‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর না’! বজরায় কবিগুরুকে আবিষ্কার করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগল অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের। শিল্পীকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো? কিন্তু তিনি এখানে কেন?’ পটশিল্পী শম্ভু আচার্য্য ব্যাখ্যা করেন, ‘পদ্মায় বজরায় কবিগুরু লিখছেন।’ ফেরদৌসী মজুমদারের মতো আরও বেশ কয়েকজন দর্শক ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন অদ্ভুত সব ছবি—সেসব শুধু পটে আঁকা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে এসেছিলেন ঢাকার একঝাঁক শিল্পপ্রেমী। শম্ভু আচার্য্যের তৃতীয় একক পটচিত্র প্রদর্শনী ‘পটকাব্য পরম্পরা’ উদ্বোধন করেছেন তাঁরা। আলোচনা করেছেন পটশিল্পকে এগিয়ে নেওয়া শিল্পী-পরিবারের অবদান নিয়ে। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, বিশেষ অতিথি চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। বক্তব্য দেন শিল্পী শম্ভু আচার্য্য, প্রদর্শনীর আয়োজক এক্সপ্রেশানসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামেন্দু মজুমদার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রমা চট্টোপাধ্যায়।
পটচিত্র সাড়ে চার শ বছরের পুরোনো লোকশিল্প। প্রচলিত লোকগল্পের চিত্ররূপ। যেমন ‘গাজী কালু চম্পাবতী’র কাহিনি। শম্ভুরা বংশপরম্পরায় পটচিত্র আঁকেন। তিনি নবম উত্তরপুরুষ। তাঁর ছেলে, মেয়ে, ছোট্ট নাতিও আঁকে। আঁকার জন্য নিজে হাতে রং তৈরি করেন এই শিল্পী। সাত দিনের মধ্যে ব্যবহার না করলে রং নষ্ট হয়ে যায়। শিল্পী জানালেন, তবে আঁকা ছবি ৫০ বছরেও মলিন হয় না। গতকালই নিজের জ্যাঠার একটা ছবি এঁকেছেন তিনি। ভদ্রলোক শুধু পটচিত্রীই নন, জ্যোতিষীও ছিলেন। প্রায় ২৩ বছর আগে শিল্পকলা একাডেমিতে নিজের আঁকা অল্প কিছু ছবি নিয়ে এসেছিলেন শম্ভু। এককালীন খরচসহ রামেন্দু মজুমদার তাঁকে বেশি করে ছবি আঁকার পরামর্শ দেন। সেসব নিয়ে বড় প্রদর্শনী করা হয়—যে স্বপ্ন কখনোই দেখেননি শিল্পী শম্ভু আচার্য্য। পটচিত্রের জন্য এখন সারা বিশ্ব তাঁকে চেনে। ১৭৫৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কে ধরে ‘মহাপুরুষের অন্তর্ধান: সহি শহীদ মুজিবনামা’ নামে একটি অসাধারণ পটচিত্রের জন্য তিনি খ্যাতিও পেয়েছেন।
এক্সপ্রেশানসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এ প্রদর্শনী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফেরদৌসী মজুমদার, মোকাররম উদ্দিন আহমেদ, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, শিল্পসংগ্রাহক আবুল হাসনাত, গবেষক মফিদুল হক, কবি তারিক সুজাত প্রমুখ।
প্রদর্শনীর জন্য ৪১টি ছবি প্রায় তিন বছর ধরে এঁকেছেন শিল্পী। ১৯ মে পর্যন্ত দেখে আসা যাবে পটচিত্রগুলো। গ্যালারি খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। শেষ দিনে থাকবে গাজীর গানের আসর।