ভারতে নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ
নাগরিকত্বের জন্য যেকোনো ধরনের ধর্মীয় পরীক্ষা একটি জাতির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মূল তাৎপর্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
টানা ৭ ঘণ্টা বিতর্ক শেষে গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১২টার পর লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়। বিলের পক্ষে ৩১১ ভোট পড়ে, বিপক্ষে ৮০। লোকসভায় বিল পাসের জন্য দেওয়া ভাষণে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা যাঁরা ধর্ম, প্রাণ ও সম্মান রক্ষার তাগিদে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
মার্কিন প্যানেল বলেছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের ভিত্তির মূলে আছে ধর্মীয় বহুত্ববাদ। উভয় দেশ যেসব মৌলিক মূল্যবোধ ভাগাভাগি করে, তার মধ্যে এই বিষয়টি অন্যতম। নাগরিকত্বের জন্য যেকোনো ধরনের ধর্মীয় পরীক্ষা এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মূল তাৎপর্যকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
বিলটি এবার রাজ্যসভায় যাবে। ২৪৫ সদস্যের রাজ্যসভায় বিলটি পাসের জন্য ১২৩ ভোট লাগবে।
লোকসভায় পাস হওয়া বিলটিকে ‘ভুল পথের বিপজ্জনক মোড়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাস হলে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছে কমিশন।
বিল অনুযায়ী, নাগরিকত্ব তাঁদেরই দেওয়া হবে যাঁরা এই তিন দেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন। আগের আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে থাকলে কেউ নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হতেন। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অধিকাংশকেই এই বিলের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যের যে যে অংশ রয়েছে এবং ‘ইনার লাইন পারমিট’ (আইএলপি) যে রাজ্যগুলোয় চালু রয়েছে, সেখানে এই আইন বলবৎ হবে না। আইএলপির আওতায় মণিপুর ছিল না। তাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে অমিত শাহ জানান।
নাগরিকত্ব দানের জন্য এই তিন দেশকে বেছে নেওয়ার কারণ জানিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিন দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সরকার এই তিন দেশের লাখো শরণার্থীকে নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই এই সংশোধন সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে না। তাই এই উদ্যোগ অসাংবিধানিক নয়।