পোশাকে নিজস্ব ধারা তৈরি করুন

ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফ্যাশন ডিজাইনাররা l প্রথম আলো
ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ফ্যাশন ডিজাইনাররা l প্রথম আলো

প্রতিবছর এই আয়োজন—প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার আগে ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতবিনিময় সভা। মূলত এই সভা উপলক্ষ মাত্র। এটি হয়ে ওঠে নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। এবারও মিলনায়তন ভর্তি হয়ে গেল নির্ধারিত সময় বিকেল পাঁচটার আগে। প্রবীণেরা শুনিয়েছেন তাঁদের শুরুর গল্প। বাতলে দিয়েছেন বাধা ডিঙানোর মন্ত্র। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। অংশ নেন অর্ধশতাধিক ডিজাইনার।
সভায় বক্তারা বলেন, ফ্যাশন ডিজইনাররা নিজেই আইকন। তিনি কী পোশাক পরেন তা সবাই দেখে। এ জন্য ডিজাইনারকে দেশি পোশাক পরতে হবে। দাঁড় করাতে হবে নিজস্ব ধারা, যা দেখে সবাই আকৃষ্ট হবে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যে শুরু হওয়া আলোচনা পর্বে উঠে আসে দেশের ফ্যাশন জগতের নানা অধ্যায়। সেই সঙ্গে যোগ হয় চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপট। বক্তব্য দেন ফ্যাশন ডিজাইনার রওশন আরা চৌধুরী, আইভী হাসান, শিমুল খালেদ, এইচ এম ইলিয়াস, সুব্রত বড়ুয়া, লুৎফা সানজিদা, আমিনা রাহমান, নবীনদের পক্ষে রেহনুমা মরিয়ম, আবদুল্লাহ ইবনে সাঈদ, হাজেরা খাতুন, হাসিনা আকতার, ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের ফ্যাশন ডিজাইনারদের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম এটি, যা আমরা ধরে রেখেছি ১৬ বছর ধরে। তবে দেশি পোশাকের যে জোয়ার ছিল এখন তা আবার ঝিমিয়ে পড়েছে। ক্রেতারা ঝুঁকছেন ভারত, পাকিস্তান ও চীনের পোশাকের দিকে। এই আগ্রাসন ঠেকানোর এখনই সময়। এ জন্য প্রয়োজন নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ানো।’
ফ্যাশন ডিজাইনারদের মধ্যে শুরুতে বক্তব্য দেন শৈল্পিকের কর্ণধার এইচ এম ইলিয়াস। তিনি বলেন, ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করতে হবে। সাফল্য পেতে হলে এ ছাড়া উপায় নেই। তা ছাড়া একটি পোশাক তৈরির সময় মাথায় রাখতে হবে যেন এটি নিখুঁত হয়। সেলাই থেকে কাজ—সবদিকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ফ্যাশন সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে তা যেন অনুকরণ না হয়। সব দেখে নিজেরটা তৈরি করতে হবে।
ডলস হাউসের কর্ণধার আইভী হাসান বলেন, ঢাকায় এখন ফ্যাশন প্রতিযোগিতাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে বন্ধ হয়নি। প্রথম আলো এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, ‘পোশাকে মূল ফোকাস থাকবে প্যাটার্নে। প্যাটার্ননির্ভর পোশাক ভালো হয়। তাতে নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকে। তা ছাড়া ট্রেন্ড ধরে এগোতে হবে।’ সাম্প্রতিক সময়ে দেশি কাপড়ের সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সুতার দামের প্রভাব পড়ছে কাপড়ে। ফলে দেশি কাপড়ে পোশাক তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। অনেক সময় বেশি দাম দেখে ক্রেতারা আগ্রহ হারান। এ ব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি।’
রওশনসের কর্ণধার রওশন আরা চৌধুরী বলেন, ‘আগে ফ্যাশন ডিজাইনারকে দেশি পোশাক পরতে হবে। তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হবে অন্যজন। তা ছাড়া শুধু ঈদভিত্তিক না করে সারা বছর কাজ করতে হবে। যাঁদের নিজেদের ফ্যাশন হাউস নেই, তাঁরা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পোশাক দিতে পারেন, যা আপনার ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হবে।’
চারু চট্টগ্রামের কর্ণধার শিমুল খালেদ বলেন, ‘পোশাকের ডিজাইনে নতুনত্ব এখন চোখে পড়ে না। পোশাকে নতুনত্ব আনতে হবে। আসুন, সবাই মিলে দেশি পোশাকে আরেকটি বিপ্লব ঘটাই।’
অনিন্দ্যের কর্ণধার লুৎফা সানজিদা বলেন, ‘অনুকরণ বা নকল নয়, অনুসরণ করা যায়। তাও নিজস্ব স্টাইলে হতে হবে। এখন থেকেই আমরা শপথ নিই দেশি কাপড় পরব।’
নবীনেরাও দেশি পোশাকে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ঢেলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। শেষে সভার রাশ টানেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী। এবারের আয়োজনে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড ও কো-স্পন্সর রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।