চাকরি পেতে টোয়েইক
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যোগাযোগের মূল ভাষা হচ্ছে ইংরেজি। বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারে তাই ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অপরিহার্য। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের জন্য আমাদের দেশে প্রচলিত টোয়েফল বা আইইএলটিএসের নাম অনেকেরই জানা। এসব ভাষা দক্ষতা পরীক্ষায় সাধারণত উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষা হিসেবে একটি পরীক্ষা আছে, আমাদের অনেকের কাছেই যা অজানা। যার নাম টোয়েইক (টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন)। টোয়েফল এবং জিআরই যে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী নিয়ে থাকে তার নাম ইটিএস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত একই প্রতিষ্ঠান চাকরির ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের এই পরীক্ষা চালু করে ১৯৭৮ সাল থেকে। বিশ্বব্যাপী ১৬০টি দেশে এই পরীক্ষা চলে এলেও আমাদের দেশে গত বছরের আগস্ট মাস থেকে ইটিএস এই পরীক্ষা চালু করে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডিএনএস সফটওয়্যার লিমিটেডের মাধ্যমে।
কেন টোয়েইক?
বিশ্বের ১৬০টি দেশের ১৪ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য এই সনদের দরকার হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ লাখ লোক প্রতিবছর এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বায়নের এই যুগে একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন, বিক্রয়, প্রশাসন, টেকনিক্যাল, অ্যাকাউন্টস—যেই বিভাগেই কাজ করতে যান না কেন, চাকরি করতে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও কম্পিউটার এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা সবচেয়ে জরুরি। মাতৃভাষা ইংরেজি নয় এমন সব দেশ, যেমন জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি—এমনকি ব্রাজিলের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো টোয়েইকের স্কোরের ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করছে প্রতিবছর। জাপান, তাইওয়ান ও ফ্রান্সের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স হিসেবে টোয়েইক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সব বিভাগের ছাত্রছাত্রীর জন্য।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সব দেশ থেকে গাড়িচালক হিসেবে কর্মী নিয়োগে টোয়েইক বাধ্যতামূলক করেছে। শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যের জনশক্তি আমদানিকারী সব দেশ দুবাইকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে।
পরীক্ষার নিয়মকানুন ও ফি
অন্যান্য ইংরেজির দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষাগুলোর তুলনায় টোয়েইক একটু ভিন্ন। তিনটি ভিন্ন শাখায় সব রকমের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আসা পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন—টোয়েইক ব্রিজ, টোয়েইক লিসেনিং অ্যান্ড রিডিং এবং টোয়েইক স্পিকিং অ্যান্ড রাইটিং। টোয়েইক ব্রিজ পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে তৃতীয় শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের জন্য; যেমন গাড়িচালক, নিরাপত্তারক্ষী ইত্যাদি। টোয়েইক লিসেনিং অ্যান্ড রিডিং হচ্ছে তাঁদের জন্য, যাঁদের কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি প্রয়োজনীয়; যেমন প্রোগ্রামার, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ইত্যাদি। টোয়েইক স্পিকিং অ্যান্ড রাইটিংয়ের জন্য চাকরিতে ইংরেজির দক্ষতা আবশ্যক; যেমন কল সেন্টারের নির্বাহী, হোটেলের অভ্যর্থনাকারী, সেলস এবং মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।
আমাদের দেশ থেকে ইংরেজিতে দক্ষ শ্রমশক্তি দুবাইয়ে পাঠাতে ট্রেনিং এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ সবকিছুর ব্যবস্থা করে থাকে ডিএনএস। টোয়েইক ব্রিজের ফি ৬ হাজার টাকা, টোয়েইক লিসেনিং অ্যান্ড রিডিংয়ের জন্য ৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং স্পিকিং অ্যান্ড রাইটিংয়ের জন্য ১১ হাজার টাকা ফি। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে ডিএনএস প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসা অংশগ্রহণকারীদের জন্য আছে ছয় দিনের প্রশিক্ষণ, যার ফি ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া আছে ১৬ দিনের একটি প্রশিক্ষণ, যার ফি ১২ হাজার টাকা এবং ইংরেজিতে যাঁরা দুর্বল, তাঁদের জন্য ২৪ দিনের প্রশিক্ষণ আছে, ফি ১৮ হাজার টাকা।
টোয়েইক ব্রিজ ৬০ মিনিটের পরীক্ষা, যা নেওয়া হয়ে থাকে ১৮০ স্কোরের স্কেলে। লিসেনিং অ্যান্ড রিডিং পরীক্ষা হয় ১২০ মিনিট, সর্বোচ্চ স্কোর ৯৯০। স্পিকিং অ্যান্ড রাইটিং ৮০ মিনিটের ও ৪০০ স্কোরের পরীক্ষা।
ডিএনএস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাফেল কবির বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যম এবং উচ্চ ব্যবস্থাপনার কাজ পরিচালনার জন্য ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিবছর। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ইংরেজি দক্ষতা। টোয়েইকের মাধ্যমে আমরা বিদেশে দেশি কর্মী পাঠানোর পাশাপাশি দেশের টাকা দেশে রাখতে পারি।’
টোয়েইকের ব্যাপারে আরও জানতে দেখতে পারেন এই ওয়েবসাইট: ets.org/toeic অথবা dsl.com.bd/toeic। বাংলাদেশে টোয়েইকের ফেসবুক পেজ: facebook.com/toeicbd।