যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ১০ প্রশ্নের উত্তর

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান দেশের বহু শিক্ষার্থী। নানা বিচিত্র বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে সে দেশে। আছে বেশ কিছু বৃত্তিও। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা–বিষয়ক ১০টি আলোচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।

ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা।
ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

১. স্নাতকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ কেমন?
স্নাতক পর্যায়ে পড়ার জন্য বেশ বিস্তৃত ও নানা আঙ্গিকের সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির বিভিন্ন কমিউনিটি কলেজে দুই বছরের অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রির আবেদন করা যায়। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিষয়ে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্যও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইএমকে সেন্টারের উচ্চশিক্ষা–বিষয়ক বিভাগ এডুকেশনইউএসএর আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর রুহুল আমিন বলেন, ‘এসএটি ও টোয়েফল পরীক্ষার নির্ধারিত স্কোরের মাধ্যমে এসব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও স্নাতক পর্যায়ের আবেদনে স্যাট (স্কলাসটিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট বা এসএটি) পরীক্ষার স্কোর ভূমিকা রাখে। বিষয়ভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার সনদ হিসেবে স্যাট স্কোর জমা দিতে হয়।’

আরও পড়ুন

২. যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার জন্য কী ধরনের বৃত্তি আছে?
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের তুলনায় স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তির সংখ্যা কম। রুহুল আমিন বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুসারে তহবিল দেওয়া হয়। অর্থাৎ কেউ তাঁর আর্থিক অবস্থা, আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তা যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে পারলে সেসবের ভিত্তিতে বৃত্তির সুযোগ আছে। অন্যদিকে, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়।’ বেশির ভাগ পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফান্ডিং পাওয়া যায় নিয়মিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর বৃত্তি ফুলব্রাইট স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই এ কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। এ ‍বৃত্তির মাধ্যমে পূর্ণ অর্থায়ন পাওয়া যায়। কর্মসূচির আওতায় স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পান।

৩. ফুলব্রাইট কর্মসূচিতে আবেদনের জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস, সোশ্যাল সায়েন্সেস, হিউম্যানিটিজ, বিজনেস, ইকোনমিকস, পাবলিক পলিসি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, আরবান প্ল্যানিং, দ্য আর্টস, সাইকোলজি ও সিকিউরিটি স্টাডিজ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনে ফুলব্রাইট বৃত্তি দেওয়া হয়। আবেদনের জন্য সাধারণত টোয়েফলে ন্যূনতম ৯০ অথবা আইইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ৭ স্কোর থাকতে হয়। ঢাকার আমেরিকান দূতাবাসের আমেরিকান সেন্টার থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। ওয়েবসাইট: https://foreign.fulbrightonline.org/apply

৪. ব্যবসা, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও আইনে পড়াশোনার সুযোগ আছে?
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বৃত্তি, অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্টশিপসহ নানা আর্থিক সুযোগ-সুবিধাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইলর্ড কলেজ অব জার্নালিজম অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশনের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরান হাসনাত জানান, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের ফান্ডিং, পড়াশোনা ও গবেষণার সুযোগ বেশি থাকে। সুযোগ বেশি থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হারও বেশি। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা বা আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় পড়তে আসছেন।
এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসনে এমবিএ পড়ার সুযোগ পান অনেক শিক্ষার্থী। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়েছেন, সে বিষয়েই যে স্নাতকোত্তর করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ইচ্ছা কিংবা সুযোগ থাকলে আপনার কোর্স ও বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একই অনুষদের অন্যান্য বিষয়ে পড়ার আবেদন করতে পারেন। যেমন আপনি যদি আইনে পড়েন, তাহলে ক্রিমিনোলজি, আন্তর্জাতিক আইনে মাস্টার্স বা পিএইচডির সুযোগ খুঁজতে পারেন।

৫. আইইএলটিএস না টোয়েফল, কোনটি বেশি কার্যকর?
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আবেদনে ভাষা দক্ষতার সনদ জমা দেওয়া নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদনের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে। এডুকেশনইউএসএর আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর রুহুল আমিন বলেন, টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ) পরীক্ষাটি ইংরেজি যাঁদের মাতৃভাষা নয়, এমন শিক্ষার্থীদের জন্য। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরের যেকোনো সময় এ পরীক্ষা দেওয়া যায়। বিদেশে ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন, ভিসার আবেদন ছাড়াও চাকরির জন্য টোয়েফল সনদ প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) স্কোর বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আইইএলটিএস ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। ভাষা দক্ষতার সনদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনপত্রের সঙ্গে একাডেমিক আইইএলটিএস সনদ জমা দিতে হয়।

৬. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানভেদে জীবনযাত্রার ব্যয় একেক রকম। টেক্সাস, অ্যারিজোনা, ওকলাহোমার মতো স্টেটগুলোয় জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম। অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি বা জনবহুল স্টেটে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বেশি হয়।

আরও পড়ুন

৭. কেউ বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে খরচ কেমন?
বৃত্তি ছাড়া পড়ার সুযোগ আছে, কিন্তু সেটি বেশ ব্যয়বহুল। স্নাতক পর্যায়ে পড়তে গেলে ন্যূনতম ২০ হাজার ডলার (প্রায় ১৯ লাখ টাকা) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে হলে ন্যূনতম ১৭ হাজার ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা) খরচ হতে পারে। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সহশিক্ষা কার্যক্রম কিংবা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা হারে বৃত্তি দিয়ে থাকে। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ, গবেষণাপত্র প্রকাশ, সম্মেলনে অংশগ্রহণ, বিতর্কচর্চা, ইন্টার্নশিপ বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার বৃত্তি পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

৮. জিআরই পরীক্ষা দিলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে?
জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনস) পরীক্ষাটি মূলত স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেতে জিআরই পরীক্ষায় ভালো স্কোর বেশ কাজে আসে। সাধারণ জিআরই পরীক্ষা ছাড়াও ছয়টি বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক জিআরই পরীক্ষা নেওয়া হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, কানাডাসহ অনেক দেশের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, পিএইচডি গবেষণায় ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর প্রয়োজন।

৯. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ আছে কি?
আছে। রুহুল আমিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীরা ২০ ঘণ্টা ‘অন ক্যাম্পাস’ কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং কর্মসূচির আওতায় পড়া শেষে ডিগ্রি–সংশ্লিষ্ট খাতে এক বছর কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন। কেউ যদি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও গণিতসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়েন, তাহলে তিনি এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় তিন বছর কাজের অনুমতি পেতে পারেন।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, বৃত্তি ও কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানার ওয়েবসাইট:
https://www.ou.edu/admissions/affordability/scholarships
https://www.finaid.txstate.edu/scholarships/international.html
https://www.usd.edu/Admissions-and-Aid/Financial-Aid/Types-of-Aid/Scholarships
https://www.ohio.edu/admissions/tuition/international-scholarships
https://www.k-state.edu/isss/resources/scholarships_kstate.html

১০. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করে সে দেশে চাকরি পাওয়া সুযোগ কেমন?
ইমরান হাসনাত জানান, বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির নানা সুযোগ আছে। এ ছাড়া পড়ালেখা ও গবেষণায় ভালো করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার পাওয়া যায়