ফ্যাশন ট্রেন্ড ঠিক করে দেবে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া
সবে শুরু ২০২২। তবে সূচনা আশাব্যঞ্জক হয়নি। পশ্চিমের দেশগুলো অমিক্রনের ধাক্কায় বেসামাল। ইউরোপ ও আমেরিকায় সমানতালে বাড়ছে সংক্রমণ। এশিয়াও রয়েছে এই কাতারে। বিশ্ব আরও একবার অস্থির। এই ফাঁড়া কবে কাটবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।
করোনা সংক্রমণের কারণে গেল দুই বছরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণ এ বছরও খুব আশাব্যঞ্জকভাবে হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারছেন না বাজার বিশেষজ্ঞরা। বরং তাঁদের পরামর্শ হলো, বিনিয়োগের আগে দশবার ভাবতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। আর অর্থ ব্যয় ও নতুন বিনিয়োগের আগে সঠিক হিসাব কষে তবেই পা ফেলতে হবে।
আন্তর্জাতিক ফ্যাশনে বিলাসী সামগ্রীই হোক কিংবা আটপৌরে, এর বাজার অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটনশিল্পের ওপর। গত দুটি বছর পর্যটনে যে ভাটা ছিল, এখনো তা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। উপরন্তু নতুন থাবা বসিয়েছে অমিক্রন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী ২০২৩-২৪ সালের আগে এই শিল্পের সম্পূর্ণ ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। অতএব এই বাজার থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে সেই ঘাটতি পোষানোর উপায় হবে নতুন কৌশল নির্ধারণ। এ জন্য ক্লায়েন্টের আরও কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা, তাঁদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়াটাই হবে যৌক্তিক।
গত দুটি বছর ফ্যাশনে লাউঞ্জওয়্যার (ঘরে পরার আটপৌরে আরামদায়ক পোশাক) আর অ্যাথলেজার (সাধারণত ব্যায়াম ও অন্যান্য আটপৌরে সামাজিক কাজে পরিধেয় পোশাক) রাজত্ব করেছে। বেশি সময়ই তো কেটেছে ঘরবন্দী। তবে বাইরে বের হলেও সবাই আরামপোশাকের দিকে ঝুঁকেছেন। আটপৌরে পোশাক হয়েছে আনুষ্ঠানিক। সেখানে হয়তো কিছু মাত্রা যোগ হয়েছে। তবে এবার, অবশ্যই অমিক্রনের ধাক্কা সামলে, ফ্যাশনপ্রিয়রা নতুন করে ভাববেন। পোশাকআশাকে কিছু পরিবর্তন অবশ্যই আনতে চাইবেন। অন্তত বিশেষজ্ঞরা সেটাই ধারণা করছেন। পাশাপাশি নতুনতর যাপনের সঙ্গে মানানসই যে ধরনের পোশাক ক্রেতারা প্রত্যাশা করছেন, সেটা যেন তাঁদের সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
ফ্যাশনে মেটাভার্স (এমন এক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া ব্যবহারকারী, যেখানে কম্পিউটারসৃষ্ট জগতে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করে) এখন নতুন ফেনোমেনা। ফলে করোনাকালে অনলাইন আর ভার্চ্যুয়াল জগতের ওপর যে নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, সেখানে নতুন অনুঘটক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে মেটাভার্স। ভোক্তারা, বিশেষত বয়সে তরুণেরা ভার্চ্যুয়াল জগতে বুঁদ হয়ে থাকেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় পণ্যও তাঁরা সেভাবেই সন্ধান করেন। এখানে তাঁদের জন্য সোহাগা হবে মেটাভার্স। এই তরুণ ভোক্তাশ্রেণিকে ধরে রাখতে বিনিয়োগ করতে হবে ভার্চ্যুয়াল জগতের নতুন নতুন উদ্ভাবনীতে। যেখানে গেমিং, ফ্যাশন ইত্যাদিও বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
পাশাপাশি শপিং এখন যতটা না ফিজিক্যাল, তার চেয়ে বেশিই ডিজিটাল। ফলে সোশ্যাল শপিংকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে ব্র্যান্ডগুলোকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পরিবেশের বিষয়টাও করোনাকাল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে। ফলে টেকসই ফ্যাশন, পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি থাকবে এগিয়ে। একই সঙ্গে পণ্যের বিস্তারিত এখন জানতে চান ক্রেতারা। ফলে সেটাও ব্র্যান্ডগুলোকে জানাতে হবে। দিতে হবে সঠিক তথ্য।
অল্প সময়ে অনেকখানি বদলে গেছে ফ্যাশনের বিশ্ব। আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের চেয়ে বরং রিভেঞ্জ ফ্যাশনই (কোনো ট্রেন্ড অনুসরণ না করে, কোনো কিছু থেকে অনুপ্রাণিত না হয়ে, নিজস্ব রুচি, পছন্দ আর স্বাচ্ছন্দ্য অনুসারে পোশাক পরা) ব্যক্তির কাছে হাজির হয়েছে সবিশেষ গুরুত্ব নিয়ে। আর এই রিভেঞ্জ ফ্যাশনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে ওই ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভার্চ্যুয়াল সামাজিক সমাবেশ। বাংলাদেশের বাজারে অনলাইনে কাস্টমাইজড করে বানানো পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। এখন তাই দেশের ফ্যাশনের বাজারকে চাঙা করতে হলে ব্যক্তির দাবি বুঝে সোশ্যাল শপিংয়ের সব আয়োজনে বুটিক আর ব্র্যান্ডগুলোকে মাঠে নামতে হবে পেশাদারত্ব আর ‘ঢাল–তলোয়ার’ নিয়ে।