মাকে কষ্ট না দিতে মিথ্যা বলে যাচ্ছিলাম—‘খেয়ে নিয়েছি’

কিছু কিছু ঈদ মনে থাকে আজীবন। আমাদের অনুরোধে এমন অন্য রকম ঈদগুলোর কথাই লিখেছেন পাঠক। এখানে পড়ুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মারুফ মিয়ার লেখা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

২০২২ সালে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। কারণ, পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতাম। ঈদের ওই সময় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিল। হাতে সময় ছিল কম। তাই নির্দিষ্ট কিছু বন্ধু ও সিনিয়রদের সঙ্গেই ক্যাম্পাসেই ঈদ করি।

ঈদের দিন সকালে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে সিনিয়রদের কাছ থেকে সালামি নিই। মোট আট শ টাকা পাই। এই সালামি পাওয়ার যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। হলে ফিরে জানতে পারি, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ, যা কিছুটা হলেও ‘বাড়ির ঈদের আনন্দ’ দিয়েছিল। এরপর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হই। হঠাৎ ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র ভাই ফোন করে বলল, তিনিও ক্যাম্পাসে আছেন। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান খাওয়াতে চান। অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে মেজবান খেতে চললাম। খাওয়া আর হলো কই!

সেদিন রেস্টুরেন্টসহ চট্টগ্রামের প্রায় সব দোকানই ছিল বন্ধ। হতাশ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে দেখি, সেখানেও একই অবস্থা। ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে, আশপাশে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ।

পরিবারের গুরুত্ব কতখানি—সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম। একদিকে মা বারবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে, কী খেয়েছি, কেমন আছি। মাকে কষ্ট না দিতে মিথ্যা বলে যাচ্ছিলাম—‘খেয়ে নিয়েছি।’ বাস্তবে সকালের খাবার ছাড়া সারাদিন কিছুই খেতে পারিনি। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, ঈদ কেবল ভালো খাবার বা আনন্দের মুহূর্ত নয়, বরং এটি পরিবারের সান্নিধ্য এবং ভালোবাসার অনুভূতি, যা দূরে থাকলে আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়।

মারুফ মিয়া
ছবি: সংগৃহীত