চশমায় রৌদ্রছায়ার খেলা
রোদ সামলানোর অন্যতম অনুষঙ্গ রোদচশমা। স্টাইল তৈরি করার পাশাপাশি আরামও পাওয়া যায় রোদচশমায়।
বৈশাখ পেরোল। এখন চলছে জ্যৈষ্ঠের তীব্রতা। হুটহাট বৃষ্টিবাদলও হচ্ছে। কৃষ্ণচূড়ার বহু দল ঝরে পড়েছে এরই মধ্যে। জারুল ফুলের মায়াও ম্রিয়মাণ। তবে আজও গাছের ছায়ায় পড়ে থাকে কাঠগোলাপের দল। অবশ্য তেমন মায়াভরা ছায়ায় তো আর সারাটি দিন বসে থাকার উপায় নেই। জীবনের প্রয়োজনে রোদে বেরোতেই হয়। তাই এ সময়ের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ রোদচশমা।
দারুণ একটা রোদচশমা রোদ থেকেই কেবল চোখকে বাঁচায় না, মনটাকেও করে তোলে চনমনে। গোল, চৌকা, ডিম, বহুভুজ কিংবা হৃদয়—বাজারে সব আকৃতির রোদচশমাই আছে। যুগের সঙ্গে রোদচশমার ধরন-ধারণ বদলে যাচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের গোলাকার ছোট ছোট রোদচশমার জায়গা নিয়েছে বর্গাকৃতির বড় রোদচশমা। রঙেও এসেছে বৈচিত্র্য। একটি রোদচশমায় এক রঙের একাধিক শেডও এসেছে। রংটা হয়তো হালকা থেকে ধীরে ধীরে গাঢ় শেডের দিকে যাচ্ছে, কিংবা গাঢ় থেকে হালকা।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের নিউ কেয়ার ভিশন থেকে জানা গেল, বর্গাকৃতি ও ‘পাইলট আকার’ হিসেবে পরিচিত রোদচশমাগুলো ক্রেতারা বেশি নিচ্ছেন এখন। এর বাইরে গোল, ডিম্বাকৃতি কিংবা ক্যাট আই রোদচশমাও কিনছেন ক্রেতারা। কালোর নানা শেড আর বাদামি রঙের ফ্রেম পছন্দ করছেন বেশি। সেলুলাইট আর ধাতব ফ্রেমই বেশি। রোদচশমার ‘কাচ’ হতে পারে ফাইবার বা পোলারাইজড। হলদে আর হালকা বাদামি রঙের কাচের প্রাধান্য বেশি। নীল, বেগুনি বা সবুজ রঙের ‘মার্কারি’ রোদচশমাও নিয়ে থাকেন অনেকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। পাশেই আই পয়েন্ট নামের দোকানটিতেও দেখা গেল বাহারি রোদচশমার পসরা। জানা গেল, বড় আকারের রোদচশমাই জনপ্রিয় এখন। একই রোদচশমায় একাধিক রঙের শেড, এমনটাও বেছে নেন কেউ কেউ। কোনো দোকানের রোদচশমার কাচের দুই প্রান্তজুড়ে আবার বসানো আছে পাথর। কাচের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা নকশা করা রোদচশমাও বেছে নিতে পারেন। ব্র্যান্ডের নয়—এমন রোদচশমাগুলো ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। প্রয়োজনে ‘পাওয়ার’ বসিয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে।
যেমন মুখ, তেমন রোদচশমা
সেলেনা গোমেজের মতো গোলাকার মুখ হলে রোদচশমায় নানা কোণ থাকলে আপনাকে সুন্দর দেখাবে। বর্গাকার, আয়তাকার কিংবা খানিক অপ্রচলিত জ্যামিতিক নকশার রোদচশমা তাই বেছে নিতে পারেন অনায়াসেই। আবার মুখ যদি হয় একটু চৌকা, তাহলে গোলাকার রোদচশমা আপনার জন্য ভালো। ‘অ্যাভিয়েটরস’ বেছে নিতে পারেন, যদি সেটির অ্যাঙ্গেল বা কোণগুলো হয় গোলাকার। মুখ যদি হয় ডিম্বাকৃতির, তাহলে বাজারের অনেক আকৃতির রোদচশমাই আপনার মুখে মানিয়ে যাবে। কেবল তীক্ষ্ণ অ্যাঙ্গেল বা কোণের রোদচশমা এড়িয়ে চলুন।
লম্বাটে মুখের জন্য বেছে নিন এমন রোদচশমা, যার আড়াআড়ি দিকটা আলাদাভাবে লক্ষণীয় হয়। যদি হয় এমা ওয়াটসনের মতো হৃৎপিণ্ডাকৃতির মুখ, তাহলে ক্যাট আই ধাঁচের রোদচশমার কিছুটা ওপরের দিকে টানা নকশাটা আপনার জন্য মানানসই।
রোদচশমায় রিকশাচিত্র
ফুলের নকশা কিংবা ময়ূর তো রিকশাচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েই থাকে। রিকশাচিত্রে ভাষা অলংকরণ করার চলও আছে। চলচ্চিত্রের সংলাপ কিংবা প্রচলিত কথাও লেখা হয় রিকশাচিত্রের রোদচশমায়। মজার একটা ‘লুক’ আনতে এ ধরনের চশমা পছন্দ করেন গ্রাহকেরা। বলছিলেন বিস্কুট ফ্যাক্টরির প্রতিষ্ঠাতা বিস্কুট। কাঠ বা প্লাস্টিক-জাতীয় উপকরণ (যেগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয়) দিয়ে রোদচশমা তৈরি করে বিস্কুট ফ্যাক্টরি। গ্রাহকের চাহিদামতো রং ও নকশার রোদচশমা তো বটেই, নানা আকার-আকৃতির রোদচশমাও গড়ে দেয় তারা।
যাত্রার জেনারেল ম্যানেজার ইমতেনান মোহাম্মদ জানান, বর্গাকৃতির রোদচশমায় রিকশাচিত্রের নকশা এনেছেন তাঁরা। রিকশাচিত্র বলতেই মনে আসে বাহারি রঙের চিত্র। তবে তাঁদের কাছে রঙিন রোদচশমার বাইরেও সাদা বা কালো রঙের মধ্যে রিকশাচিত্রের নকশা করা রোদচশমা রয়েছে।
হওয়া চাই হালকা ও আরামপ্রদ
সারা দিন পরে থাকতে হলে সেই রোদচশমা হওয়া চাই হালকা ও আরামদায়ক। ভারী ফ্রেম নাকের ওপর বা কানের ওপর এঁটে থাকলে সেই রোদচশমা পরে স্বস্তি পাওয়া যায় না। গ্রাহকের আরামের দিক বিবেচনায় রেখে চাঁচের ফ্রেমের রোদচশমা এনেছে ফিনারি। কোনো কোনো রোদচশমার কানের দিকে হালকা স্টিলও ব্যবহার করা হয়েছে। চোখের সমস্যার কারণে যাঁরা চশমা (সাধারণভাবে যেগুলোকে পাওয়ার গ্লাস বলা হয়) ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্যও রয়েছে ফিনারির আলাদা ভাবনা। তাঁরা চাইলে কেবল ফ্রেমটি নিতে পারেন। প্রয়োজনমাফিক সেই ফ্রেমে জুড়ে নিতে পারেন পাওয়ারসম্পন্ন রোদ প্রতিরোধী ‘কাচ’।
বর্গাকার ফ্রেম ছাড়াও গোলাকার ফ্রেম করে তারা। শিশুদের জন্য ফুলের আকৃতির ফ্রেমও এনেছে তারা। গ্রাহকের চাহিদামাফিক তারাও ভাষার সংযোজন করে থাকে। কেউ লিখিয়ে নিয়েছেন ‘চলো ঘুরে আসি’। কেউ আবার একপাশে লিখিয়ে নিয়েছেন ‘উফ’, অন্যপাশে ‘খুব গরম’। সব মিলিয়ে দাঁড়াল ‘উফ খুব গরম’। ৪৫ পেরোনো গ্রাহকেরা আবার পুরো ফ্রেমের বদলে কেবল কানের কাছের অংশটুকুতে রিকশাচিত্রের নকশা করিয়ে নেন, জানালেন ফিনারির উদ্যোক্তা ড চিং চিং।
আগেও ছিল, এখনো আছে
চলতি ধারা যেমনই হোক, যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যায় কালো রোদচশমা। কালো রোদচশমার নকশাও হতে পারে বিচিত্র: বিড়ালের চোখের মতো (ক্যাট আই), আলট্রা-স্কয়ার, ওয়েফেরার, ‘জ্যাকি ও’ (গোল-চৌকা)। দুদিকের সংযোগরেখাটি হতে পারে সরল কিংবা বক্রাকার। বৈশ্বিক ফ্যাশনধারায় সিলুয়েট রোদচশমার প্রচলনও রয়ে গিয়েছে এই ২০২২ পর্যন্ত।
জেনে রাখা ভালো
সবার মুখের আকার-আকৃতি একই রকম নয়। তাই ফ্যাশনধারায় যা-ই থাকুক, প্রত্যেকের জন্য তা মানানসই না-ও হতে পারে। রোদচশমা কেনার সময়ই খেয়াল রাখুন, আপনার চেহারার সঙ্গে মানাচ্ছে কি না। সে ক্ষেত্রে চলতি ধারায় চলতে চাইলে একটু ছোট আকারের বর্গাকৃতির চশমা বেছে নেওয়া যেতে পারে।
স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে রোদচশমা বেছে নিন। চোখের সুরক্ষার দিকে খেয়াল রাখুন। একজনের রোদচশমা অন্য কেউ ব্যবহার না করাই ভালো।