পলিসাইথেমিয়া রক্তের একটি বিশেষ ধরনের রোগ। এই রোগে রক্তকোষের আধিক্য দেখা দেয়। এটি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার ঠিক উল্টো। অ্যানিমিয়ায় লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। পলিসাইথেমিয়ায় বেড়ে যায়! পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন ১৭.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৫.৫ গ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হলে সেটাকে পলিসাইথেমিয়া বলে গণ্য করা হয়।
দুই ধরনের কারণে পলিসাইথেমিয়া হতে পারে। অস্থিমজ্জা বা স্টেম সেলের সমস্যা থেকে হতে পারে, যাকে বলা হয় প্রাইমারি পলিসাইথেমিয়া বা পলিসাইথেমিয়া রুব্রা ভেরা। আর শরীরের অন্য কোনো অসুখের প্রতিক্রিয়ায় পলিসাইথেমিয়া দেখা দিলে তাকে বলে সেকেন্ডারি পলিসাইথেমিয়া।
আরেক ধরনের পলিসাইথেমিয়া আছে, যার নাম রিলেটিভ পলিসাইথেমিয়া। অর্থাৎ আসলে কোষের সংখ্যা বাড়েনি; কিন্তু রক্তরসের অনুপাতে রক্তকোষের সংখ্যা বাড়তি মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, মূত্রবর্ধক ওষুধ সেবক ইত্যাদি কারণে রক্তরস কমে রক্তকোষের অনুপাত বাড়তে পারে।
উপসর্গ কী
পলিসাইথেমিয়ায় রক্তকোষ বেড়ে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এতে মাথা ধরা, শ্বাসকষ্ট, চোখে কম দেখা, চুলকানি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। গরম পানিতে গোসল করলে গা বেশি চুলকায়। পলিসাইথেমিয়ায় রোগীর চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। এ জন্য এর নাম রুব্রা ভেরা। অবশ্য এশিয়ায় বাদামি ত্বকের রোগীর ক্ষেত্রে লাল হওয়ার বদলে বলতে হবে কালো হয়ে যায়। এ ছাড়া প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দেখা দেয়। রক্তের ঘনত্ব বাড়তে থাকলে বিপদও বাড়ে। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে।
রোগনির্ণয়
রক্তের ফিল্ম বা সিবিসি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে রোগটি ধরা পড়ে। হিমোগ্লোবিন ও পিসিভি বা হিমাটোক্রিটের মাত্রা দেখে প্রাথমিকভাবে রোগটি নিরূপণ করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে দেখতে হয়, সেকেন্ডারি কোনো কারণে এই রোগ হয়েছে কি না। রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে টিউমার মার্কার পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসা কী
এই রোগের চিকিৎসা তুলনামূলক সহজ। এর অন্যতম প্রধান চিকিৎসা ভেনিসেকশন। ভেনিসেকশন হচ্ছে, শিরায় সুই ফুটিয়ে রক্ত বের করে ফেলা। যেভাবে রক্তদাতাদের শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়। তবে এই রক্ত কাউকে দেওয়া যাবে না। রোগের মাত্রা ভেদে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহে একবার বা একাধিকবার ভেনিসেকশন করা যেতে পারে। ওষুধের মধ্যে আছে হাইড্রোক্সিইউরিয়া, বুসালফেন। মিউটেশন পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া গেলে টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া যায়।
থেরাপি হিসেবে রুক্সলিটিনিব গ্রুপের ওষুধ দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এই গ্রুপের ওষুধ তৈরি হচ্ছে। প্রাইমারি পলিসাইথেমিয়ার রোগী নিয়মমাফিক চিকিৎসা নিলে ও নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে অনেক দিন ভালো থাকতে পারে। ৫ শতাংশ রোগী পরবর্তী সময়ে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। ২০-৩০ শতাংশ রোগী মাইলোফাইয়াব্রোসিস নামক একধরনের মজ্জার জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সেকেন্ডারি পলিসাইথেমিয়ার ক্ষেত্রে মূল রোগের চিকিৎসা করলে পলিসাইথেমিয়াও ভালো হয়ে যায়৷
ডা. গুলজার হোসেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল