‘অমূল্য’ সম্পদ হারিয়ে গেলে কী করবেন

কোনো একটা আংটি, সাদামাটা কোনো হাতঘড়ি কিংবা ‘সামান্য’ একটা ছবিও হয়ে উঠতে পারে ‘অমূল্য’। বিশেষ ওই আংটি হয়তো কারও বিয়ের, ঘড়িটা হয়তো মৃত ব্যক্তির স্মৃতিচিহ্ন, আর ছবিটা বিশেষ কোনো মুহূর্তের কিংবা বেশ কয়েক প্রজন্ম আগের বিশেষ কোনো মানুষের। বিশেষ ওই ব্যক্তি, ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার কারণেই অন্যের কাছে ওটা সামান্য হওয়া সত্ত্বেও আপনার কাছে অমূল্য।

প্রিয় জিনিসটি হারিয়ে গেলে প্রচণ্ড এক মনখারাপের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন অনেকেই

খোঁজ, খোঁজ, খোঁজ

খুব যত্ন করে রাখার পরও বহু কিছুই তো জীবন থেকে হারিয়ে যায়। অর্থমূল্যে ‘দামি’ জিনিস যেমন হারায়, তেমনি হারাতে পারে অমন ‘অমূল্য’ সম্পদও। মনের ভুলে হারাতে পারে, বাসা বদল করার সময়ও হারাতে পারে। হারিয়ে যাওয়া সেই জিনিস খুঁজতে কত কীই–না আমরা করি! আপনি কী করেন? হারানোর আগে যেখানে ওই জিনিস শেষবারের মতো ‘আছে’ বলে জানা ছিল, সেখানটা তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেন নিশ্চয়। অন্য কোথাও ছিল বলে মনে হলে সেই জায়গাও হয়তো খুঁজে দেখেন। হয়তো চোখ বুজে ভাবেন, কোথায় শেষ দেখেছিলেন। হয়তো ঘরটাকে নিঃশব্দ করে ভাবেন পুরো বিষয়টা। খাটের নিচ, সোফার খাঁজ, এমনকি ময়লার বালতিখানাও হাতড়ে দেখেন হয়তোবা। বোধ করি, কাছের মানুষের সহায়তাও নেন। যেমনভাবে ছোট শিশু মাকে বলে, ‘আম্মু, আমার পেনসিলটা খুঁজে পাচ্ছি না!’ ঠিক তেমনিভাবেই হয়তো কোনো মানুষের সাহায্য চান, যাকে আপনি ভরসা করেন। মূল্যবান জিনিসের জন্য হয়তো থানা-পুলিশও করেন।

একটা সামান্য হাতঘড়ির মূল্য আপনার কাছে হতে পারে অমূল্য
ছবি: নকশা

না-ই যদি পান

সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও যদি জিনিসটা খুঁজে না পান, আর জিনিসটা যদি আপনার কাছে ‘অমূল্য’ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে কী করেন? অধিকাংশ মানুষই কিন্তু এমন ক্ষেত্রে প্রচণ্ড এক মনখারাপের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। জিনিসটির সঙ্গে যে স্মৃতি জড়িয়ে ছিল, তার আলোড়নে হয়তো কাতর হয়ে পড়েন। মৃত বাবার ব্যবহার্য ছোট্ট একটা জিনিস হয়তো বাবার স্পর্শ হয়েই আপনার জীবনে রয়ে গিয়েছিল। জিনিসটা হারিয়ে গেলে আপনার হয়তো মনে হবে, জীবন থেকে বাবা এবার একেবারেই হারিয়ে গেলেন। হয়তো মনে হবে, ‘আমি এ জিনিস রাখার যোগ্যই না।’ কোনো কিছু হারিয়ে গেলে নিজের ভেতর কাজ করতে পারে অপরাধবোধ। নিজেকে দোষারোপ করেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলানোটা বেশ মুশকিলের ব্যাপার হয়ে পড়ে।

বাবার ব্যবহার্য ছোট্ট একটা জিনিস হয়তো বাবার স্পর্শ হয়েই আপনার জীবনে রয়ে গিয়েছিল, সেরকম কিছু হারিয়ে গেলে মন খারাপ হয়ে যায়
ছবি: নকশা

তবু নিজেকে শান্ত রাখুন

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক জানান, এমন পরিস্থিতিতে আবেগের চেয়ে যৌক্তিক ভাবনার প্রতি বেশি জোর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। খুব কাছের মানুষের স্পর্শ জড়ানো জিনিস যদি হারিয়ে যায়, তাহলে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, ওই মানুষকে কিন্তু আপনি নিজের মধ্যেই ধারণ করেন।

চলুন নিজের মনকে শান্ত করার এমন আরও কিছু উপায় জেনে নিই—

• নিজেকে দোষারোপ করবেন না। খুব যত্নে রাখা জিনিসও হারিয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে জিনিসটি রক্ষায় আপনার চেষ্টার ঘাটতি ছিল। ঘটনাটির জন্য আশপাশের অন্য কাউকেও দোষ দেবেন না।

• ভেবে দেখুন, যে মানুষটির স্মৃতিতে আপনি কাতর হচ্ছেন, তিনি এ সময়ে উপস্থিত থাকলে নিশ্চয়ই আপনাকে মুষড়ে পড়তে দেখে বিচলিত হয়ে পড়তেন। তাঁর কথা ভেবে নিজের অন্তরের শক্তি বাড়িয়ে নিন।

• একটি সম্পর্কের সূচনা বা জীবনের বিশেষ কোনো ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে গেলেও এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি তো আজও উজ্জ্বল। আর সে কারণেই স্মৃতিচিহ্নটি হারিয়ে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না। আপনি বরং দৃঢ় চিত্তে প্রতিজ্ঞা করুন, ওই সম্পর্ককে আপনি কখনো নষ্ট হতে দেবেন না। ওই বিশেষ ঘটনার ইতিবাচকতাকে জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দেবেন না।

• বস্তুগত জগৎ থেকে হারিয়ে যেতে পারে বহু কিছুই। চাইলেও আমরা এই পৃথিবীতে সবকিছু ধরে রাখতে পারব না। কিন্তু নিজের অনুভূতিকে কখনো হারিয়ে ফেলবেন না। আপনি আপনার অনুভূতির প্রতি যত্নশীল হোন। কাছের মানুষের আদর্শ ও মূল্যবোধকেও কখনো হারিয়ে যেতে দেবেন না।