৬৯ সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়ের এই ভাইরাল ছবিটি কি আসল

অষ্টাদশ শতকের রুশ সমাজে ধারণা করা হতো, যাঁর যত সন্তান, তিনি তত ধার্মিক, সৃষ্টিকর্তার ততই কাছের। তা ছাড়া অধিক সন্তানের মা–বাবা হওয়া সামাজিকভাবেও ছিল সম্মানজনক। সে সমাজেরই এক চাষি ফিওদর ভ্যাসিলিয়েভের প্রথম স্ত্রী ভ্যালেন্তিনা ভ্যাসিলিয়েভ। যিনি হয়েছিলেন ৬৯ সন্তানের জননী!

উইকিপিডিয়া বলছে, ভ্যালেন্তিনা ভ্যাসিলিয়েভের জন্ম ১৭০৭ সালে। মারা গেছেন ১৭৮২ সালে। তবে এ তথ্য নিয়ে সন্দেহ আছে। যাহোক, ১৭২৫–১৭৬৫ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৪০ বছরে ভ্যালেন্তিনা জন্ম দেন ৬৯টি সন্তান। এর মধ্যে ১৬ বার যমজ, ৭ বার ত্রয়ী ও ৪ বার ৪টি করে। ফলে ২৭ বার গর্ভধারণ করে মোট (৩২ + ২১ + ১৬) ৬৯ সন্তানের জন্ম দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান তিনি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে দুজন মারা যায় জন্মের পরপরই। ৬৭ জন বেঁচে ছিলেন। এতবার গর্ভধারণ করায় বয়সের তুলনায় ভ্যালেন্তিনার শরীর বেশ ভেঙে পড়েছিল।

আরও পড়ুন

রাশিয়ার মস্কোর এক সাংবাদিক প্রথম এ বিষয়ে প্রতিবেদন করার পর বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলে। রাশিয়া থেকে শুরু করে সারা বিশ্বেই ‘ভ্যাসিলিয়েভ ফ্যামিলি’ হয়ে ওঠে পরিচিত। তবে কেউ কেউ একে ‘প্রায় অসম্ভব ঘটনা’ বলে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ঘটনাটা যে সত্য নয়, তা–ও অবশ্য কেউ প্রমাণ করতে পারেননি।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বেশি সন্তানের বাবার বিশ্ব রেকর্ডটি কিন্তু ফিওদর ভ্যাসিলিয়েভের দখলে। একাধিক রুশ ঐতিহাসিকের মতে, ফিওদরের জন্ম ১৭০৭ সালে। মারা গেছেন ১৭৮২ সালে, ৭৫ বছর বয়সে। তাঁর প্রথম স্ত্রী ভ্যালেন্তিনার গর্ভে জন্ম নেয় ৬৯ সন্তান। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছয়বার যমজ ও দুবার ত্রয়ী সন্তানের জন্ম দেন। অর্থাৎ ফিওদরের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় ১৮ সন্তান। সব মিলিয়ে ফিওদর ৮৭ সন্তানের জনক।

আরও পড়ুন

এটা কি ভ্যালেন্তিনার ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক অজ্ঞাতপরিচয় নারী, ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৮৪০ সালের দিকে
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

ওপরের ছবিটি বহু বছর ধরে ভ্যালেন্তিনা ভ্যাসিলিয়েভের বলে অনলাইনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাঁর ৬৯ সন্তান জন্মদানের খবর বেরোলেই এই ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে বা আজও হচ্ছে। ভ্যালেন্তিনার মৃত্যুসাল নিয়ে সন্দেহ থাকলেও ধরে নেওয়া যায় তিনি মারা গেছেন ১৭৮২ সালে। অথচ দুনিয়ায় আলোকচিত্র বা প্রথম ছবি তোলাই হয়েছিল ১৮২৬ বা ১৮২৭ সালে। অর্থাৎ প্রথম আলোকচিত্রটি ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছিল ভ্যালেন্তিনার মৃত্যুর ৪৪ বছর পর। তাই ওপরের ছবিটি ভ্যালেন্তিনার বলে দাবি করা নিতান্তই ভুল।

তাহলে এই ছবি কার? এটি আদতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক অজ্ঞাতপরিচয় নারীর। ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৮৪০ সালের দিকে। এটি কোনো একক ব্যক্তির অন্যতম প্রাচীন আলোকচিত্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত।

এই ছবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে ২০১২ সালে
ছবি: সংগৃহীত

ওপরের ছবিটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে ২০১২ সালে। বলা হয়, এটি ভ্যালেন্তিনা ভ্যাসিলিয়েভ ও তাঁর সন্তানদের ছবি। মূলত ‘টপ ১০ লিস্টস’ নামের এক ওয়েবসাইট ছবিটির ভুল ক্যাপশন দেয়। ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট ‘স্নোপস’ বলছে, এই ছবিটি আদতে ১৯০৪ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউটাহ হিস্ট্রিক্যাল কোয়ার্টারলি’ সাময়িকীর একটি সংখ্যা থেকে নেওয়া।

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন