বাদল দিনে সতেজ চুল
>
কৈশোর পেরোনো কমবয়সী মেয়েদের চুলের যত্ন একটু বিশেষভাবেই নিতে হয়। আর এখন তো বৃষ্টি–বাদলের দিন। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। তাই চুল যেন থাকে ঝরঝরে, সতেজ।
শুরু হয়েছে বর্ষার দিন। এই সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে চুলে দেখা দেয় নানান সমস্যা। বিশেষ করে অল্প বয়সী মেয়েদের চুল নিয়ে পড়তে হয় অনেক ভোগান্তিতে। চুল ঝরে পড়া যেন কৈশোর বা কৈশোর পেরোনো এই বয়সে এক সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আগে মা হয়তো মেয়ের চুলের যত্ন নিতেন। কৈশোর পেরোনোর পর নিজের যত্ন নিজেকেই নিতে হয়। চুলকে সব সময় ঝরঝরে সতেজ রাখাই অবশ্য প্রধান কাজ।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গেও যে বদল হয় চুলের পরিচর্যার বিষয়, সেটাও অনেকের অজানা। তাই বৃষ্টি–বাদলের এই দিনে চুলের যত্নে একটু বাড়তি মনোযোগ দিলেই বছরজুড়েই চুল থাকবে সতেজ ও সুন্দর। করোনাকালে বেশির ভাগ সময়ই তো কাটছে বাড়িতে। তাই চুলের দিকে একটু বাড়তি মনোযোগ এখন দেওয়াই যায়।
কিশোরী বা কৈশোর পেরোনে মেয়েদের চুলের যত্ন যতটা সাধারণ ও স্বাভাবিক নিয়মে নেওয়া যায়, ততই ভালো বলে জানালেন মিউনিস ব্রাইডালের রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমীন। মাথার তালু এ সময়ে প্রচুর ঘামে, যে কারণে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে ঘন ঘন চুল আঁচড়ে নিতে হবে। চুল শুকাতে এড়িয়ে যেতে হবে ড্রায়ারের ব্যবহার। গোসল শেষে একটা মোটা তোয়ালে পেঁচিয়ে চুল শুকিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো পন্থা বলে জানালেন তানজিমা শারমীন।
চুল বাঁধা নিয়েও থাকে অনেকের অনীহা। অল্প বয়সে খোলা চুলেই যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। তবে সারা দিন খোলা চুলে থাকলেও রাতের বেলায় অন্তত চুল বেঁধে ঘুমানোটা জরুরি। কারণ, বালিশের ঘষাঘষিতে এই সময় চুলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। এদিকে অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত চুলে নারকেল তেলের মালিশ নেওয়া ভালো। এই তেল চুলের গোড়া থেকে ময়েশ্চারাইজার জোগাতে সাহায্য করে, এমনটাই বললেন তানজিমা শারমীন।
আগেই বলেছি, এই সময় আর্দ্রতার কারণে মাথার ত্বক বেশি ঘামে। যে কারণে ঘরের ভেতর সারা দিন থাকলেও চুল পড়ার সমস্যা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে কারও না কারও। ঘরে থাকা উপাদানেই চলতে পারে পরিচর্যা, যেমন জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের রূপ বিশেষজ্ঞ শাহীনা আফরিন। ১টি পেঁয়াজ ও ১টি পাকা কলার সঙ্গে ২ টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া ভালোভাবে ব্লেন্ড করে মাথার তালুতে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। খেয়াল রাখবেন, প্যাকটি লাগানোর আগে যেন মাথার ত্বক শুকনো থাকে। পুরো বর্ষাজুড়েই সপ্তাহে ১ দিন এই প্যাক লাগালে বন্ধ হবে চুল পড়া।
বাসায় বানানো শ্যাম্পুও চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। ৬টি রিঠা দেড় কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। চুল পরিষ্কার করতে এই পানির জুড়ি মেলা ভার। কন্ডিশনার হিসেবে চায়ের পাতা বেশ কার্যকর। প্রথমই পরিমাণমতো চা–পাতা নিয়ে পানিতে জ্বাল দিতে হবে। হয়ে এলে চা–পাতা তুলে ফেলে দিয়ে আবার নতুন পানি নিতে হবে। জ্বাল হয়ে এলে এর সঙ্গে চুলের ঘনত্ব বুঝে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল চা–পাতার কন্ডিশনার।
শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে এই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই কন্ডিশনার ব্যবহারের পর আবার ভালো করে পানিতে চুল ধুয়ে নিতে ভুলবেন না যেন। এই সময় চুলের বাড়তি উজ্জ্বলতা পেতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম দুধে একটি খেজুর ও আধা চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে দেখুন। কয়েক দিন গেলেই টের পাবেন চুলের পরিবর্তনটুকু।
অল্প বয়সে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এড়িয়ে যান অনেকেই। এখন করোনা প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে ঘরের বাইরে গিয়ে খাওয়াটাও ঠিক হবে না। তাই ঘরেই খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার। পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান বললেন, ‘এই বয়সে চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। নিয়মিত দুধ ও ডিম খেতে হবে।’ জানালেন, চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যেকোনো বাদাম বেশ কাজে দেয়।
শরীরচর্চারমতো বিষয়ও চুল পড়া রোধে সাহায্য করে বলে জানালে এভারগ্রিন ইয়োগা সেন্টারের প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তুনু। সকালে খালি পেটে এবং রাতের খাবার খাওয়ার আগে যেকোনো জায়গায় বসে দুই হাতের আঙুলের নখে ওপর–নিচ করে ঘষতে পারেন। এই আসন এখন থেকেই নিয়মিত চর্চা করলে অনেক বয়স হলেও চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি হলাসন, সর্বাঙ্গাসন চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।