অনেকে প্রয়োজন থাকার পরও বাইরে যাচ্ছেন না এখন। বাইরের কাজ যদি ঘরে বসে করা যায়, তাহলে বাইরে যাওয়ার আর কী দরকার! এই যেমন চুল–দাড়ির কথাই যদি বলি। করোনাভাইরাসের ভয়ে অনেকেই সেলুনে কম যাচ্ছেন। বিকল্প হিসেবে বাসাতেই ট্রিমার দিয়ে ছোট করছেন চুল বা দাড়ি। ট্রিমারের কারণে কাজটা সহজ হয়েছে অনেক। তাই বাজারে ছেলেদের সৌন্দর্যপণ্যের মধ্যে এখন চাহিদার দিক থেকে ওপরের দিকে অবস্থান করছে ট্রিমার।
দেশের জনপ্রিয় অনলাইন শপ দারাজের পিআর মিডিয়া কমিউনিকেশনের প্রধান সায়ন্তনী ত্বিশা জানান, ‘করোনাকালে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ট্রিমারের চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। সাধারণ সময়ের চেয়ে ছয় গুণ বেশি ট্রিমারের অর্ডার এসেছে এ বছরের মার্চের পর থেকে। অর্ডার করা প্রায় শতভাগ (৯৫ শতাংশ) ক্রেতাই পণ্যটি বুঝে নিয়েছেন।’
একই ধরনের কথা জানালেন আরও কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতারা। কিছু প্রতিষ্ঠানে চাহিদার তুলনায় ট্রিমারের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় আফসোসও করলেন।
ট্রিমারের জানা–অজানা
চুল ও দাড়ি ছাঁটার জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন ট্রিমার। অনেকে একই ট্রিমার দিয়ে দাড়ি ও চুল ছাঁটেন। সে ক্ষেত্রে চুলের জন্য উপযুক্ত ট্রিমার কেনা ভালো। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের ভিআইপি সেলুনের হেয়ার স্টাইলার রাজেশ জানালেন এ বিষয়ে, অনেকে মনে করেন, যেকোনো ট্রিমার দিয়ে দাড়ি ও চুল ট্রিম করবেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে চুলের জন্য উপযুক্ত ট্রিমার কিনতে হবে, যার সঙ্গে একাধিক মাথা যুক্ত থাকে। দাড়ি ছাঁটার ট্রিমার দিয়ে চুল কাটা ঠিক না।’
সাধারণত দাড়ি ছাঁটার ট্রিমারের মাথাগুলো নানা আকারের দাড়ির শেপ বা শেভের জন্য উপযুক্ত। তবে চুলের ট্রিমারে দাড়ি পুরো পরিষ্কার করে দিতে পারে না। কিছুটা খোঁচা খোঁচা দাড়ি রাখতে চাইলে এ ট্রিমার ব্যবহার করা যাবে। সবচেয়ে ভালো, দুই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ট্রিমার ব্যবহার করা।
বড় চুল বা বড় দাড়ি ট্রিম করার ক্ষেত্রে ক্লিপার কেনা ভালো। হেয়ার স্টাইলারদের পরামর্শ হলো, ট্রিমার কেনার সময় অল্প টাকার মধ্যে পুরো গ্রুমিং সেট না কেনাই ভালো; বরং আপনার যে কয়টি ব্লেড দরকার, সেটা বুঝে ট্রিমার কিনুন। সেই সঙ্গে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, একেক ধরনের কাজের জন্য ট্রিমারের ব্লেডও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। ব্যবহারের আগে সেটা বুঝে নিতে হবে।
পুরো ট্রিমার সেটের গ্রুমিং কিট দরকার পড়ে সাধারণত তারকাদের। এ ছাড়া যাঁরা বেশি মানুষের কাছে যাচ্ছেন, তাঁদের। আজকাল অনেকে বাসায় বসে দিনে একাধিক মিটিং বা লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাঁদের কাছে ট্রিমারের পুরো সেট থাকলে সেখান থেকে চুল, দাড়ি–মোচ ও নাকের লোম ট্রিম করার আলাদা আলাদা কিট বেছে নেওয়া জরুরি। এতে নিজেকে সহজে পরিপাটি করে উপস্থাপন সহজ হয়।
মডেল আজিম উদদৌলা নিজের দাড়ির জন্য বাসায় ট্রিমার ব্যবহার করেন নিয়মিত। তিনি বলেন, ‘যাঁরা মুখে অল্প করে দাড়ি রাখতে চান, তাঁরা ট্রিমার ব্যবহার করে সহজে কাজটি করত পারেন। উল্টো করে মুখের ত্বকে ট্রিম করা উচিত নয়। এ ছাড়া ট্রিমারও ব্যবহারের পর পরিষ্কার রাখা জরুরি।’ ব্যাটারিযুক্ত, রিচার্জেবল ও বিদ্যুতের সাহায্যে চালু করা যায়, এমন ধরনের ট্রিমার পাবেন বাজারে। কিছু ট্রিমারে শুধু শুকনা অবস্থায় ট্রিম করতে হয়, আবার কিছু ট্রিমারে পানি লাগানো নিষেধ, সেসব বুঝে নিতে হবে ব্যবহারের আগে।
যেখানে পাবেন
অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, ওয়ালটন, দারাজ ডটকম, প্রিয়শপ, পিকাবো, আজকের ডিল, শপার্স বিডি, শেভারশপ, অথবা ডটকম ইত্যাদি। এ ছাড়া স্বপ্ন, মীনা বাজার, আগোরা, ইউনিমার্ট, মোস্তফা মার্ট, আলমাসসহ বিভিন্ন দোকানে।
কোনটা কিনবেন
বাজারে অনেক ধরনের ট্রিমার আছে। ব্র্যান্ড ও সুবিধাভেদে দামও নানা রকম। ৪০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম আছে ট্রিমারের। আপনার বাজেট যদি এক হাজার টাকার মধ্যে হয়, তাহলে আপনি কিনতে পারেন এইচটিসি, নোভা বা কেমির একাধিক মডেলের ট্রিমার। এ ছাড়া কেএম ৯০২০, জেওয়াই সুপারসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের ট্রিমার পাবেন এ দামে। তবে কম টাকার ট্রিমার খুব বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে না। বাজেট যদি দুই হাজার থেকে চার হাজারের মধ্যে হয়, তাহলে বেশ ভালো মানের ট্রিমার পাবেন বাজারে। এর মধ্যে আছে ফিলিপস, ব্রাউন, প্যানাসনিক, ওয়ালটন ইত্যাদি ব্র্যান্ডের একাধিক মডেল; যা দিয়ে দশমিক ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত ট্রিম করা যাবে।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন জিকিউসহ বেশ কিছু সাইটে সেরা কিছু ট্রিমারের তালিকা দিয়েছে। তার মধ্যে দেশে পাওয়া যায় এমন কিছু ট্রিমারের মডেল উল্লেখ করা হলো ফিলিপস বিটি ১২১৫, প্যানাসনিক ইআরবিজি ৩৭, ফিলিপস কিউটি ৪০০৫/১৫, ফিলিপস কিউটি ৪০০৬/১৫, প্যানাসনিক ইআর ২০৬।