পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। শিকড়ের টানে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে প্রিয়জনের কাছে ছুটছে। শিশু, বয়স্ক ও রোগীদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা কঠিন। আসুন জেনে নিই কী কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে আমাদের এই ঈদযাত্রা নিরাপদ আর নির্বিঘ্ন হবে।
পরিধেয় পোশাক
হালকা আরামদায়ক, সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক পরিধান করুন। যাত্রার সময় নরম জুতা বা কেডস পরা ভালো।
একেবারে নতুন জুতা পরিয়ে রওনা দেওয়া যাবে না। এতে পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। সঙ্গে হাতব্যাগে আরেক সেট জামা রাখা উচিত, যাতে বমি হলে বা নোংরা হলে পাল্টানো যায়।
খাবার নিয়ে সতর্কতা
ঘরে তৈরি খাবার ও পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর বিশুদ্ধ পানি পান করতে উৎসাহিত করুন। এই সময়ে খাবার ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাইরের খাবার, ফলের জুস, চিপস, চকলেট ইত্যাদি বাচ্চাদের খেতে দেবেন না।
প্রয়োজনীয় ওষুধ
কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, ডায়রিয়ার খাওয়ার স্যালাইন, সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, পেটব্যথা, গ্যাসের জন্য ওমিপ্রাজল বা অ্যান্টাসিড ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। এ ছাড়া তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক মলম সঙ্গে রাখুন।
মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের ফোন নম্বর ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। শিশুদের বিভিন্ন মেয়াদি অসুখ যেমন বাতরোগ, অ্যাজমা বা অ্যালার্জি রোগে ভুগছে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে একদম ভুলবেন না।
যানবাহনের সতর্কতা
খেয়াল রাখুন যেন শিশু জানালা দিয়ে মাথা বা হাত বের করে না রাখে। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে উঠতে চেষ্টা করবেন না। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। শিশুরা জানালার পাশে বসলে অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ভ্রমণের ঠিক পরেই আক্রান্ত হয় সর্দি-জ্বর অথবা সাধারণ কাশিতে।
মোশন সিকনেস
অনেক শিশু বাসে বা যানবাহনে উঠলে বমি ভাবে আক্রান্ত হয় বা বমি করে, সঙ্গে মাথা ঘোরাও থাকতে পারে। একে বলে মোশন সিকনেস। অটোসিল অথবা স্টিমিটিল জাতীয় ওষুধ ভ্রমণের আধা ঘণ্টা আগে খাওয়ালে এই অসুবিধা থেকে আরাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাস ট্রেনে চলাচলের সময় শিশুদের চোখ বন্ধ করে রাখলে অথবা ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এই অসুবিধা টের পাওয়া যায় না।
বিপদ-আপদ
জরুরি প্রয়োজনে পরিচিত চিকিৎসক ও পুলিশের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুন। অসুস্থ অথবা কোনো বিপদে পড়লে যেকোনো সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ও বিপদের সময় পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন।
পুলিশের সাহায্য নিতে যেকোনো জায়গা থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন। অজ্ঞান পার্টি থেকে সাবধান থাকবেন। যাত্রাপথে অপরিচিত কেউ খাবার বা পানি দিলে খাবেন না। শিশুকেও এ বিষয়ে বলে রাখুন। যাত্রাপথে মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীর আনাগোনা থেকে সতর্ক থাকুন। গ্রামে বেড়াতে গেলে আশপাশে পুকুর থাকলে শিশুকে চোখে চোখে রাখুন। কখনোই একা ছাড়বেন না।
অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন: শিশু বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা