ওই প্রতিষ্ঠান কী করতে চায়, বুঝতে হবে। স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর কতটা কী অর্জিত হলো, তা নিয়মিত বিশ্লেষণ করতে হবে।
৩. ব্র্যান্ডের ইমেজ ও ‘ব্যক্তিত্বের ধরন’ কেমন?
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ব্র্যান্ডেরও নির্দিষ্ট ‘ইমেজ’, ‘ব্যক্তিত্ব’ আছে। আর ব্র্যান্ডের গ্রাহক, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ব্র্যান্ডের সঙ্গে গ্রাহকের সম্পর্ক ইত্যাদির ওপর সেটি নির্ভর করে।
৪. সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কৌশল
ভোক্তাদের সঙ্গে আপনার প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের সঙ্গে জড়িল মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক করে ফেলতে হবে। এর ভেতর পড়ে ব্র্যান্ডের লোগো, স্লোগান, ট্যাগলাইন, বিভিন্ন পণ্য ও সেবার উপস্থাপন পদ্ধতি, যোগাযোগের মাধ্যম, ছবি, ভাষা, ইমেজ ইত্যাদি।
ওপরের চারটি প্রশ্নের উত্তর ঠিক করার পর প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ ডেভেলপমেন্টে আরও যা যা করতে হবে।
১. প্রতিষ্ঠানের একটা নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করবেন। এই নীতিমালা হবে ওপরের চারটি বিষয়ের নিরিখে, সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভোক্তাদের সুবিধা মাথায় রেখে।
২. ব্র্যান্ডিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান কেবল ব্র্যান্ডিংয়ের জোড়েই ওপরে উঠে যায়। তাই ব্র্যান্ডিংকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
৩. অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে।
৪. ব্র্যান্ডের ইমেজ প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্ত, ছবি এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে তা সবচেয়ে সহজে, অনায়াসে ভোক্তা বা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়।
৫. মূলনীতির বাইরে গিয়ে কোনো অবস্থায় কিছু করা যাবে না। একান্তই যদি কিছু করতে হয়, তাৎক্ষণিকভাবে ভোক্তাদের তার যথাযথ ব্যাখ্যাও দিতে হবে।
ইমেজ তৈরিতে আরও যা যা মনে রাখবেন
১. লোগো অনেক বড় বানাবেন না। লোগো তৈরির সময় ব্র্যান্ডের ইমেজ ও সেই ইমেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রং ব্যবহার করুন।
২. কোনো প্রচারণা বা ব্র্যান্ডিং যদি ব্র্যান্ড ইমেজ বা নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে সুবিধাজনক হলেও বাদ দিন।
৩. মনে রাখবেন, আপনি যা–ই করেন না কেন, আপনার পণ্য বা সেবার মান–ই শেষ কথা। তাই কোন অবস্থায় মানে ছাড় দেওয়া যাবে না।
৪. মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবেন না। তাতে প্রথমিকভাবে আপনার প্রতিষ্ঠান কিঞ্চিৎ লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ক্রেতা বা ভোক্তার আস্থা হারাবে।
৫. তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ফলাফল আশা করবেন না। ধৈর্য ধরে সময় দিন। ফল আসবেই।
সূত্র: বিজনেস টুডে