২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বন্যার সময় ও পরে যা মানতে হবে

বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ পানির কারণে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন
ছবি: আনিস মাহমুদ

পানি নেমে যাওয়ার পরেও কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। বন্যার সময় ও পরে পানির অভাবে হতে পারে পানিশূন্যতা, আবার অনিরাপদ পানি কিংবা খাবার খেয়ে হতে পারে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো রোগ। আবহাওয়ার পরিবর্তনে দেখা দিতে পারে মৌসুমি ফ্লু। বন্যার পানি থেকে হতে পারে চর্মরোগ। এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার উপায় বাতলালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।

নিরাপদ খাবার ও পানি

নিরাপদ নলকূপ না পেলে পানি বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। ফুটতে শুরু করার পর আরও অন্তত ২০ মিনিট ধরে ফোটালে খাওয়ার উপযোগী হয় পানি। তবে আগুন জ্বালানোর সুযোগ না থাকলে বিকল্প হিসেবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করা যাবে।

ঘরের পানি নেমে গেলে প্রথমে ঘর জীবানুমুক্ত করে নিন
ছবি: প্রথম আলো
  • বিশুদ্ধ পানিতে দিনে ১-২ বার স্যালাইন কিংবা গ্লুকোজ মিশিয়ে পান করতে পারেন।

  • পচনশীল খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই পচাবাসি খাবার এড়িয়ে এই সময়ে শুকনা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

  • নিয়মমাফিক হাত পরিষ্কার রাখুন।

  • বন্যার পানির সংস্পর্শে এলে পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে শরীরের ওই অংশ ধুয়ে ফেলুন, এরপর তেল লাগিয়ে নিতে পারেন।

রোগবালাই হলে

সাধারণ জ্বর-কাশির প্রাথমিক চিকিৎসা নিন বাড়িতেই। জ্বরের রোগীর গা মুছিয়ে দিন, প্যারাসিটামল সেবন করতে দিন। কাশি-গলাব্যথা হলে উষ্ণ পানি খান। পাঁচ দিনের মধ্যে উন্নতি না হলে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা নিন। খোসপাঁচড়া বা চুলকানিতেও স্বাস্থ্যসেবা নিন।

সাবধানে রাখুন শিশুদেরও
ছবি: আনিস মাহমুদ

আরও যা মেনে চলতে হবে

ঘরে প্রবেশ করা পানি নেমে গেলেই কিন্তু ঘরটি নিরাপদ হয়ে যায় না। মেঝে, দেয়ালের নিচের অংশ এবং পানির সংস্পর্শে আসা অন্যান্য সামগ্রী জীবাণুমুক্ত ও শুষ্ক করা জরুরি। মেঝেতে দিন ব্লিচিং পাউডার কিংবা জীবাণুনাশক দ্রবণ, ধুয়ে নিন গরম পানিতে। সম্ভব হলে অন্যান্য সামগ্রী গরম পানি এবং সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিন। নইলে জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে মুছে আবার পানি দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন। কোনো জিনিসে জন্মানো ছত্রাক দূর করা না গেলে জিনিসটিই ফেলে দিতে হবে। যেকোনো রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্ক থাকুন, সেটা যেন খাবার-দাবারের সংস্পর্শে না আসে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের পর নিয়মমাফিক হাত ধুতেও ভুলবেন না। পুরোপুরি শুষ্ক না করে চুলা ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করবেন না। মশারি ব্যবহার করুন। দেখে নিন, বিছানায় বা চলার পথে কোনো সরীসৃপ আশ্রয় নিয়েছে কি না। নিরাপত্তার খাতিরে সেটিকে দূরে সরিয়ে দিন। সাপে কাটলে আহত অংশের ওপরে বাঁধন দিয়ে (খুব শক্ত করে নয়) দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিন, অবৈজ্ঞানিক কাজে সময় ব্যয় রোগীর জীবননাশের কারণ হবেন না। পানির সংস্পর্শে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি-তারের আশেপাশে না যাওয়াই ভালো। কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে শুকনা জিনিসের সাহায্যে তাঁকে উদ্ধার করুন।

পানিবন্দী জীবনে ঘর থেকেই মানুষ শুনতে পেয়েছেন পথের অসহায় কুকুরের কান্না। এমন শত শত প্রাণের সমন্বয়েই তো প্রকৃতি। দুর্যোগে নিজে নিরাপদ থাকুন, মানুষের পাশে দাঁড়ান, আর এমন অসহায় প্রাণীদের কথাও ভুলবেন না। ওদেরও দিন একটু নিরাপদ পানি, একটু খাবার আর মাথা গোঁজার ঠাঁই।