আপনার ভেতরে কি এই লক্ষণগুলো আছে? তার মানে আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব...
জীবনে সফলতার জন্য আমাদের সবার আগে যা কিছু দরকার, তার ভেতর প্রথম দিকেই থাকবে আত্মবিশ্বাস। কীভাবে বুঝবেন আপনার সেই আত্মবিশ্বাস আছে কি না। নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে মিলিয়ে নিন, আসলেই আপনি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ নাকি এখনো কিছুটা উন্নতির অবকাশ রয়ে গেছে।
সব সময় সবাইকে খুশি করার চেষ্টা
অন্যকে সাহায্য করা আর অন্যকে খুশি করতে চাওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। মানুষকে সাহায্য করলে আপনি যেখানে সমৃদ্ধ হবেন, তেমনি সব মানুষের মনমতো চলতে গেলে আপনি আবার নিজেকেই হারিয়ে ফেলবেন। ‘পিপল প্লিজিং’ মানুষেরা অনেক সময় আমাদের সমাজে সম্মানিত হন। তবে আদতে এটা ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে একটা মানুষ কখনো তোষামুদে হয় না, কখনোই কে কী বলবে ভেবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।
কম শোনা ও বেশি বলা
অনেকেই মনে করেন, যে যত বেশি কথা বলতে পারে, সে মনে হয় তত বেশি আত্মবিশ্বাসী। আর আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু উল্টো কথাই বলেন। তাঁদের মতে, আত্মবিশ্বাসী লোকজনের ভেতর অন্যের সামনে নিজেকে প্রমাণের তাড়া থাকে না। তাই তারা অনেক বেশি শোনে, বলে কম। অল্প কথায় নিজের বক্তব্য রাখে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে স্ক্রল
না, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা মানেই আপনার আত্মবিশ্বাস নেই, এমন নয়। তবে আপনি যদি কোনো কারণ ও উদ্দেশ্য ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক স্ক্রল করতে থাকেন, এর মানে আপনার আত্মবিশ্বাস কম। কেননা, আত্মবিশ্বাসী হয়ে আপনি অঝথা এভাবে সময় নষ্ট করতেন না। শুধু তা–ই নয়, ফেসবুকের রঙিন জগতে মানুষের রংবেরঙের সাফল্যের খবর আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনি আপনাকে হতাশ আর বিষণ্ন করে তুলতে পারে।
অন্যদের ‘ছোট করে’ মজা করা
মানুষ কখন অন্যদের নিয়ে ক্রমাগত মজা করতে থাকে জানেন? যখন সে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকে না, বরং হীনম্মন্যতায় ভোগে। কাজেই আপনার মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্য থাকে, তবে আপনার আত্মবিশ্বাস কম বলে ধরে নিতে হবে।
সবজান্তা মনোভাব
সাধারণভাবে যে কম জানে, সে নিজের জ্ঞান ফলাতে সদা ব্যস্ত থাকে। অথচ নিজের মতের সঙ্গে না মিললেও অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা আত্মবিশ্বাসী মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁরা সব সময়ই নিজের কাছে থাকা সমাধানের বাইরেও আরও ভালো সমাধান গ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসহীন লোকজন আগেই সবকিছু জেনে বসে থাকে। নিজের জানার বাইরেও যে আরও কিছু আছে, এই সত্য তারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে মেনে নিতে পারে না।
ভিকটিম কার্ড খেলা
আত্মবিশ্বাস না থাকা মানুষেরা নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে ভয় পায়। নিজের দোষ স্বীকার করে না। তারা বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের ভিকটিম হিসেবে দেখিয়ে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে। সব দোষ আরেকজন বা পরিবেশ–পরিস্থিতির ওপর চাপিয়ে দেয়।
আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা প্রয়োজনের সময় যেকোনো কাজে নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু তারা তাদের পুরো জীবনটাই কাজের পেছনে ব্যয় করে ফেলে না। বরং কাজের পাশাপাশি তারা পরিবারকে সময় দেয়, বই পড়ে, সিনেমা দেখে, ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের শক্তির সুষম ব্যবহার করতে পারাটাও আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ।
অন্যের সাফল্য দেখে হিংসা করা
আত্মবিশ্বাসের অভাব শুধু যে নিজের সফল হওয়ার পথেই বাধা সৃষ্টি করে, তা নয়। বরং আত্মবিশ্বাস না থাকলে আপনি, এমনকি আপনার কাছের বন্ধুর সফলতাও সহ্য করতে পারবেন না। ক্রমাগত অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে থাকবেন। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির সব তুলনা ও প্রতিযোগিতা কেবল নিজের সঙ্গেই হয়। অন্য কারও প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি নিয়ে তাদের বিশেষ মাথাব্যথা থাকে না।
অতীত নিয়ে পড়ে থাকা
অতীতের কোনো স্মৃতি, কষ্ট বা ব্যথা বয়ে বেড়ানোর একমাত্র অর্থ হলো, আপনার বর্তমান সত্তাকে অপমান ও উপেক্ষা করা। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেন, কিন্তু নিজেকে অতীতে আটকে রেখে নিজের ভূত–ভবিষ্যৎ নষ্ট করে না।
পুরো জীবন কাজের পেছনে ঢেলে দেওয়া
আত্মবিশ্বাসী লোকজন নিজেদের কাজে খুব স্মার্ট ও দক্ষ হয়, এটা সত্য। প্রয়োজনের সময় তারা যেকোনো কাজে নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু তারা তাদের পুরো জীবনটাই কাজের পেছনে ব্যয় করে ফেলে না। বরং কাজের পাশাপাশি তারা পরিবারকে সময় দেয়, বই পড়ে, সিনেমা দেখে, ঘুরে বেড়ায়। নিজেদের শক্তির সুষম ব্যবহার করতে পারাটাও আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ।
ভুল ঠিক করে দিলে ক্ষুব্ধ হয় না
মানুষমাত্রই ভুল করে, আত্মবিশ্বাসী লোকজন এ কথা খুব ভালো করেই জানে। তাই কেউ তাদের ভুল ধরিয়ে দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয় না, বরং এটাকে তারা দেখে উন্নতির একটা সুযোগ হিসেবে। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাস না থাকলে তখন মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করতে নিরাপদবোধ করে না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট