সেরেনা উইলিয়ামস কেন এটিএম বুথ থেকে ১০ লাখ ডলার তুলতে গিয়েছিলেন
ক্যারিয়ারের শুরুতে জয় বাদে আর কিছু ভাবতেন না বিখ্যাত মার্কিন টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। টেনিস নিয়ে তিনি এত বেশি মগ্ন ছিলেন যে খেলার পারিশ্রমিক বাবদ পাওয়া টাকাপয়সা তোলার কথাও ভুলে যেতেন বারবার। তবে সন্তানকে কখন থেকে আর্থিক বিষয়ে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন, সেসবও উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে।
পেশাদার নারী টেনিস খেলোয়াড়দের প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা উইমেন্স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২২ সালে অবসরে যাওয়ার আগপর্যন্ত ৪২ বছর বয়সী সেরেনা উইলিয়ামস প্রাইজ মানি হিসেবে পেয়েছেন ৯৪ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার ৭৩০ ডলার। নারী টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে এ পর্যন্ত সেরেনার আয়ই সর্বোচ্চ। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে টেনিসে তিনি এতই বুঁদ ছিলেন যে প্রায়ই অনেক মোটা অঙ্কের প্রাইজ মানি সংগ্রহ করতে ভুলে যেতেন! গত জুলাই মাসে ‘ফার্স্ট উই ফিস্ট’ নামের ইউটিউব চ্যানেলের ‘হট ওয়ান্স’ টক শোতে এ কথা বলেছেন স্বয়ং সেরেনাই।
সেরেনা উইলিয়ামসকে অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক শন ইভান প্রশ্ন করেন, ‘এ কথা কি সত্য, ক্যারিয়ারের শুরুতে আপনি বলতে গেলে কখনো আপনার প্রাইজ মানি সংগ্রহ করতেন না? আপনি নাকি একবার এটিএম বুথ থেকে আপনার প্রথম এক মিলিয়ন ডলার প্রাইজ মানি তুলতে গিয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি? ঘটনাটা কি সত্য?’
২৭ বছরের ক্যারিয়ারে ২৩টি গ্র্যান্ড স্লাম সিঙ্গেলসসহ মোট ৭৩টি ক্যারিয়ার সিঙ্গেলস জিতেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। শন ইভানের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যা শুনেছেন, তার সবই সত্য। আমি কখনো টাকার জন্য খেলিনি। খেলাটা ভালোবাসতাম বলেই খেলতাম...আমি সব সময় জিততে চাইতাম।’
টেনিসে সেরেনার অভিষেক ১৯৯৫ সালে। সে সময় কানাডার কুইবেক সিটিতে বেল চ্যালেঞ্জের একটি কোয়ালিফায়িং ম্যাচে তিনি হেরে জান। জানা যায়, ম্যাচটি খেলে সেরেনা পেয়েছিলেন ২৪০ ডলারের একটি চেক। ১৪ বছর বয়সী সেরেনা সেই চেক ভেঙে টাকা তোলার কোনো আগ্রহই তখন দেখাননি।
একই ঘটনা ঘটেছিল যখন সেরেনা তাঁর প্রথম মিলিয়ন ডলারের চেক পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর এ অর্জনে কাছের মানুষেরা যারপরনাই খুশি ছিলেন। কিন্তু সেরেনা চেকটা ব্যাংকে জমা রেখে আবার খেলায় মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন।
সেরেনা বলেন, ‘আমি কখনই বেশি টাকা খরচ করতাম না। (মিলিয়ন ডলারের চেক পাওয়ার পর) একটি ড্রাইভ থ্রু এটিএমে (গাড়িতে বসেই টাকা তোলা যায়, এমন এটিএম বুথ) গেলাম। বুথের ছেলেটা টাকার অঙ্ক দেখে একটু চিন্তা করে বলল, “আমার মনে হয় আপনাকে ভেতরে আসতে হবে।”’
তবে আয়রোজগার যখন বাড়তে লাগল, তখন সেরেনা বাধ্য হলেন নিজের জন্য একজন ‘ট্যাক্স কনসালট্যান্ট’ বা কর পরামর্শক নিয়োগ দিতে। পরামর্শকের অন্যতম কাজ ছিল সেরেনাকে চেক ভাঙিয়ে প্রাইজ মানি ওঠানোর কথা বারবার মনে করিয়ে দেওয়া।
সেরেনা বলেন, ‘কর পরামর্শক বলতেন, “আপনি টাকা তোলেননি?” আমি বলতাম, “ওহ্! আমি তো জুরিখে জেতা প্রাইজ মানি তুলতে ভুলে গেছি…হায় হায়! মস্কোতে যা পেয়েছিলাম, তা-ও তো তুলিনি!”’
সেরেনা আরও যোগ করেন, ‘আমি শুধু জেতার জন্যই খেলতাম। যখন হারতাম, তখন আর কিছু ভাবতেই পারতাম না। খুব রাগ হতো। শুধু ভাবতাম, কীভাবে আরও ভালো খেলা যায় আর পরেরবার জেতা যায়।’
সন্তানকে কখন থেকে আর্থিক বিষয়ে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন
আর্থিক ব্যাপারস্যাপারে সেরেনার হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম দিকেই। কিশোরী বয়সে যখন আয়রোজগার করতে শুরু করলেন, তখন তাঁর বাবা রিচার্ড উইলিয়ামস তাঁকে নিজের টাকা নিজের মতো খরচ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। গত মে মাসে ব্লুমবার্গের এক পডকাস্টে সেরেনা এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘অনেক ছোটবেলা থেকেই আমাকে অর্থ ব্যবস্থাপনার মতো জটিল একটি বিষয় শিখতে হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে কখনোই মাথা খারাপ করিনি। বাবা আমাদের নিজেদের টাকাপয়সা নিজেদের মতো খরচ করার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। পুমা কিংবা নাইকির মতো বড় কোম্পানিগুলো থেকে যখন স্পনসরশিপের প্রস্তাব আসত, তখন ওই অল্প বয়সেই আমরা আলোচনায় অংশ নিতাম।’
সেরেনা আরও বলেন, ‘আমার বয়স তখন ১৬ বছর। স্পনসরদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতেন আমার বাবা। স্পনসরদের সঙ্গে আলাপ করার সময় আমাকে সেখানে বসিয়ে রাখতেন। তিনি চাইতেন, আমি যেন সবকিছু খেয়াল করি, যাতে বড় হয়ে বুঝতে পারি, কখন কী করতে হয়। তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, আমার জন্য টেনিসের ক্ষেত্রে আয় নয়, জয়ই আসল।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছেলেবেলা থেকেই সন্তানদের আর্থিক বিষয়ে কিছু শিখিয়ে–পড়িয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের ফ্যামিলি অ্যাডভাইজরি অ্যান্ড আর্ট অ্যান্ড কালেকটিং বিভাগের প্রধান এরিক ল্যানডল্টের মতে, শিশুদের পাঁচ থেকে আট বছর বয়সের মধ্যে যদি টাকাপয়সা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়, তাহলে ১২ বছর বয়সের মধ্যেই তারা সঞ্চয়, ব্যয় ও বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো বুঝতে পারে। তারপর যখন তারা টিনএজে পা রাখে, তত দিনে অল্পস্বল্প টাকা বুঝেশুনে খরচ করা এবং জমানো শিখে যায়।
এরিক বলেন, ‘টাকাপয়সা গুছিয়ে রাখা, বুঝেশুনে খরচ করা—এসব মৌলিক দক্ষতা, যা যেকোনো পরিস্থিতিতে সবার জন্য লিখতে ও পড়তে শেখার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।’
সূত্র: সিএনবিসি