প্রথম আলো :
শুরু করতে চাই আপনার বাবাকে (কাজী মোতাহার হোসেন) নিয়ে। যদ্দুর জানি, তিনি ছিলেন নজরুলভক্ত। আপনি সেই আবহের মধ্যে কী করে রবীন্দ্রসংগীতের দিকে এলেন?
হ্যাঁ। বাবা ছিলেন নজরুলভক্ত। নজরুলের সেই যে উদ্দাম দিনগুলো, যখন তিনি ‘বিদ্রোহী’ লিখেছেন, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে নজরুলের ভক্ত হয়েছে। কিছুকাল পরে বাবার সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হলো। বর্ধমান হাউসেই বাবার কাছে ছিলেন নজরুল। আমার বড়দি যোবায়দা মির্যা নজরুলের কোলে বসে গান শিখেছেন। সে গান বড়দি অনুষ্ঠানেও গেয়েছেন। নজরুল আমাদের পরিবারের এক বিশেষ একজন হয়ে গিয়েছিলেন।
ভোরবেলায় বাবা পায়চারি করতে করতে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতেন। রবীন্দ্রনাথের ‘যদি বারণ কর তবে গাহিব না’, ‘মম যৌবননিকুঞ্জে গাহে পাখি—’। নজরুলের গানের মধ্যে উনি কত গান যে গাইতেন! ‘ভুলি কেমনে আজো যে মনে’, ‘বসিয়া বিজনে কেন একা মনে’। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে তিনি খুব একটা ভাবেননি তখনো। বকতেন, ‘একি রে, এ রকম পেঁয়াজবেচা মুখ করে গান করিস? হাসি নেই, সহজতা নেই, এ কি ভালো?’ খুবই বকতেন।
বাবা একবার গীতবিতানটা নিয়ে বললেন, ‘দেখি তো, তোরা কী গান করিস।’ উল্টেপাল্টে দেখলেন, তারপর পুরোটা পড়ে ফেললেন। বললেন, ‘তাই তো রে! ইনিও তো ভালো লিখেছেন!’ বাবাকে একবার ওরা শান্তিনিকেতনে ডেকেছিল। কোনো একটা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষেই হয়েছিল সাহিত্য সভা। সেখানে যাওয়ার আগে উনি রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে অনেক পড়ালেখা করলেন। লেখাটাও লিখলেন খুব রসিয়ে। হিন্দু-মুসলমান বিরোধ নিয়ে। উনি বললেন, ‘জলপাই ছেড়ে কি পানিপাই বলব? জলপানি ছেড়ে কি পানিপানি বলব?’ লোকে খুব হেসেছিল। এমনি করে উনি রবীন্দ্রনাথের গানের মর্মটা বুঝলেন।
রবীন্দ্রনাথে কী করে গেলেন আপনি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হলাম। ক্লাসে সৈয়দ আলী আহ্সান রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়াতেন। সেই কবিতা পড়ে আমার মন এমন হয়ে গেল, আমি তখন রবীন্দ্রনাথের গান শিখতে চাইলাম। কিন্তু কোথায় শিখব? বাড়িতে শিক্ষক ছিলেন—সোহরাব হোসেন। তাঁর কাছে আমি অসংখ্য নজরুলগীতি, আধুনিক, পল্লিগীতি শিখেছি। রবীন্দ্রসংগীত শিখতে আমি সেগুনবাগান থেকে প্রেসক্লাবের মোড়ে এসে বাসে চড়ে আজিমপুরে হুসনা বানু খানমের কাছে যেতাম। তিনি যে স্বরলিপি থেকে আমাদের গান শেখাতেন, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। আমি গান তুলতাম খুব দ্রুত। বাড়িতে ফিরেও গানগুলো গাইতাম। মাঝে মাঝে সুর ভুলে যেতাম। মাঝরাতে সুরগুলো ফিরে আসত।
তবে আমি ম্যাট্রিক পাস করার পর যখন চাইলাম শান্তিনিকেতনে যেতে, তখন বাবা বললেন, ‘না, যেয়ো না। এখন আর সেই শান্তিনিকেতন নেই।’ আমি তাই ভাবি, তখনই তিনি বলেছেন সেই শান্তিনিকেতন নেই, এখন এত বদলে গেছে, কল্পনা করা যায় না।
প্রথম আলো :
কবে তাহলে গেলেন শান্তিনিকেতনে?
চিঠি লিখলাম শান্তিনিকেতনে। বিদ্যাভবন থেকে চিঠি দিল, আমার ভর্তি হয়ে গেছে। সে অনুযায়ী একটা সময় মাকে নিয়ে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। আমার তখন অনার্স পরীক্ষা শেষ হয় হয়। শান্তিনিকেতনে আমি একাই ঘুরে বেড়াতাম। এক বান্ধবী ছিল, অজন্তার গুহাচিত্রের মতো সুন্দরী, কেকা মুখোপাধ্যায়। আমরা দুজন কোথায় কোথায় যে যেতাম! হাঁটতে হাঁটতে রেললাইনের ধার দিয়ে প্রান্তিক রেলস্টেশন পর্যন্ত চলে যেতাম। একটা জায়গায় বসে বসে কত গল্প! ঢাকায় বাংলায় অনার্স পড়েছি। দেখা গেল, আর্টস ফ্যাকাল্টিতে আমার নম্বর সবচেয়ে বেশি। সেই সময় মহিলা সমিতি বলে বোধ হয় কিছু ছিল, তারা বলল, ফ্যাকাল্টিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর যার, তাকে আমরা স্বর্ণপদক দেব। নজরুল স্বর্ণপদক। আমি সেটা পেয়েছিলাম। ১৯৫৪ সালের কথা। শান্তিনিকেতনে এমএতেও আমার ফলটা ভালো হয়, ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলাম। আমার সে থিসিস কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বই আকারে তখনই ছাপা হয়ে যায়। আমি চাকরিতে ঢোকার আগেই। সেটা বাবা বের করেছিলেন। দেশে ফিরে এলাম। ওরা বারবার বলেছিল, ‘তুমি পিএইচডিটা করে ফেলো একবারে।’ আমার আর ভাল্লাগল না। বাড়ি ফিরে এলাম। চাকরিতে ঢুকলাম। একটু অসুবিধা হয়েছিল। এখানে অনেকেই বলছিল, শান্তিনিকেতনের ডিগ্রিটা নাকি স্বীকৃত নয়। কিন্তু খবর নিয়ে দেখলাম, ১৯৫১ সাল থেকেই এই ডিগ্রি স্বীকৃত। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনেই এটা।
ইডেন কলেজে পড়ালাম বেশ কিছুদিন। ইডেনে থাকতেই আমাদের ছায়ানট আন্দোলনটা গড়ে উঠল।
কিন্তু তার আগে তো ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি। সে বিষয়ে কিন্তু কথা বলা হয়নি...
বায়ান্ন সালে যখন ভাষা আন্দোলন হয়েছে, তখন তো মোটামুটি কাছাকাছি থেকেই জেনেছি। ২১ ফেব্রুয়ারি ক্লাসের পর বাড়ি চলে এসেছি। বিকেলবেলায় শুনলাম, গুলি হয়েছে। আজাদ পত্রিকার সান্ধ্য সংখ্যা বেরিয়েছিল। সেটায় দেখলাম, মেয়েদের একটা সভা হবে ২২ ফেব্রুয়ারি কামরুন্নেসা স্কুলের গলিতে। টিকাটুলিতে। আমার মা আমাকে নিয়ে ভয় পেতেন। আমি যাচ্ছি শুনে তিনিও আমার সঙ্গে গেলেন। পথে সেনারা পা দাপিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। মা উল্টো দিকে দৌড় দিচ্ছেন। আবার এগিয়ে যাচ্ছি। সেই সভায় আমি জীবনের প্রথম বক্তৃতা করি। আমি বলি, একুশ আমাকে ভাষা দিয়েছে। আমার মা ভয় পেয়ে পেয়ে আমার সঙ্গে গেলেন, অথচ তিনিই হলেন সেই সভার সভাপতি। সে সভায় অনেক নারীনেত্রী ছিলেন, কিন্তু রক্তপাতের আশঙ্কায় কেউই সভাপতি হতে রাজি হননি।
সে সময়েই আমরা ‘সোনার বাংলা’ গাইতাম। আন্দোলনে আন্দোলনে গাইতে গাইতেই এটা আমাদের জাতীয় সংগীত হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে এই গান গেয়েছি আমরা।
প্রথম আলো :
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে তো ছায়ানট গঠনের একটা সম্পর্ক আছে?
১৯৬১ সালে আমরা সবাই একসাথ হয়েছি রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ পালন করব বলে। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী চিঠি দিয়েছিলেন আমাকে যাওয়ার জন্য। জি সি দেবের বাড়িতে এই সভা হয়েছিল। তারপর সবাই মহড়া করছে। ডা. নন্দীর বাড়িতে রিহার্সেল হচ্ছে। আমি সেই রিহার্সেল দেখতাম। শ্যামার মহড়া দেখতাম। মাঝে মাঝে বলতাম, এই জায়গাটা এ রকম না। শ্যামা যখন প্রেমের ভাবে গান গাইছে ‘নহে নহে এ নহে কৌতুক’ তখন যে মেয়েটি নাচছে, সে খুব বিষণ্নভাবে নাচছে। বললাম, না, এটা বিষণ্ন নয়। ও একটু ছলের ভাবে ঘুরে ঘুরে নাচছে। তো, বুঝেছিল তারা কথাটা। র্যাংকিন স্ট্রিটে মোখলেসুর রহমান সিধু ভাইয়ের বাড়িতে যেতাম। সরকারি চাকরি করি, তাই ওয়াহিদুল হকের পিছনে পিছনে আমি থাকি। হঠাৎ একবার দেখা গেল, ‘চিত্রাঙ্গদা’র গান গাওয়ার কেউ নেই। বাফা থেকে ‘চিত্রাঙ্গদা’ হবে। দুদিনের নোটিশে গান তৈরি করে আমাকে গাইতে হলো। কোনো রকমে সে যাত্রা উত্তীর্ণ হলাম। এসব অনুষ্ঠানের পর সিধু ভাই বললেন, ‘চলো আমরা সবাই মিলে একটা সংগঠন গড়ি, না হলে হবে না।’ জয়দেবপুরে গিয়েছিলাম আমরা বনভোজনে। খাওয়াদাওয়া করলাম। সিধু ভাই বলে উঠলেন, আমি যেন এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হই। বললাম, সিধু ভাই, আমি সরকারি চাকরি করি, আমি পারব না। সাধারণ সম্পাদক হলেন ফরিদা হাসান, সাইদুল হাসান সাহেবের স্ত্রী।
সংগঠনটা কেমন ছিল সেই দিনগুলোতে? মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে কী করলেন?
ছায়ানটে প্রথমে শ্রোতার আসর হতো। প্রথম আসরে গাইলেন ফিরোজা বেগম। দ্বিতীয়টায় গাইল আমার বোন ফাহমিদা। এরপর বারীণ মজুমদার, ইলা মজুমদার। কখনো সেতার বাজালেন খাদেম হোসেন খান। এ রকম হয়েছে। এগুলো হওয়ার পরে একসময় অনুভব করলাম, আর বিশেষ শিল্পী নেই, যাঁদের দিয়ে গান গাওয়াব। আমি কিন্তু কখনো গাইতাম না। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা করতাম। ওয়াহিদুল হক বলে বসলেন, ‘আমরা একটা স্কুল করব।’ এ কথা সভায় পাস করানো কঠিন। হাতে তো নেই কানাকড়ি। চলে সিধু ভাইয়ের টাকায়। ওয়াহিদুল হক বললেন, ‘আমরা সবাই চাঁদা দেব।’ আস্তে আস্তে কে কত দেবেন, কথা হলো। প্রস্তাবটা পাস হয়ে গেল। এইভাবে ছায়ানট সংগীতবিদ্যায়তন হলো। সেই সংগীত বিদ্যায়তনে আমরা যে কেবল রবীন্দ্রসংগীতচর্চা করেছি, তা নয়। তত দিনে আমরা বুঝেছি, বাঙালি সংস্কৃতিটাই একটা বিপদের মুখে পড়েছে। পাকিস্তানিরা আমাদের পাকিস্তানি মুসলমান বানাতে চায়, বাঙালি বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। এটা বুঝতে পেরে আমরা আমাদের স্কুলে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নানা রকম যন্ত্র, রাগসংগীত শুরু করলাম। স্বাধীনতার পরে শুরু করলাম পল্লিগীতি। গণসংগীতেরও চর্চা করতাম। শেখ লুৎফর রহমান আমাদের এখানে এসে অনেক গণসংগীত শিখিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ মার্চের পর আমরা তো পালিয়ে ভারতে চলে গেলাম। ওখানে যাওয়ার পর আমরা কিন্তু লুৎফর ভাইয়ের শেখানো গান ‘জনতার সংগ্রাম’, ‘বিপ্লবের রক্তরাঙা’, ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’—এই গানগুলোর চর্চা করি। তারপর শিল্পী রফিকুল আলম, ওর বড় ভাই সারওয়ার জাহান এল। তখন ওরাও গান করাল। এমনি করেই পুরো দেশের রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতিকে মিলিয়ে একটা নতুন জিনিস দাঁড়াল। কলকাতায় আমরা একটা দল করেছিলাম। ‘রূপান্তরের গান’ নামে একটা গীতি আলেখ্য হয়েছিল। লিখেছিল শাহরিয়ার কবীর। জহির রায়হান ‘স্টপ জেনোসাইড’ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সে আলেখ্য অনেক পরিবর্তন হয় পরে। রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান করি। আমাদের অনুষ্ঠানে এসে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, কণিকা বন্দোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র সবাই গেয়েছেন। এই করে আমরা কিছু টাকা তুলি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে যেখানেই গান গাইতাম, সে টাকা এনে কেন্দ্রীয়ভাবে জমা দিতাম।
ছায়ানট শব্দটা শুনলেই রমনা বটমূলের কথা এসে যায়...
আমরা তো ১৯৬৭ সাল থেকেই রমনা বটমূলে অনুষ্ঠান করেছি। সে সময় তেমন বাধা পাইনি। পয়লা বৈশাখটা আমাদের সংস্কৃতিগতভাবে জাতিকে সচেতন করার একটা অনুষ্ঠান। প্রথমদিকে খুব কম লোক হতো। কিন্তু যারা আসত, তারা খুব আন্তরিকভাবে আসত।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গান করতে করতেই আমরা বুঝে গেছি, সংস্কৃতিটা ঠিক রাজনীতিনিরপেক্ষ নয়। আমরা যদিও মনে করি, সংস্কৃতিটা একটা মস্ত বড় আন্দোলন, রাজনীতির আন্দোলনটাও মস্ত বড়। তার আগে কখনো ৬ দফা কি ১১ দফা যা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি অন্তত যুক্ত হইনি। আমি একেবারেই গানের মানুষ। কখনোই রাজনীতি বুঝিনি, রাজনীতি করিনি।
প্রথম আলো :
আপনি তো ছায়ানট নিয়েই আছেন...
এখন আমার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ছায়ানট। ছায়ানটে শিশুদের স্কুলটা অভিনব। সেটা নিয়ে আমি খুব গর্বিত। আমি সে স্কুলের শিক্ষকদের পড়াই। তা ছাড়াও আমরা অনেকগুলো এভিনিউ খুলেছি এখানে। একটির নাম হচ্ছে ভাষার আলাপ। দ্বিতীয় পর্বে সাহিত্যপাঠ। আমাদের এখানে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার একটা ক্লাস থাকে। নাম দিয়েছি ‘সুরের জাদু, রঙের জাদু’। একটা পত্রিকা বের করি, ত্রৈমাসিক। ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ নামে। অনেকগুলো উৎসব করি। একটা হচ্ছে ‘দেশঘরের গান’। লোকসংগীতের উৎসব। শুদ্ধসংগীতের উৎসব। নজরুলগীতির উৎসব। রবীন্দ্রসংগীতের উৎসব। পঞ্চমটা হচ্ছে নৃত্যউৎসব। এইগুলো আমরা করে যাচ্ছি।
প্রথম আলো :
নালন্দা নিয়ে আপনার ভাবনাটা কী রকম?
২০০১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের ওপর বোমা পড়ল। এটা আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছিল। এই কষ্ট থেকেই আমরা নালন্দা বিদ্যালয় খুলি। বুঝতে পারি আমাদের দেশের মানুষই আমাদের চেতনার সঙ্গে যুক্ত নয়। দেশের মানুষকে সচেতন করতে হলে বিদ্যার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে আমাদের। জানি যে একটা স্কুল দিয়ে হয় না। তবে আশপাশে আরও অনেক স্কুল হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় এ রকম স্কুল হচ্ছে। বাংলা মাধ্যমে পড়ানো হয়। কিন্তু এখানে এমনভাবে পড়ানো হয়, যাতে বিজ্ঞানের ওপর, ইংরেজির ওপর, বাংলার ওপর জোর আছে। এ সবটা মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বিকশিত হয়। কেউ শিখিয়ে দেয় না ওদের।
প্রথম আলো :
আর কিছু?
আমরা যারা ধারণ করার চেষ্টা করেছি রবীন্দ্রনাথকে, তাদের তো মূল্যবোধটা বজায় আছে। এমনকি স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো আর তো কারও কাছ থেকে পাইনি। তিনি বলে গেছেন: ভৌগোলিক সীমানাটা আমার হলেই কি দেশ আমার হয়? হয় না। জোর করে যতই আমার স্বদেশ আমার স্বদেশ বলো, স্বদেশ তখনই তোমার হবে, যখন দেশের মানুষের কাছে তুমি যাবে। দেশের মানুষকে স্বনির্ভর করবে। তারা যখন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবে, তখনই দেশটা তোমার দেশ হবে। তোমার যত্ন দিয়ে, শ্রম দিয়ে এ দেশটাকে তোমার নিজের দেশ করতে হবে। শ্রম, সেবা, সত্য, ঐক্য, আনন্দ—গুরুসদয় দত্ত এসব কথা বলেছেন। এগুলোর ভিতর দিয়ে তিনি যে ব্রতচারী আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলো কিন্তু তিনি সাধারণ পল্লির সুর নিয়ে করেছেন। এবং পল্লির দিকে যেসব নৃত্যচর্চা আছে, শক্তির চর্চা আছে, তা নিয়ে এসেছেন। এগুলোর চর্চাও আমরা করতে চাই।
ছায়ানট নিয়ে কোনো কষ্ট কি আছে আপনার?
মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই সাধনা তো নেই। ছায়ানটের আদর্শটা কী, এটা অন্তরে কেউ কেউ নেয় না। পয়লা বৈশাখে দাঁড়িয়ে তো অনেক ভালো ভালো কথা বলি। তা দিয়ে কী হচ্ছে? কিছুই হয় না। পৃথিবীতে যা চলছে, তা চলছে। আমি তো বলি, নিজের ভিতরে শান্তি খুঁজে নিতে হয়। বাইরে পাই না।
আপনারা জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ করেছেন। সেখানে কি রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে ঠিকভাবে?
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের এ পর্যন্ত ৭৭টা শাখা হয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এতটাই ছড়িয়েছে। একবার ঢাকায়, একবার বাইরে সম্মেলন করি। এটা করে চারদিকে বেশ সাড়া পড়েছে। আমি খুব ভরসা করি, এত মানুষ যখন চর্চা করে, আসে প্রতিযোগিতায়, প্রাণপণ খেটে এক-একটা সম্মেলনকে সফল করে, তাহলে কি বলতে পারব, আমাদের দেশে মানুষ নেই?