রূপে ফলচর্চা
>গরমে তাতানো আবহাওয়া। কিংবা রোদ ঝলসানো দুপুর। সূর্যের চোখ রাঙানো—যেভাবেই বলা হোক না কেন, এখন গরম। আম-জাম-কাঁঠালের সময় চলছে। বছরের বহুপ্রতীক্ষিত ফলাহারের সময়। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এ সময়, এমন ফল দিয়ে রূপচর্চাও হয়ে যাবে। স্বাদ ও সৌন্দর্য দুই ক্ষেত্রেই কাজ দেখাতে এগুলো বেশ ওস্তাদ। ফল খেতে খেতে রূপচর্চার কাজেও কীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শারমীন কচি।
আম
আমে রয়েছে ভিটামিন-এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রাকৃতিকভাবে ত্বক সজীব করতে পারে এ ফল। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নরম, কোমল ও মৃসণ করে তুলতেও সাহায্য করে।
তরমুজ
ত্বকে সজীব ভাব আনতে তরমুজের জুড়ি নেই। তরমুজ ব্লেন্ড করে কয়েক ফোঁটা মধু ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। বানানো এই স্ক্রাব ত্বক ও শরীর থেকে সারা দিনের ধুলাবালি, ময়লা বের করবে। বাইরে থেকে ফিরে রোদে পোড়া অংশে তরমুজ ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে ধুয়ে নিলে পোড়াভাব দূর হবে। এ ছাড়া তরমুজের রস বরফ করে ডিপে রেখে দিতে পারেন। বাসায় ফিরে মুখে ঘষে নিলে, ত্বক সজীবতা চলে আসবে।
আনারস
আনারস ত্বকের মৃত কোষ, ধুলাবালি ও তেল সহজেই দূর করে দেয়। আনারস, লেবু ও কমলার রস একসঙ্গে মিশিয়ে তার সঙ্গে অল্প ময়দা মিশিয়ে মুখে গলায় লাগালে ত্বক ভালো পরিষ্কার হয়। সে ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নয়তো ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে।
বাঙ্গি
বাঙ্গি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে দারুণ কাজ করে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর সঙ্গে টক দই মিশিয়ে পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ত্বক পরিষ্কার ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমাতে বাঙ্গির শাঁস, মটর ডাল বাটা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে ত্বক সজীব থাকবে।
পেঁপে
ত্বক কোমল আর উজ্জ্বল করতে পেঁপের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ ও সিকি কাপ কর্নফ্লেক্স একটি পাত্রে চটকে মাস্ক তৈরি করে নিন। হাত, মুখ গলায় পাঁচ মিনিট মালিশ করলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল চামচ কমলার রস, ৪ টেবিল চামচ গাজরের রস ও ১ চা-চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়েও মাস্ক তৈরি করা যায়।
আপেল
মুখের চামড়ায় ভাঁজ পড়া ও ছোপ ছোপ দাগ পড়ার সমস্যা সমাধানে আপেল খুব কার্যকরী একটি ফল। শুষ্ক ত্বকের জন্য অর্ধেকটি আপেল বেটে তাতে আধা চামচ লেবুর রস, সামান্য শসার রস আর একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। ধুয়ে ফেলুন
ডাব
চুলের জন্য নারকেল আর ত্বকের জন্য কচি ডাব উপকারী। প্রতিদিন দুটো ডাবের পানি পান করলে ত্বকের নমনীয়তা বাড়ে। সেই সঙ্গে কচি ডাবের পানিতে মুখের দাগও দূর হয়ে যায়। প্রতিদিন ডাবের পানিতে মুখ ধুলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
কলা
কলা এমন একটি ফল, যা আপনি সারা বছরই পাবেন। পাকা কলা, টক দই, জলপাই তেল, মধু একত্রে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে নিন। চুল ঝরঝরে মসৃণ হবে। মুখের কালো দাগ দূর করতে পাকা কলা ব্যবহার করতে পারেন।
ড্রাগন ফল
অর্ধেকটা ড্রাগন ফল থেকে শাঁস বের করে চটকে মিহি করে নিন। এক টেবিল চামচ টক দই মেশান। এই প্যাক মুখে আর গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। হালকা গরম জলে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার করে মাস দুই করলে ত্বকে টানটান ভাব চলে আসতে শুরু করবে।
ব্রণের সমস্যা দূর করতে একটা ড্রাগন ফলের চার ভাগের এক ভাগ নিয়ে শাঁস বের করে ভালোভাবে চটকে পেস্ট করে নিতে হবে। পরিষ্কার তুলায় করে পরিমাণমতো পেস্ট নিয়ে ব্রণের ওপরে লাগান। একাধিক ব্রণ থাকলে আলাদা আলাদা তুলা ব্যবহার করবেন, যাতে ছত্রাকের সংক্রমণ না হয়। ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছবেন না, জলটা প্রাকৃতিক হাওয়ায় শুকিয়ে যেতে দিন।
রোদের পোড়া ভাব দূর করতে চার ভাগের এক ভাগ ড্রাগন ফলের শাঁস বের করে চটকে নিন। ভিটামিন–ই ক্যাপসুল কেটে ভেতরের তরলটা মিশিয়ে দিন। মুখে লাগানোর পর আধা ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। মুখ মুছবেন না, খোলা হাওয়ায় শুকিয়ে নিন।