শ্বাসপ্রশ্বাসের ঠিক-বেঠিক
কেউ কেউ ভাবতেই পারেন, শ্বাসপ্রশ্বাসের আবার ঠিক–বেঠিক কী? জন্ম থেকেই তো আপনা-আপনিই আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে থাকি! কিন্তু একদল মানুষ আছেন যাঁরা সঠিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার নিয়ম শিখতে চান, সেটার চর্চা করতে চান। একসময় প্রাচ্য দর্শন এবং যোগব্যায়ামের অপরিহার্য এই চর্চা এখন দুনিয়াজুড়েই বাড়ছে। গড়ে উঠছে ‘ব্রিদিং স্কুল’ এবং ‘ব্রেদারিয়ানস ক্লাব’। প্রতিবেদনটি টিএনএন অবলম্বনে।
সঠিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, নিদ্রাহীনতা, স্থায়ী ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ত্বকের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। সঠিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাস রপ্ত করার শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা অনেক। এটা মন প্রফুল্ল রাখা এবং কটিদেশ সরু রাখার ক্ষেত্রেও সহায়ক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের যোগগুরু অভিষেক শর্মা বলেন, ‘সুস্থ থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শ্বাসপ্রশ্বাস। বেশির ভাগ মানুষই হালকাভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেন যা তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শেখা আপনার স্বাস্থ্যের দারুণ উন্নতি ঘটাতে পারে।’
দম নিন, দম ছাড়ুন
চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান স্কুল অব ব্রিদিং সৃষ্টিশীলতা এবং সুসম্পর্কের জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ম-কানুন শিখিয়ে থাকে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সুকন্যা মনে করেন, ফুসফুসের মৌলিক কর্মপদ্ধতি আয়ত্তে রাখতে পারলে মানসিক চাপ কমে, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং শরীরে অ্যাসিডের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। এ ছাড়া তা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী বেলিসা ভ্রানিচ তাঁর ব্রেথ বইয়ে লিখেছেন,‘শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম আপনাকে একটা লাল ষাঁড়ের চেয়েও বেশি শক্তিমান করে তুলতে পারে এবং ঘুমের ওষুধের চেয়ে অনেক ভালো ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে। মানুষের জানা প্রয়োজন যে, শ্বাসপ্রশ্বাসটা ঘটে পাকস্থলীতে; নাসারন্ধ্রে নয়। এ কারণেই প্রতিদিনই আপনার গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্লাস মানে আসলে ফুসফুসকে কাজ করানো শেখা। নিয়মিত চর্চায় এটা আপনার ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে মস্তিষ্ক ও শরীরে পর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ বাড়বে এবং এই পর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহের শারীরিক উপকারিতা ব্যাপক।’
শ্বাসপ্রশ্বাসের সহজ দুই চর্চা
চর্চা-১: একটা উপায় হলো দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস নেওয়া। ফুসফুস ভরে এমন লম্বা শ্বাস নিলে আপনাআপনিই প্রশ্বাসের সময়টাও বেড়ে যায়। প্রথমদিকে দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় দফায় প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন। ধীরে ধীরে এই চর্চার সময় ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সংখ্যা বাড়াতে থাকুন।
চর্চা-২: প্রাণায়ামের চর্চা করা। সহজভাবে বললে একেকবার নাকের একেক দিক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চর্চা করা। এতে মস্তিষ্কের দুদিকেই রক্তপ্রবাহ বাড়ে। প্রথমে নাকের ডান দিকের ফুটোতে আঙুল চেপে ধরে বামদিক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিন এবং একটু ক্ষণ রেখে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এবার নাকের বাম দিকের ফুটোতে আঙুল চেপে ধরে ডান দিক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিন এবং একইভাবে একটুক্ষণ রেখে শ্বাস ছাড়ুন। শুরুতে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ বার এভাবে শ্বাস নেওয়ার চর্চা করুন। ধীরে ধীরে এর সময় ও সংখ্যা বাড়াতে থাকুন।