‘চাকরির কারণে ঠিকঠাক ডায়েট করতে পারছি না’
ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ।
প্রশ্ন: আমি একজন পুরুষ। আমার বয়স ২৭ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। ওজন ৭৫ কেজি। সম্প্রতি আমি জিমে ভর্তি হয়েছি। তবে চাকরির কারণে ঠিকঠাক ডায়েট করতে পারছি না। ওজন কমানোর জন্য কীভাবে ডায়েট করতে পারি? আমার জন্য আদর্শ ডায়েট কী?
নাসিম রেজা, যশোর
উত্তর
আপনার প্রায় ১১ কেজি ওজন বেশি আছে। যেহেতু আপনি চাকরি করেন, সময়ের স্বল্পতা, তাই অফিসের সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমাতে হবে। এ জন্য আপনার ইচ্ছা ও আগ্রহই মুখ্য।
চমৎকার একটা পদক্ষেপ আপনি ইতিমধ্যে নিয়েও ফেলেছেন, জিম করা শুরু করেছেন। বাড়তি ওজন কমাতে হলে ব্যায়াম করতে হবে, যা আপনি জিমে করতে পারবেন। এখানে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন।
১. ওজন বেশি থাকা অবস্থায় ওয়েট লিফটিং বা এ ধরনের ব্যায়াম না করে ট্রেডমিল, কার্ডিও, সাইক্লিং, দড়ি লাফ, ক্রস ট্রেইনার বা সাঁতারজাতীয় ব্যায়াম করুন।
২. জিম ছাড়া বাকি কয়েক দিন, যেমন ছুটির দিনগুলোয় ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। অর্থাৎ সপ্তাহে সাত দিনই ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
এবার ডায়েট প্রসঙ্গ। ঠিকঠাক ডায়েট যদি মানতে না-ও পারেন, খাবারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় অন্তত মনোযোগ দিয়ে মানার চেষ্টা করুন:
১. সারা দিনের খাবার থেকে বাড়তি ক্যালরি কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। যখনই যে খাবার খাবেন, তার ক্যালরি কমানোর কিছু উপায় আছে। যেমন খাবারের ভাসা তেল ফেলে দেওয়া। যেকোনো ধরনের ভাজির তেল বোলের নিচের দিকে জমে থাকে। তাই ওপর থেকে খাবার তুলে নিন। তরকারির তেল সরিয়ে ঝোল নিন। যতটা সম্ভব ভাজা, ভুনা, মসলাদার, চর্বিজাতীয় খাবার, ডেজার্ট, শরবত, চিনি মেশানো খাবার, মিশ্র খাবার (যা অল্প পরিমাণেও উচ্চ ক্যালরি), যেমন বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ফ্রায়েড রাইস, হালিম, পুডিং, পিৎজা, পাস্তা ইত্যাদি ধরনের খাবার খাওয়া কিছুদিন বাদ রাখুন। কারণ, ভাতের তুলনায় মিশ্র খাবারের ক্যালরি প্রায় দু–তিন গুণ বেশি থাকে।
২. কোনো মিটিং বা দাওয়াতে যদি বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে, তবে কম ক্যালরির খাবারগুলো বাছাই করুন, যেমন পোলাও-বিরিয়ানির পরিবর্তে সাদা ভাত বা রুটি। একান্তই যদি এসব খাবার খেতে হয়, তাহলে পরিমাণে কম খেতে হবে। বাটার নানের পরিবর্তে তন্দুরি রুটি, কেক-মিষ্টির পরিবর্তে ফল, টক দই, লাচ্ছি, কম মিষ্টির ফালুদা, অয়েল ড্রেসিং সালাদের পরিবর্তে নরমাল সালাদ, পানীয়ের পরিবর্তে পানি, ডাবের পানি বা চিনি ছাড়া ফলের শরবত ইত্যাদি খান।
৩. মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকলে ক্ষুধা বেশি পায়, নিজের অজান্তেই বেশি খাওয়া হয়ে যায়। আর শর্করা বেশি খেলে শরীরে অবসাদ তৈরি হয়, ঘুম বেশি হয়, শরীরে আরও ক্যালরি জমতে থাকে। ফলে ওজন কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকে। তাই কখনো দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যাবে না বা খাবার না খেয়ে বা মূল খাবার বাদ দিয়ে ইউটিউবে প্রচারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাবহির্ভূত সহজলভ্য খাবার খেয়ে জাদুর মতো ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না। এসবে শারীরিক অসুস্থতাই শুধু বাড়ে।
ডায়েট সব সময়ই ব্যক্তিভিত্তিক ও আলাদা আলাদা। তাই আপনার নিজের ব্যালেন্স ডায়েট করে নিতে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।