হাঁটতে পারেন ট্রেডমিলেই
সুস্থ থাকতে শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের ব্যাপারে সচেতনতার বিকল্প নেই। যাঁরা সময় কিংবা ইচ্ছার অভাবে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি এ বিষয়ে কিংবা শুধু ব্যায়ামাগারে (জিম) গিয়েই শরীরচর্চা করেছেন, তাঁরা এখন ঘরেই করে নিতে পারেন ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে ভালো একটা সমাধান হলো ট্রেডমিল। অনেক বাড়িতে এ যন্ত্র হয়তো রয়েছে, কিন্তু ব্যবহার তেমন হয় না; সেসব বাড়িতে ট্রেডমিল (হাঁটার যন্ত্র) ব্যবহারের সময় এখনই।
ট্রেডমিল ব্যবহার বেশ সহজ হলেও হাঁটার সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমেই পাওয়া যাবে সুফল। পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ও ডায়েটিশিয়ান শওকত আরা সাঈদা বললেন, যাঁরা প্রথমবার হাঁটবেন, তাঁদের কিছু নিয়ম জেনে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া যাঁদের দীর্ঘদিন ট্রেডমিল ব্যবহার বন্ধ ছিল, তাঁদেরও কিছু স্বাস্থ্যবিধি এবং নিয়ম মেনে ও জেনেই হাঁটা শুরু করতে হবে। আবার যাঁরা অসুস্থ এবং বয়স কম বা বেশি, তাঁদের জন্য ভুল পদ্ধতি গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
হাঁটার আগে যা দরকার
ট্রেডমিলে ওঠার আগে অবশ্যই প্রয়োজন হাঁটার উপযোগী নরম জুতা। যেটি পরে অনেকক্ষণ হাঁটলেও পায়ে ব্যথা হবে না। পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। খুব আঁটসাঁট পোশাক হাঁটার সময়ে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা করে। মেয়েদের বেলায় ওড়নাসহ সালোয়ার–কামিজজাতীয় পোশাক পরে যন্ত্রে না ওঠাই ভালো। ট্রেডমিলে ওঠার আগে কিছু খালি হাতে ব্যায়াম করে শরীরের জড়তা কাটিয়ে নিতে হবে।
যাঁরা প্রথম হাঁটছেন
যাঁরা ট্রেডমিলে প্রথম হাঁটার চিন্তা করছেন, তাঁদের উচিত একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা। তবে যদি সেটি সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই যন্ত্রের নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিতে হবে। যন্ত্রের কোথায় কী আছে তা–ও জানতে হবে সঠিকভাবে, যার মধ্যে পড়ে যন্ত্র চালু, বন্ধ, গতি বাড়ানো-কমানো, হৃৎকম্পন দেখা স্থান, ক্যালরি পোড়ার পরিমাণ ইত্যাদি।
কতক্ষণ হাঁটবেন, কত দিন হাঁটবেন
যাঁরা প্রথম হাঁটছেন বা অনেক দিন বিরতির পর শুরু করছেন, তাঁরা ২০ মিনিট সময় দিয়ে শুরু করতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত হাঁটা যাবে। দুই সপ্তাহ এ নিয়মে হাঁটার পর ৩০ মিনিট করে এবং এক মাস পর ৬০ মিনিট করা যাবে।
হাঁটার গতি
ট্রেডমিলে উঠেই খুব দ্রুতগতিতে হাঁটা যাবে না। প্রথমে ধীরে কিছুক্ষণ হেঁটে গতি বাড়াতে হবে। ট্রেডমিলের গতি ৪ দিয়ে শুরু করে ৫.৫ করা যাবে। আবার হাঁটার মধ্যেই হঠাৎ থামা যাবে না। হাঁটার মাঝেমধ্যে হালকা পানি পান করতে হবে।
শারীরিক অসুস্থতা থাকলে
মাংসপেশিতে ব্যথা হলে বা রগে টান পড়লে কিছুদিন হাঁটা বন্ধ রাখতে হবে। আবার রক্তচাপ যখন অনেক বেশি থাকবে, তখনো হাঁটা যাবে না। সে ক্ষেত্রে রক্তচাপ মেপে দেখে নেওয়া উচিত। যাঁদের হৃদ্রোগ আছে, তাঁরা হৃৎকম্পন দেখে ১০ মিনিট হাঁটতে পারবেন। হৃৎকম্পন ৮০ থেকে ১১৫–এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক ধরা হয়। ১১৫ থেকে বেশি হলে অবশ্যই ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে হাঁটা বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে হবে। এ ছাড়া কোমর বা হাঁটুর ব্যথা থাকলে ট্রেডমিলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটতে পারবেন।
বয়স অনুসারে
সাধারণত ১৫ বছর থেকে ট্রেডমিলে হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। সপ্তাহে তিন দিন হাঁটতে পারবেন তাঁরা। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা দৌড়াতে পারবেন সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট। সপ্তাহে সাত দিনে ভাগ করেও অল্প অল্প করে করা যাবে। ৪০ বছরের বেশি যাঁরা আছেন, তাঁদের একটু জোর দিয়ে হাঁটতে হবে, যেহেতু এ সময়ে মেটাবলিজম কমে যায়। আর ৫০–এর বেশি হলে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট হাঁটতে পারবেন সপ্তাহে পাঁচ দিন।
কত সময়ে কত ক্যালরি পোড়ে
৩০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটলে ১০০ থেকে ৩০০ ক্যালরি পোড়ে। হাত–পা নাড়িয়ে হাঁটলে ক্যালরি বেশি পোড়ে। আবার ট্রেডমিলে ৫ গতিতে এক ঘণ্টা হাঁটলে ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি পোড়ে। এভাবে ১০ দিন করলে ১ পাউন্ড বা আধা কেজি কমানো সম্ভব।