অলিম্পিকের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদকে কী থাকে, দামই-বা কত
অলিম্পিকের মঞ্চ যেন স্বপ্নপূরণের কাঙ্ক্ষিত স্থান। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকার সঙ্গে পদক উঁচিয়ে ধরা—একজন অ্যাথলেটের জন্য এর চেয়ে বড় সম্মানের বিষয় আর কীই–বা হতে পারে? যে পদকের জন্য এত পরিশ্রম, এত প্রতীক্ষা, সেই পদকে থাকে কী? কী দিয়ে তৈরি করা হয় অলিম্পিকের পদক?
কী আছে পদকে
প্যারিস অলিম্পিকে মোট ইভেন্ট ছিল ৩২৯টি। ৩২টি ভিন্ন ভিন্ন খেলায় অ্যাথলেটদের গলায় উঠেছে ৫ হাজার ৮৪টি পদক। তবে এবারের পদক অন্যান্য অলিম্পিক পদকের চেয়ে বেশ আলাদা। এবারে পদকজয়ীরা শুধু পদক নয়, বাড়ি ফিরছেন ইতিহাসের অংশ গলায় ঝুলিয়ে। স্বয়ং আইফেল টাওয়ার স্থান পাবে তাঁদের গলায়।
১৮৯৯ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে চলেছে আইফেল টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। রক্ষণাবেক্ষণের সময় ঝুঁকিপূর্ণ লোহার ফ্রেম খুলে প্রতিস্থাপন করা হতো নতুন ফ্রেম। খুলে রাখা সেসব লোহাই এবারের অলিম্পিক পদকে স্থান পেয়েছে। এক শতাব্দী পর প্যারিসে বসেছিল অলিম্পিক। ভালোবাসার শহরে ফেরত আসা অলিম্পিককে স্মরণীয় করে রাখতে বিন্দুমাত্র কমতি রাখেনি প্যারিস। ভিলেজ, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে পদক—সব জায়গাতেই ছিল নতুনত্বের ছোঁয়া।
পদকে নতুনত্বের ছোঁয়া দিয়েছে ফরাসি জুয়েলারি কোম্পানি শুমে। আঠারো শতকে প্রতিষ্ঠিত শুমে অলিম্পিকের পদক তৈরিতে নিজেদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার ঢেলে দিয়েছে।
আইফেল টাওয়ারের লোহা থেকে অলিম্পিকের পদক
প্যারিস অলিম্পিকের প্রতিটি পদকের মাঝখানে আছে একটি লোহার ফলক। ষড়ভুজ আকৃতির ফলকটি তৈরি করা হয়েছে আইফেল টাওয়ারের লোহা থেকে। আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মাঝে অবস্থিত ফ্রান্সের মানচিত্রটা অনেকটাই ষড়ভুজ আকৃতি। সেখান থেকে অণুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করা ফলকে রয়েছে প্যারিস অলিম্পিকের লোগো আর অলিম্পিক শিখা। প্যারিসকে বলা হয় ‘সিটি অব লাইটস’। প্রতিটি পদকের নকশাতেও রয়েছে তার ছোঁয়া। প্রতিটি পদকের লোহার ফলক থেকে আলোর রশ্মির মতো ছড়িয়ে গিয়েছে কয়েকটা রেখা। প্রথম দেখায় মনে হবে, ফরাসি বিপ্লবের আগুন যেন ছড়িয়ে পড়েছে পদকজুড়ে। নকশা করার সময় ডিজাইনারদের মাথায়ও এ চিন্তা ছিল।
অলিম্পিক পদকের সামনের দিকে নতুনত্ব আনলেও উল্টো পাশে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। প্রতিবারের মতো এবারও পদকের উল্টো পাশে রয়েছে গ্রিক বিজয়ের দেবী অ্যাথেনা নাইকির প্রতিচ্ছবি। এথেন্সে নতুন করে অলিম্পিকের পুনর্জাগরণকে কেন্দ্র করে ২০০৪ অলিম্পিকের জন্য এই নকশা করেছিলেন এলেনা ভটসি, যা এখন অলিম্পিক ঐতিহ্যের অংশ।
পদকে ধাতুর পরিমাণ
অলিম্পিকের স্বর্ণপদকের ওজন ৫২৯ গ্রাম। নামে স্বর্ণপদক হলেও পদকের পুরোটাই তৈরি রুপা দিয়ে। পদকে আসল সোনার পরিমাণ মাত্র ৬ গ্রাম। গোল্ড মেডেল না বলে একে গোল্ড প্লেটিং করা মেডেল বললেও ভুল হবে না। তবে পদকের মাঝখানে রয়েছে ১৮ গ্রাম লোহা। আইফেল টাওয়ারের লোহা গলিয়ে যোগ করা হয়েছে পদকের সঙ্গে। সোনা আর রুপার পরিমাণ অনুযায়ী টাকার অঙ্কে অলিম্পিকের স্বর্ণপদকের দাম ৯৫০ ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।
রৌপ্যপদকে স্বাভাবিকভাবেই রুপার পরিমাণ একটু বেশি। ৫২৫ গ্রাম ওজনের পদকে ৫০৭ গ্রাম রুপা, বাকি ১৮ গ্রাম লোহা। এই রৌপ্যপদকের দাম ৪৮৬ ডলার বা প্রায় ৫৭ হাজার টাকা।
ওজনের দিক থেকে সবচেয়ে হালকা ব্রোঞ্জপদক। ৪৫৫ গ্রাম ওজনের পদকগুলো তৈরি হয়েছে তামা ও জিংকের সংমিশ্রণে। ৪১৫ গ্রাম তামার সঙ্গে রয়েছে ২১ গ্রাম জিংক আর ১৮ গ্রাম আইফেল টাওয়ারের লোহা তো আছেই। ব্রোঞ্জপদকের আনুমানিক মূল্য মাত্র ১৩ ডলার বা ১ হাজার ৬০০ টাকা।
মেডেলের সঙ্গে আর কী
সাধারণত পোডিয়ামে দাঁড়ালে পদকের পাশাপাশি ফুলের তোড়া দিয়ে অ্যাথলেটদের অভিবাদন জানানো হয়। প্যারিসে সেখানেও ছিল ভিন্নতা। পদকজয়ী প্রত্যেক অ্যাথলেটের হাতে ফুল নয়, তুলে দেওয়া হয়েছে একটি বাক্স, যাতে রয়েছে অলিম্পিকের অফিশিয়াল পোস্টার। এ ছাড়া পদকজয়ী অলিম্পিয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্যারিস অলিম্পিকের মাসকট ‘ফ্রেইজ’কে। সেখানে ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা আছে ‘তুমি সাহসী’।
অলিম্পিক কমিটি অফিশিয়ালি কোনো টাকা না দিলেও প্রতিটি দেশ ও ফেডারেশন নিজেদের অ্যাথলেটদের জন্য প্রাইজমানি ঘোষণা করে। তবে অলিম্পিক পদক আর সম্মানকে টাকার অঙ্কে বাছবিচার করলে ভুলই করা হবে। বছরের পর বছর ধরে অ্যাথলেটরা যে সাধনা করে যান পোডিয়ামে জায়গা করার জন্য, তার সামনে টাকার মূল্যে না মাপাই শ্রেয়।
নিলামে নামীদামি অ্যাথলেটদের পুরোনো মেডেল কোটি টাকায় বিক্রি হওয়ারও রেকর্ড আছে।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস