রান্না হোক আগুন ছাড়াই
সহজে, সময় বাঁচিয়ে রান্নার জন্য রাইস কুকারের মতো অনুষঙ্গ বেশ জনপ্রিয়। রাইস কুকার ও কারি কুকারে চুলার আগুন ছাড়াই রান্না হয়। কেবল বিদ্যুৎ থাকলেই হলো। এমন অনুষঙ্গ ব্যবহারে সময় বাঁচে। কম সময়ে রান্না হয়ে গেলে জ্বালানি খরচটাও সাশ্রয় হয়। তা ছাড়া লাইনে গ্যাস থাকা না–থাকা কিংবা সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করা হলে বাড়তি খরচের ভাবনা এড়িয়ে সহজে রান্না করার জন্য কুকার দারুণ এক বিকল্প। একাধিক পরিবার একটিমাত্র রান্নাঘরে ভাগাভাগি করে কাজ করছেন, অনেক বাড়িতে এমনটাও দেখা যায়। ‘কখন ফাঁকা পাব চুলা? ফাঁকা পেলেও তখন গ্যাস থাকবে তো?’ এমন পরিস্থিতিতে রান্নাঘরে না গিয়েও নিজের ঘরে কুকারে রান্না করে নিতে পারেন চটপট।
কেবল রাইস কুকার বা কারি কুকারই নয়, ডিজিটাল মাল্টিকুকার, ইনডাকশন কুকার, ইনফ্রারেড কুকার, প্রেশার কুকার, নন-স্টিক কুকওয়্যারসহ নানা পণ্য রয়েছে বাজারে, যাতে রান্নার কাজ হয়ে গেছে অনেকটাই সহজ। দেশি ব্র্যান্ডগুলোর শোরুমে এমন নানান পণ্যের খোঁজ মিলছে। অনলাইন বিপণন মাধ্যম থেকেও এসব পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে।
রাইস কুকার, কারি কুকার
ভাত গলে গেল, নাকি শক্ত রয়ে গেল, বারবার পরখ করার ঝক্কি নেই রাইস কুকারে। ভাতের মাড় ঝরানোর ব্যাপারও নেই। নাম ‘রাইস’ কুকার হলেও কিন্তু ভাতজাতীয় খাবারের পাশাপাশি এতে তরকারিও রান্না করা যায়। আবার কারি কুকারেও তরকারির পাশাপাশি করা যায় ভাতজাতীয় খাবার। হরেক রকম রান্না তো বটেই, দুটি দিয়ে এমনকি মিষ্টান্নও করা যায়। কেবল জানতে হবে রন্ধনপ্রণালি, বুঝতে হবে পানির পরিমাপ। এসব কুকারের ব্যবহার প্রসঙ্গে এমন নানান তথ্য জানালেন রান্নাবিদ সিতারা ফেরদৌস।
রাইস কুকারে ভাতজাতীয় খাবার রান্না করার সময় পানি কমে এলে যন্ত্রটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপ কমিয়ে আনে। তাই অধিক তাপে রান্না পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকলে রাইস কুকারে ভাতজাতীয় খাবার চড়িয়ে দিয়ে ঘরের বাইরের কিছু কাজও সেরে আসা সম্ভব। ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যে ফিরে এলে গরম-গরম ভাত (কিংবা খিচুড়ি, পোলাও, বিরিয়ানি প্রভৃতি) খেতে বসে যেতে পারবেন। কারি কুকারে অবশ্য এই সুবিধাটা নেই, এতে রান্না হয়ে গেলে তখনই নামিয়ে নিতে হয়। চাল কুকারে বসানোর ২০-২৫ মিনিট আগে থেকে ভিজিয়ে রাখার বুদ্ধিটা মাথায় রাখলে কুকারেই সুন্দর, নরম ও ঝরঝরে ভাত পাওয়া যাবে।
রান্নার বাহারি আয়োজন
ওয়ালটন হোম অ্যান্ড কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার ফজলে রাব্বি খাদেম জানালেন, রান্নার কাজকে সহজ করে তোলার জন্য নানান ধরনের পণ্য বাজারে এনেছেন তাঁরা। আধুনিক জীবনধারার অংশ হয়ে ওঠা এসব পণ্য দেখতেও চমৎকার। ডিজিটাল মাল্টিকুকারে ভাত বা তরকারি রান্না ছাড়াও ভাজাজাতীয় (ফ্রায়েড) পদ তৈরি করা যায়। এতে রয়েছে ‘ডিজিটাল ডিসপ্লে’, আর সহজে এর ‘মোড’ও বদলে নেওয়া যায়। ইনডাকশন–বেজড কুকওয়্যারও আছে, যার নিচের দিকটা তৈরি করা হয়েছে ইনডাকশন কুকারে ব্যবহারের উপযোগী করে। অন্যদিকে নন-ইনডাকশন বেজড কুকওয়্যারে রান্না করা হলে ৬০ শতাংশ তেল সাশ্রয় হয়। ওয়ালটনের ইনডাকশন কুকারে আছে তাপমাত্রার সেন্সর, মাল্টি–ইন্টেলিজেন্ট কুকিং সিস্টেম এবং টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি। প্রয়োজনমতো বদলানো যায় ওয়াট। তা ছাড়া চাইল্ড লক সুবিধাও রয়েছে। ওয়ালটনের প্রেশার কুকারে রান্না হয় ৫৫ শতাংশ কম সময়ে। রাইস কুকারে চারজনের ভাত রাঁধতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। কাস্ট আয়রন কুকওয়্যারে রান্না হয় সুস্বাদু, আর এতে ব্যবহৃত ঢালাই লোহা পরিবেশবান্ধবও বটে। নন-স্টিক কুকওয়্যারে রান্না হয় সহজ। সিরামিক কোটিং কুকওয়্যার টেকে বহু বছর। ওয়ালটনের ওভেনে পাবেন গ্রিল, কনভেকশন এবং এয়ারফ্রাই সুবিধা।
সহজে সুস্বাদ
আরএফএল বেস্ট বাই উত্তর বাড্ডার শোরুম ম্যানেজার কাউসার রহমান জানালেন, তাঁদের ভিশন, ভিগো এবং টপার রাইস কুকার ও কারি কুকার বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা করলেও কুকারের কয়েল পোড়ে না, ভাত রান্নার সময় পানি ছড়িয়ে পড়ারও ভয় নেই। কারি কুকারের আকৃতি ছড়ানো, যাতে নেড়েচেড়ে খাবার রান্না করা সহজ। তা ছাড়া কারি কুকারে রান্নার পুরোটা সময় তাপমাত্রা একই রকম থাকে বলে নানান পদ চড়িয়ে দেওয়া যায় একের পর এক। তাঁদের পণ্যগুলোর বিক্রয়োত্তর সেবার জন্য কখনোই কোনো খরচ (সার্ভিস চার্জ) লাগে না। বিক্রয়ের পর এক বছর পার হয়ে গেলে শুধু নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশের মূল্য দিতে হয়। তা ছাড়া টপারের প্রেশার কুকারে রান্না হয় ৫০ শতাংশ কম সময়ে। ভিশন ও ভিগো ইনডাকশন চুলা এবং ইনফ্রারেড চুলাও রয়েছে। ইনডাকশন চুলাও সময় এবং জ্বালানিসাশ্রয়ী। ইনফ্রারেড চুলায় আবার বাসায় থাকা যেকোনো পাতিলই ব্যবহার করা যায়।
দেখেশুনে কিনে নিন
রাইস কুকার বা কারি কুকার কেনার সময় তাতে কয়টি পট বা পাত্র আছে, ভাপে রান্নার ‘সুবিধা’ আছে কি না, এসব বিষয় দেখেশুনে নিন। যেকোনো পণ্য কেনার সময়ই জেনে নিন এর সুবিধা-অসুবিধা এবং বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে।