আমার পাঠানো নতুন কম্বল সে প্রেমিককে দিয়ে দিয়েছে
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: ১১ বছর ধরে আমি সৌদিপ্রবাসী। পারিবারিকভাবে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করেছি। বিয়ের পর এক মাস দেশে কাটিয়ে ফিরে আসি। আমার স্ত্রী বয়সে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। বিয়ের পর তাকে আমি ফোন দিলেই দেখি ওয়েটিং। পরে বলে, বাপের বাড়িতে কথা বলেছে। কিন্তু আমার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে দেখি, সে আরেকজনের সঙ্গে প্রেম করে। বিয়ের পর বাসররাতে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে পছন্দ কি না? সে বলেছে, পছন্দ। কিন্তু এখন সে আরেক জায়গায় ফোনে কথা বলে। আমার পাঠানো নতুন কম্বল সে ওই ছেলেকে দিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে টাকাপয়সাও দেয়। এসব নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর সে বাপের বাড়িতে চলে গেছে। জরুরি ছুটি নিয়ে দেশে গিয়ে ১৫ দিন চেষ্টা করেও তাকে আনতে পারিনি। সে আর আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানিয়েছে। আমি তাকে ১২ ভরি সোনার অলংকার দিয়েছি। সেসবও সে ফেরত দেবে না। দেনমোহরের টাকা সৌদিতে এসে দুই মাসের মধ্যে শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু সে বলছে, কোনো গয়না দেবে না। আমি এখন সৌদিতে আছি। আমার কী করার আছে, ব্যারিস্টার আপার কাছে সেই পরামর্শ চাই।
সুজন মণ্ডল, কিশোরগঞ্জ
উত্তর: আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। প্রথমত, আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে মামলা করতে পারেন। এ ধরনের মামলাকে ‘রেসটিটিউশন অব কনজুগাল রাইটস’-এর মামলা বলে। বিনা কারণে স্ত্রী যদি আপনার থেকে আলাদা থাকেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন, তাহলে এই মামলা করা যায়। অতএব স্ত্রী যাতে আপনার প্রতি কর্তব্য পালন করেন, সেই প্রার্থনা জানিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে।
বাংলাদেশে প্রচলিত পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর অধীনে দাম্পত্য অধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক আদালতে যেতে হয়—আদালত আদেশ বা ডিক্রি জারি করতে পারেন।
দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা। আপনি যদি মামলাটি করেন, তাহলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি স্বচ্ছ মনোভাব নিয়েই আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং প্রমাণ করতে হবে যে আপনার জীবনসঙ্গী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। তবে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাকপ্রক্রিয়া সম্পন্নকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে মামলা চলে না। আর আপনার স্ত্রী যদি আপনার সঙ্গে কোনোভাবেই সংসার করতে না চান, সে ক্ষেত্রে তালাকপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন, সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিত নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকেও নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অ্যাডিসহযোগে (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) পাঠালে ভালো হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে।
দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার, যা স্বামীর ওপর আইন কর্তৃক আরোপিত একটি দায়িত্ব। মুসলিম বিয়ের অন্যতম শর্ত দেনমোহর। শর্তটি পূরণ ছাড়া কোনো বিয়ে বৈধ হতে পারে না। দেনমোহরের টাকা আপনি ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছেন।
আর স্ত্রীকে আপনি যে গয়না উপহার হিসেবে দিয়েছেন, সেটা আইনগতভাবে ফেরত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনিও যদি স্ত্রীর কাছ থেকে বিয়ের সময় কোনো উপহার পেয়ে থাকেন, সেটিও তিনি আইনগতভাবে ফেরত চাইতে পারবেন না। আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। আপনার জন্য শুভকামনা।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা
প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA