বিজেপির ঔদ্ধত্যে মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে: মমতা
ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আসাম রাজ্যের মানুষ যে মেনে নিতে পারেনি, তা বুঝতে মাস ছয়েক সময় লেগেছে বিজেপির। ৭০ বছর ধরে যে মানুষটি ভারতের মাটিতে বাস করে এসেছেন, তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ছোটাছুটি করতে হচ্ছে, এ যেন একদমই মেনে নেওয়ার নয়।
বেশির ভাগ মানুষই জীবন যাপন করছেন তীব্র এক আতঙ্কে। তাই আসামের পর পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে, এমনটা মেনে নিতে পারছেন না মানুষ।
আর মানুষের মনোভাব বুঝেই এনআরসির বিরুদ্ধে খড়্গ ধরেছেন মমতা। তাঁর সাফ কথা, এই রাজ্যে তিনি এনআরসি কার্যকর হতে দেবেন না। তারই প্রতিফলন যেন দেখা গেল গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষিত তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলে। তিনটি আসনই চলে গেছে তৃণমূলের ঝুড়িতে।
উপনির্বাচনে এই জয়ের পর মমতা বলেন, ‘এনআরসি করে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে এমনই হয়। বিজেপির ঔদ্ধত্যের জন্য মানুষ তাদের এবারের উপনির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছে। লোকসভায় ১৮ আসন জেতায় তাদের ঔদ্ধত্য এবং অহংকার বেড়েছিল। মানুষ তা মেনে নেয়নি। স্বাধীনতার ৭০ বছর পর যদি কেউ বলেন, নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে, তা কি মেনে নিতে পারে মানুষ? তারই জবাব দিয়েছে উপনির্বাচনে। ভবিষ্যতেও এই জবাব দেবে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে মানুষ।’
নির্বাচনের আগে গোটা ভারতে এনআরসি হবে বলে হুংকার দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুধু তা-ই নয়, হিন্দু শরণার্থী বা উদ্বাস্তুরা এনআরসির মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবে, কিন্তু সংখ্যালঘু মুসলিমরা এনআরসিতে তাঁদের এই রাজ্যে বসবাস করার প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে না পারলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এই সব ঘোষণা মেনে নিতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। রাজ্যের তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন তাঁরা।
ছয় মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিপুল জয় পায় বিজেপি। রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ছিনিয়ে আনে ১৮টি। অথচ ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দলটি পেয়েছিল মাত্র ২টি আসন। এবার ২ থেকে ১৮। এই জয়ে বিজেপি খুবই আপ্লুত হয়ে ওঠে। ঘোষণা দেয়, এনআরসি চালু করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে সংখ্যালঘু মুসলিমদের, যাঁরা অনুপ্রবেশ করেছেন। তবে মানুষ এটা মেনে নেয়নি। তাঁদের প্রশ্ন, সব মানুষের তো ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড রয়েছে, তবে কেন এনআরসি? তাই এই এনআরসিকে অস্ত্র করে মাঠে নেমে পড়েন মমতা। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টও যোগ দেয়। ফলে এনআরসি প্রশ্নে একঘরে হয়ে যায় বিজেপি।