মা হওয়ার ৬ মাস পর এই যত্নগুলো কি নেওয়া হচ্ছে
সন্তান জন্মের পরবর্তী ছয়টি মাস মা ও সন্তানের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ছয় মাস পেরোনোর পর মা ও সন্তানের জীবনে আসে আরেক দফা পরিবর্তন। নতুন দায়িত্বের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন মা। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে যেসব পরিবর্তন এসেছিল, সেগুলোও আগের অবস্থায় ফিরতে থাকে। কর্মজীবী মা কাজেও ফেরেন এই সময়।
কাজে যাওয়ার আগে বুকের দুধ বোতলে রেখে যাওয়া কর্মজীবী মায়ের এক আলাদা দায়িত্ব। সন্তানকে পারিবারিক খাবারে অভ্যস্ত করে তোলার কাজটিও শুরু করতে হয়। সময়ের সঙ্গে বেড়ে উঠতে থাকা শিশু খেলবে, হাসবে, আধো বোলে ঘর মাতিয়ে তুলবে, হামাগুড়ি দিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে। এ সময় তার পুষ্টি, সুস্থতা এবং নিরাপত্তার দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা চাই। মা ও শিশুর জীবনের নানা ধাপের মতো এই ধাপেও তাদের দেখভালের দায়িত্ব পরিবারের বাকিদের নিতে হবে।
মায়ের যত্ন
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. ফারজানা রশীদ জানালেন এই সময়ে একজন মায়ের জন্য কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখা প্রয়োজন—
শিশুর বয়স ছয় মাস হয়ে যাওয়ার পরও মায়ের দুধের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায় না। তাই মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে রোজ। তবে ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে নিশ্চিত হয় প্রয়োজনীয় ক্যালরি। দুই থেকে আড়াই লিটার পানি বা তরল খাবার খেতে হবে রোজ। তবে পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি থাকলে, ঘাম হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে কিংবা প্রস্রাব গাঢ় হলে বা পরিমাণে কম হলে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
মায়ের রোজ অন্তত ছয় ঘণ্টা ভালো ঘুম প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ভারী কাজ বা কায়িক পরিশ্রম শিগগিরই শুরু করে দেওয়া উচিত নয়। তাতে জরায়ুর অবস্থান নেমে যাওয়া কিংবা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা–বেদনায় ভোগার আশঙ্কা থাকে। সন্তান জন্মের দেড় থেকে দুই বছর পর এ ধরনের কাজ করা যেতে পারে।
হালকা ব্যায়াম করা ভালো। হাঁটাহাঁটি, খালি হাতের ব্যায়াম, সাইকেল চালানো, সাঁতার কিংবা যোগব্যায়াম করতে পারেন মা। তবে গর্ভাবস্থায় কিংবা প্রসবের সময় (বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হলে সেই সময়) কোনো জটিলতা হয়ে থাকলে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো অসুস্থতা থেকে থাকলে সেই সমস্যার জন্য কত দিন পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে, সেটিও জেনে নিন।
আরামদায়ক পোশাক পরুন।
রোজ কিছু সময় ত্বকের যত্নে দিন।
বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় থাকা হলেও মাঝেমধ্যে নিজের জন্য হালকাভাবে সাজতে পারেন। বেশি কিছু না, চোখে লাগাতে পারেন কাজল কিংবা ঠোঁটে লিপস্টিক।
শিশুর যত্ন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান জানালেন শিশুর যত্নের নানা দিক—
৬ মাস পেরোনোর পর শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি দুই বেলা বাড়তি খাবার এবং আরও দুই বেলা নাশতা দেওয়া প্রয়োজন। আট মাস পেরিয়ে গেলে দুই বছর পর্যন্ত তিন বেলা বাড়তি খাবার এবং দুই বেলা নাশতা দেওয়া উচিত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দানাদার খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের সবার সঙ্গে বসিয়ে শিশুকে খাওয়ানো ভালো। রোজ পর্যাপ্ত পানিও খাওয়াতে হবে।
শিশুর উপযোগী সাবান বা তরল সাবান দিয়ে রোজ শিশুকে গোসল করিয়ে দিন। শীতে গোসলের আগে জলপাই তেল মাখিয়ে নেওয়া ভালো। গোসলের পর শিশুর উপযোগী লোশন লাগান।
মশারির ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
বাড়ির পরিবেশ রাখুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
পানির বালতি, গরম পানি, গরম পাতিল, চুলা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তার থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখুন।
নাকে বা মুখে আটকে যেতে পারে, এমন খেলনা বা জিনিস শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। ওষুধ এবং রাসায়নিক দ্রব্য শিশুর থেকে দূরে রাখুন।
শিশুর ত্বকে বা নখে মেকআপ সামগ্রী প্রয়োগ করবেন না। চুলে রং করাবেন না।
শিশুকে ছবির বই দেখাতে পারেন। শোনাতে পারেন তার বয়স উপযোগী গল্প বা ছড়া।
শিশু আরাম পাবে, এমন পোশাক বেছে নিতে হবে।