লকডাউনে পেট্রাপোল সীমান্তে কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা
লকডাউনে ২৩ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলসীমান্তপথে বন্ধ থাকা আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই লক্ষ্যে ৩০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তপথে শুরু হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। নির্দেশ ছিল, দুই দেশের পণ্যবাহী ট্রাক নোম্যাস ল্যান্ডে গিয়ে একে অন্যের ট্রাকে মাল খালাস করে ফিরবে দেশে।
তবে ওই দিন বাণিজ্য শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি ওঠে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে। তাদের অভিযোগ, এই লকডাউনের মধ্যে কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু করা যাবে না। সীমান্তের একদল শ্রমিক ও আমদানি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত একদল ব্যবসায়ী অবিলম্বে এটা বন্ধের দাবি তোলেন।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা করোনা আক্রান্তের লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত থাকায় স্থলসীমান্ত পথে আমদানি–রপ্তাণি বাণিজ্য শুরু করার বিপক্ষে অবস্থান নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধের দাবি তোলে।
রাজ্য সরকারের ভয়ের কারণ এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহনের প্রধান বাহন ট্রাক বা লরি । পণ্যবোঝাই এসব ট্রাক আসে সাধারণত ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পণ্যও আসে এ পথে। সেখানকার ট্রাকের চালক ও খালাসিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও আসে। দুই দেশের ট্রাকচালক, খালাসি ও শ্রমিকেরা যে করোনা ভাইরাস বহন করছে না, এর নিশ্চয়তা কী? ফলে বন্ধ হয়ে যায় বাণিজ্য।
এর মধ্যে গত ৩ মে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তপথের জয়ন্তীপুরে স্থানীয় লোকজন সড়ক অবরোধ করে দাবি তোলেন, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এই সীমান্ত বাণিজ্য। একপর্যায়ে তাঁরা জয়ন্তীপুরের অবরোধ স্থানে আটকে দেন বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে কর্মরত কর্মকর্তাদের গাড়ি। ৪০ মিনিট ধরে চলে এই অবরোধ। অবশেষে কর্তৃপক্ষ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেয় । সেই থেকে বন্ধ ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্য। যদিও এই সীমান্ত বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
বন্ধ থাকায় এই সীমান্ত পথের ভারতীয় অংশে আড়াই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়েছে।
দীর্ঘ ৯ সপ্তাহ ধরে সীমান্তে বানিজ্য বন্ধ থাকার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার আবার এটি খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ৩০ মে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মেন্টর গোপাল শেঠ কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি লিখে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত পথে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু করার আবেদন জানান। চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী, ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট, শ্রমিক, স্থানীয় পঞ্চায়েত, মহকুমা প্রশাসন সীমান্ত বাণিজ্য শুরু করতে সায় দিয়েছে। রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকেও দেওয়া হয়েছে সবুজ সংকেত।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে কার্যক্রম শুরু হবে।সীমান্ত এলাকাও আন্তর্জাতিকমানের স্বাস্থ্যসন্মতভাবে তৈরি করা হয়েছে।