আলিফের আধুনিক নাচের লড়াই

মোফাসসাল আল আলিফ

অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন মোফাসসাল আল আলিফ। আর এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন নাচ। এটা কী করে হলো? আলিফ বলেন, ‘নাচ শেখার সুপ্ত বাসনাটা পরিণতি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। এ সময়ই মূলত নাচের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছি।’ নৃত্যপরিচালক এম আর ওয়াসেক পরিচালিত নন্দনকলা কেন্দ্র থেকে আধুনিক নাচ, ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল, বাংলাদেশি লোকনৃত্য আয়ত্ত করেছেন আলিফ।

এর মধ্যেই মুম্বাইয়ে নাচ শেখার জন্য বৃত্তি পেয়ে যান আলিফ। তাঁর কাছে শুনতে চেয়েছিলাম মুম্বাইযাত্রার গল্প। ‘ভারতের মুম্বাইতে টেরেন্স লুইস কনটেম্পোরারি ড্যান্স কোম্পানিতে শেখার সুযোগ আসে। আমিও এ রকম একটা সুযোগই খুঁজছিলাম। দুই বছর মুম্বাইতে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। মূলত কনটেম্পোরারি, জ্যাজ, ব্যালে, বলিউড, হিপহপসহ নানা কিছুর ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পাশাপাশি ইয়োগার ওপরও জোর দিয়েছি। ড্যান্স মাস্টার টেরেন্স লুইস স্যারের এত কাছ থেকে শিখতে পারা আমার জন্য বড় অর্জন। ওদের পরিবেশই আসলে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। চারদিকে এত এত প্যাশনেট নাচিয়েদের সঙ্গে কাজ করতেও ভালো লাগে।’

আধুনিক নাচেই কেন বেশি আগ্রহ? আলিফের সোজাসাপটা উত্তর, ‘ভরতনাট্যম, কত্থকের একদম মৌলিক কিছু মুদ্রা শিখেছি। তবে, নাচের এই প্রকারগুলো আমাকে তেমন টানত না। বরং পশ্চিমা নাচের প্রতিই আমার আগ্রহ বেশি ছিল। সব সময়ই আমি প্রচলিত শাস্ত্রীয় নৃত্যের বাইরে গিয়ে কাজ করতে চেয়েছি। জ্যাজ, ব্যালে, কনটেম্পোরারি আমার ধ্যানজ্ঞান। গানের ক্ষেত্রে যদি দেখেন, সবাই আধুনিক গান বেশি পছন্দ করে। নাচের ক্ষেত্রেও এমন দিন শিগগিরই আসবে।’

নাচার পাশাপাশি কোরিওগ্রাফার হিসেবেও কাজ করছেন আলিফ। নাটক, টেলিফিল্মসহ বেশ কিছু ছায়াছবিতে কোরিওগ্রাফি করেছেন। ‘প্রথম কোরিওগ্রাফি করি ২০১৩ সালে৷ অনন্য ইমনের একটি টেলিফিল্মে। ভারত থেকে আসার পর আরও নানা জায়গায় কাজের সুযোগ হয়। চারটি সিনেমায়ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছি৷ তার মধ্যে আছে ময়না, অমানুষ। এখন হাতে বেশ কিছু কাজ আছে,’ বলেন আলিফ।

জাহাঙ্গীরনগরে পড়ার সময় ‘কালবৈশাখী’ নামের একটা নাচের সংগঠন করতেন আলিফ। এই সংগঠনের মাধ্যমে তাঁরা নিয়মিত নৃত্য পরিবেশন করেছেন। নৃত্যপ্রেমী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের নৃত্যধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন। নাচের উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন তাঁরা। যেখানে দর্শকের তুমুল করতালি তাঁকে আরও বেশি উৎসাহিত করেছে। তাই জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা আলিফ মাথায় রাখেন সব সময়।

নাচ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। এর মধ্যে মজার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি আছে আক্ষেপের স্মৃতিও। তবে আলিফ স্মরণ করলেন তাঁর জীবনের সুন্দর একটি মুহূর্তের কথা৷ ‘মুম্বাইয়ে থাকাকালীন স্যামসাংয়ের একটি বড় অনুষ্ঠানে সালমান খানের “সেলফি লে লে” গানে লিড নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। এটা সাধারণত টেরেন্স লুইস স্যারই করেন। তাঁর নিজের কাজে আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন। টেরেন্স লুইস স্যারের পোশাক গায়ে জড়িয়ে এত বড় মঞ্চে নাচতে পারা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। সেরা অভিজ্ঞতাও বলা যায়।’

‘অ্যালিফিয়া ড্যান্স অ্যাটেলিয়ের’ নামে একটি ড্যান্স স্কুল পরিচালনা করেন আলিফ। সেখানে আধুনিক নৃত্য শেখান। বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমার স্টাইলগুলো যেহেতু নতুন, তাই সবার সঙ্গে এগুলোর পরিচয় ঘটানো একটু কঠিন। ধীরে ধীরে কাজ করে যাচ্ছি৷ কিছু শর্তের বিনিময়ে নতুন শিক্ষার্থীদের এক বছরের ফ্রি স্কলারশিপ দিয়েছি। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বাড়ছে। আমি আশাবাদী। নিশ্চয়ই সবার ভাবনায় আধুনিক নৃত্য জায়গা পাবে। এ ছাড়া অ্যালিফিয়া স্কোয়াড হলো আমার নাচের প্রফেশনাল দল, যাদের সঙ্গে আমি নিয়মিত অনুশীলন করি। আমার স্বপ্ন—এই দল একসময় আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাচের মধ্য দিয়ে সবার মন জয় করবে।’